নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে

nal.jpg

????????????????????????

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

আলো আসবেই। এটাই চিরন্তন। রাতের পরে দিনের আলো উঁকি দিবেই। সেটাই আবারো প্রমানিত হলো নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী ঘরণার রাজনীতিতে। কোম্পানীগঞ্জ তথা নোয়াখালীর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে । গত দুই বছর যাবত নোয়াখালীর আওয়ামী রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছিলো। নোয়াখালীর দুই প্রাণপুরুষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, মাননীয় সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের-এর অনুজ বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এবং নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী ৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য একরামূল করিম চৌধুরীর মাঝে কিছু ভুল বুঝাবুঝির কারনে সৃষ্টি হয় দলীয় বিভক্তি। সেই উত্তাপ পুরো জেলাতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নোয়াখালী ৫ ও ৪ আসনের আওয়ামী রাজনীতির ছিড় ধরে চরমভাবে। দলীয় বন্ধুরা শত্রুতে পরিণত হয়। ব্যক্তিগত জীবনেও রাজনীতির ছোয়া লাগে। ব্যক্তিগত জীবনের অনেক গোপন বিষয়ও জনসম্মুক্ষে চলে আসে।

তবে সব ভালো কাজের পিছনে কিছু কলঙ্কতো লেগেই থাকে। নোয়াখালীর আওয়ামী রাজনীতি নিয়ে জনমনের ক্ষোভ ও জানা অজানা বিষয়গুলো সময়ের প্রয়োজনে সামনে চলে এসেছে। পরিবর্তন সময়ের দাবি ছিলো। সেটি মেয়র মির্জার মাধ্যমে পরিবর্তনের ঝড়ো বাতাসে ধুয়ে মুছে অনেকটা বৃষ্টিস্নাত সুন্দর সৌরভে পরিণত হয়েছে। নোয়াখালী এবং কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আজকের অবস্থান অনেকটা শিশির ভেজা সুন্দর সকালের সুপ্রভাতের মতো।

তবে এই দুই বছরের দলীয় রাজনীতির মূলধারা থেকে সিডকে পড়তে হয়েছে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারী নোয়াখালী ৪ আসনের এমপি একরামুল করীম চৌধুরীকে।  তিনি আবারো মুলধারায় ফিরে আসতে উদ্যোগী হয়েছেন । বার বার তিনি জনসম্মুখে মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে ক্ষমা ছেয়েছেন নিজের কৃত কর্মের জন্য। এমনকি মেয়র মির্জাকেও ফোন করেছেন। এটা শুভ লক্ষন।

এদিকে কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতিতে নেতা ও কর্মীদের দূরত্ব অনেক বেড়েছে। প্রাণ গেলো দুই জনের। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। রাজনীতর এই কলঙ্কিত সময়ে মনমানসিকতা থেকে মুছে আবারো এক সাথে চলতে শুরু করেছে আওয়ামী ঘরনার নেতা কর্মীরা। এমনকি কোম্পানীগঞ্জে রাজনৈতিক পিতার বিরুদ্ধে সন্তানদের উদ্যত্ত মাত্রা ছাড়িয়েছে। সীমা লঙ্গন করেছেন পিতাপুত্র উভয়ই। মানুষের মন নাকি কাঁচের মতো সেটিতে একবার অঘাত লাগলে আর জোড়া লাগে না। তবে সময়ের ব্যবধানে যদিও আঘাতগুলো অনেকটা দুসর হয়ে পড়ে। দাগ চিহ্নটি মুছে যেতে থাকে। কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতিতে তেমনটাই যেন হয়। কোম্পানীগঞ্জবাসী সেটিই আশা করে।

কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে কোন রকম পদ-পদবী ছাড়াই আবদুল কাদের মির্জাকে কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতিতে একমাত্র অভিভাবক ধরেই মিলেমিশে যুগ যুগ ধরে কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো সবাই। এর বিকল্পও ছিলো না আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিতে। ৭৫’র রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খেয়ে নাখেয়ে আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়েছেন মির্জা অনেকটা একক ভাবেই। সেই ছাত্র বয়সেই ছাত্রলীগ যুবলীগ এমনকি আওয়ামী লীগ সবটারই পাল নিজেই শক্ত করেই ধরে রেখেছেন। দলকে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান মেয়র উপহার দিয়েছেন একমাত্র মির্জাই। ওবায়দুল কাদের ও শাহাব উদ্দিন (মুজিববাদী) কে বাদ দিলে কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী ঘরনার সকল নেতাকর্মীই তার হাতেই তৈরি।

মাঝখানে নিজেদের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসে। সেই আঁচ যেয়ে লাগে নোয়াখালীর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও। তবে এরই মাঝে জেলার রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসে। নতুন নেতৃত্ব আসে জেলার রাজনীতিতে। মির্জার প্রেসক্রিফশনে একরামের সময়ে অবহেলিত সদর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন শাহীন ও নোয়াখালী পৌর মেয়র শহীদুল্যাহ সোহেল জেলা রাজনীতির নেতৃত্বের সম্মুখভাগে চলে আসেন। একরাম চৌধুরী প্রথমদিকে এদের বিরোধীতা করলেও সময়ের ব্যবধানে এখন তাদেরই নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন একরাম চৌধুরীসহ সবাই। একরাম চৌধুরী  এখন প্রক্রিয়া করছেন সোহেলকে ম্যানেজ করে একরাম সোহেল সভাপতি সেক্রেটারী কমিটি বাস্তবায়ন করতে। এজন্য বার বার সোহেলের বিরোধী করার জন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশও করছেন। কিন্ত জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অনেকের সাথেই আলোচনা করে জানা গেল জেলা আওয়ামী লীগের আগামী নেতৃত্বে প্রত্যাশিত জায়গায় একরাম চৌধুরীর স্থান আর নাও হতে পারে।

আর এক বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই এই মুহুর্তে দলের মধ্যে ঐক্য থাকাটা জরুরি। সেই ক্ষেত্রে দলের মধ্যে বিরোধ প্রশমিত করে নতুন উদ্যমে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছড়া আওয়ামী লীগের কাছে কোন বিকল্প নেই। নোয়াখালীর রাজনীতিতে তুলনামুলকভাবে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আশা উচিত জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে।

এদিকে গত ২৬ নভেম্বর ওবায়দুল কাদেরের সংসদীয় আসন নোয়াখালী-৫ আসনের এক উপজেলা কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী ২ ডিসেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সফল করার লক্ষে প্রতিদিন সম্মেলিতভাবে “মত বিনিময় সভা” চলছে। মনে হচ্ছে সকল ভেদাভেদ ভুলে এগিয়ে যাচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের এই ঐক্য কোম্পানীগঞ্জ তথা নোয়াখালী আওয়ামী লীগ রাজনীতির ইতিহাসকে পাল্টে দিতে পারে। এই মিলন কোম্পানীগঞ্জবাসীর জন্য একটি সুসংবাদ বয়ে আনতে সহায়তা করবে। এখন শুধু মনে রাখতে হবে আমার লোক বা মাই ম্যাান নির্বাচিত না করে দলের প্রয়োজনে দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আসতে হবে। তবে অবশ্যই আগাগোড়া নির্ভেজাল আওয়ামী লীগ ঘরণার নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। এই ক্ষেত্রে পারিবারিক কেন্দ্রিক রাজনীতি নয় দলে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বকে প্রধান্য দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top