২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারীর নিজ উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আলোচনায় মির্জা কাদের ও বাদল

com-AL-copy.jpg
বিশেষ প্রতিনিধি ।।
গত দুই বছর দলীয় রাজনৈতিক অভ্যন্তরীন সংঘাতের পর অতি সম্প্রতি সমঝোতায় পৌছেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় ও জেলা সম্মেলনের বাধ্যবাধকতায় দ্রুত উপজেলা সম্মেলনের প্রস্তুুতি। গত এক সাপ্তাহে প্রতিটি ইউনিয়নে ও ওয়ার্ডে দৈনিক ৩/৪টা করে মতবিনিময় সভা করে পারস্পরিক দূরত্ব গুছিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার নজিরবিহীন চেষ্টা প্রশংশার দাবী রাখে।
এটা সম্ভব হয়েছে মুলত কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী ঘরণার রাজনৈতিক অভিভাবক মন্ত্রীর অনুজ পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নমনীয়তার কারণে। মুলত কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতির গ্রহনযোগ্য নেতাদের মধ্যে এই দুজনই ফ্যাক্টর।
তবে কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতির অঙ্গনের ২৪/৭ ঘন্টার রাজনীতিবিদ আবদুল কাদের মির্জা শুধূ আওয়ামী ঘরনা নয় কোম্পানীগঞ্জের টোটাল রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর। ৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর থেকে নেতৃত্বহীন আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে নিজের যান বাজি রেখেছেন। আজকে কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র অভিভাবকই আবদুল কাদের মির্জা। তার গড়ার বাহিরে কোন নেতা নেই কোম্পানীগঞ্জে। তার আশির্বাদ যে কাউকে নেতার কাতারে নিয়ে গেছে। আবার নজর না দিলে যত মেধাবী হোক না কেন হারিয়ে যেতে হয়েছে।
ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে আবদুল কাদের মির্জার সকল কর্মকান্ড তরকারীতে লবনের মতো, লবন না দিলে যেমন অখাদ্য, বেশি দিলেও অখাদ্য। ঠিক হলেই সব ঠিক। কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিতে সব ভালোর দাবিদার যেমন মির্জা তেমনি সব মন্দের দাবিদারও একমাত্র মির্জা মিয়াই। তেমনটাই হয়েছে গত দুই বছর কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিতে। পারিবারিক বিরোধ রাজনৈতকি মাঠকে উত্তপ্ত করেছে, দলকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। তবে শেষমেষ সব ভালো যার সব ভালো তার।
কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। নেতা শীর্ষের মানঅভিমান ভেঙ্গেছে। মিলে মিশে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে সবাই। ফলে আবারো জমে উঠেছে কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী ঘরনার রাজনীতি।আগামী ২ ডিসেম্বরের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতেছে কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ দলের সকল অঙ্গনংগঠন।
দলের মাঠ কর্মীরা চায় ক্ষতিগ্রস্ত দলকে আবারো চাঙ্গা করতে হলে অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় নেতৃত্ব আবদুল কাদের মির্জাকে সভাপতি করে তার সাথে উদিয়মান নেতৃত্ব সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে সেক্রেটারী হিসেবে। মাঠের কর্মীরা মনে করে এইভাবে দলকে সাজাতে পারলে দল অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। অন্যথায় নেতৃত্বের বিরোধ মিটবেনা।
তবে শেষ পর্যন্ত যদি আবদুল কাদের মির্জা সভাপতির দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক হন সেক্ষেত্রে মাঠে কথা আছে সবদিক বিবেচনা করে সভাপতি পদে নিয়ে আসতে পারেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান দলের দুঃসময়ের কান্ডারী মুজিববাদী শাহাবুদ্দিন খ্যাত মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনকে।
মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন সব সময়ই মুখে না না বললেও ঠেলে দিলে আবার ফেরত দিতে পারেন না। যদি মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন-এর না এবার সত্যিই না হয় তবে সে ক্ষেত্রে সাবেক সেক্রেটারি সিরাজপুরের সাবেক চেয়ারম্যান নূর নবী চৌধুরী, সাবেক সেক্রেটারি ও সহসভাপতি ইসকান্দার হায়দর চৌধুরী বাবুল, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছের ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল-এর মধ্যে যে কেউ একজন সভাপতি হতে পারেন।
অন্যদিকে সেক্রেটারী পদের অন্যতম একক প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, তবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মোহাম্মদ ইউনুছ এবং সাবেক ছাত্রনেতা মন্ত্রীর ভাগিনা মাহবুবুর রশিদ মঞ্জুও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মুখে আলোচনায় আছেন।
শেষমেয় সেক্রেটারী মিজানুর রহমান বাদল হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ উপজেলা কমিটিতে নেতাদের জায়গা করে দিতে বিপাকে পড়ে যাবেন। কারন বাদলের বয়সের কারনে ২য় সারির নেতাদের জায়গা হবে বেশি। আগের যুগ্ম সম্পাদকরা কেউই আর সেখানে থাকতে চাইবেন না। ফলে সহসভাপতি পদের দাবিদার হয়ে যাবেন অনেক বেশি। সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রে সহসভাপতি পদ আছে সাত জন।
মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বা আবদুল কাদের মির্জা সভাপতি আর মিজানুর রহমান বাদল সেক্রেটারি হলে সহসভাপতি আসতে পারেন ইসকান্দার হায়দর বাবুল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছের, নূর নবী চৌধুরী, মোহাম্মদ ইউনুছ, নাজমুলহক নাজিম, রামপুরের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী, জামাল উদ্দিন (জামাল এন্টারপ্রাইজ) গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল বা জামাল উদ্দিন (মহাজনের দিঘী) ও হাসান ইমাম বাদল (চর হাজারী)। এদের থেকে ৭ জন।
অন্যদিকে যুগ্ম সম্পাদক পদে চলে আসতে পারেন আবুল খায়ের (পৌর সেক্রেটারি) মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু (ভাগিনা), রুমেল চৌধুরী (ভাইস চেয়ারম্যান), চর পার্বতীর সাবেক চেয়ারম্যান উদিয়মান নেতা মোজাম্মেল হোসেন কামরুল, সিরাজপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মিকন । এদের থেকে ৩ জন।
সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেতে পারেন চরফকিরার চেয়ারম্যান জায়দল হক কচি, রামপুরের জহির উদ্দিন, মুছাপুরের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শাহীন চৌধুরী বা জসীম উদ্দিন বাবর (মুছাপুর)। এদের থেকে যে কোন ৩ জন।
তবে আবুল খায়েরকে যদি পৌর সভাপতি ও রুমেল টৌধুরীকে যদি পৌর সেক্রেটারি মাথায় রাখে তবে তারা দুইজনই উপজেলা কমিটিতে স্থান নাও পেতে পারেন।
সব মিলিয়ে এবার আওয়ামী লীগের কমিটিেতে সাংগঠনিক মূল পদে নবীনদের আগমন বেশি দেখা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে অনেক প্রবীন সম্মানিত সদস্যের কাতারে চলে যেতে পারেন।
কোম্পানীগঞ্জের আমজনতার ভাষায় ভালোভাবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হলে এবং নেতৃত্বে সমঝোতা হলে তাদের উপর থেকে বড়মাপের চাপ কমে যাবে। বসুরহাটসহ কোম্পানীগঞ্জের ব্যবসা বাণিজ্যের গতি ফিরে আসবে। নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top