কোম্পানীগঞ্জে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আ.লীগ, আত্মগোপনে বিএনপির প্রার্থী ও নেতারা

BNP-MP-5.jpg

মিয়া মাকসুদ ।।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নোয়াখালী ৫ আসনের শহর-বাজার, পাড়া-মহল্লায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় নেই বিএনপি। হামলা-মামলার ভয়ে আত্মগোপনে আছেন সব প্রার্থী ও অধিকাংশ নেতারা। এমনকি বিএ্নপির সমর্থকরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যে সব নেতাকর্মী সমর্থকরা এতদিন আওয়ামী লীগ ধমকিয়েছেন তারা বেশি বিপদে। ডরভয়ে ঘরে থাকারও সাহস করছেন না।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই কেবল নির্বাচন হলেই তারা ভোট করবেন বলে এতদিন এটাই জানিয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠকর্মীদের এতোটা আশা জাগিয়েছেন যে অক্টোবর নভেম্বরেই বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে। নির্বাচন ছাড়া যে ক্ষমতায় যাওয়ার কোন সুযোগ নেই এটা বিএনপির নেতাকর্মীরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই ভুলে গেছিলেন।

তারা কথায় কথায় বলতেন এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। এই সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। এজন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছি। যদি নির্দলীয় কোনো সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়, তখন নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবা যাবে।

এদিকে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতারা চান নোয়াখালী ৫সহ জেলার সবকয়টি আসনই ধরে রাখতে। নোয়াখালীতে সুবিধা আছে আওয়ামী লীগের। এই জেলায় ১৪ দলের শরিক অন্য কোন দলের আসন জেতাতো দূরের কথা কোন আসনে গড়ে এক হাজার ভোটও নেই। ফলে সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

১৯৭৩ সালের পর থেকে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত নোয়াখালীর ৬টি আসনের মধ্যে ৪/৫টি আসনই বিএনপি, জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ১৫ বছর ধরে ৬টি আসনই আওয়ামী লীগের দখলে থাকায় বেড়েছে দলটির সাংগঠনিক দক্ষতা ও শক্তি। যদিও নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। নোয়াখালী ৫ বাদে সব কয়টি আসনে দলীয় বিভক্তি আছে। তারা আলাদাভাবে কর্মসূচিও পালন করছে। সংসদ-সদস্যদের সঙ্গেও নেতাকর্মীদের দূরত্ব আছে।

তবে নোয়াখালী ৫ আসন ওবায়দুল কাদেরের আসন বিতর্কহীন রয়েছে সবসময়। বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায়, তবে আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করারও কোনো আসনেই কোনো জোরালো প্রার্থী নেই। আবার বিএনপি নির্বাচনে আসলে সব হিসাব পাল্টে যাবে সব হিসাবনিকাশ। জমে উঠবে নির্বাচন-এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

নোয়াখালীতে নোয়াখালী ৫ আসন দেশ স্বাধীনের পর থেকেই ভিআইপি আসন হিসেবে খ্যাত। ১৯৭৯ সালের পর থেকে সবসরকারেই এই আসনের এমপি মন্ত্রী ছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের আগে মওদুদ আহমদ এমপি হতেন। মওদুদ আহমদ আওয়ামী লীগের পরে মূলত সবসময় সরকারী দল করতেন বলে বিএনপি, জাতীয় পাটি আবারো বিএনপির এমপি হতেন এবং মন্ত্রীও ছিলেন।

১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী ৫ ( কোম্পানীগঞ্জ-দাগনভূঞা) এ আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু নাছের চৌধুরী। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৬ সালে নোয়াখালী ৫ (কোম্পানীগঞ্জ-সদর পূর্বাঞ্চল) এ আসনে সংসদ-সদস্য হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওবায়দুল কাদের খোকন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নোয়াখালী ৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) এই আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের টানা তিনবারের সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখন প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। বর্তমান সংসদ-সদস্য ওবায়দুল কাদের-এর ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং একাধিকবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র। এখানে দলের অবস্থা এতাটাই ভালো যে, আবদুল কাদের মির্জাকে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন দিলে আবদুল কাদের মির্জাও অনায়াসেই এমপি নির্বাচিত হবেন। কারণ এই আসনে দলের আজকের এতো শক্ত সাংগঠনিক শক্তির পেছনের ও সামনের সকল ক্যারিশমাই আবদুল কাদের মির্জার একক কৃতিত্বে।

আবদুল কাদের মির্জা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সার্বক্ষণিক নিবিড়ভাবে দলের জন্য কাজ করছেন। আবদুল কাদের মির্জা দলকে সাথে নিয়ে আরো তিন মাস আগেই ওবায়দুল কাদের-এর নির্বাচনী এলাকা গুছিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এ আসনে সংসদ-সদস্য ওবায়দুল কাদের ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনার মতো কোন লোক নেই।

তবে নোয়াখালী ৪ আসনের বর্তমান এমপি একরামকে নোয়াখালী ৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন না দিলে একরাম ৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন না চাইলেও ভোট করার চেষ্টা করবেন। নোয়াখালী ৪ নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বহিঃস্কৃত সেক্রেটারি একরাম। তবে নোয়াখালী ৪ আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আবদুল মালেক উকিলের পরিবারের সন্তান শিহাব উদ্দিন শাহীন। শিহাব উদ্দিন শাহীন নোয়াখালী ৪ আসনের আওয়ামী লীগ যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ ও আসনের ভোটার এবং জনগণ। নির্বাচন করলে তিনিই বিজয়ী হবেন এমনটাই বলছেন জেলা সদর আসনের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে শেষমেষ বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ২০০৮ সালের বিএনপি তথা ৪ দলীয় জোটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ফখরুল ইসলাম। ২০০১ সালের পর বিএনপির সকল বড় আয়োজনে হামলা মামলায় নির্যাতিত মওদুদ আহমদের একান্ত সহযোগী এই ফখরুল ইসলাম। বিগত আন্দোলন সংগ্রাম, হামলা মামলায় দলের নেতা কর্মীদের পাশে ছিলেন এবং সভা-সমাবেশে ফখরুর ইসলামই দলের নেতা কর্মীদের পাশে ছিলেন। তবে নোয়াখালী ৫ আসনে বিএনপির প্রকাশ্য আরো প্রার্থী আছেন মওদুদ আহমদের সহধর্মিনী জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি হাসনা মওদুদ। এছাড়া আরো দৃশ্যমান অদৃশ্যমান ২ ডজন প্রার্থী বিএনপির রয়েছে। এরা পাঁচ/ছয় মাসের প্রজেক্ট নিয়ে ফেসবুকে সরব রয়েছেন মাঠে নেই। মনোনয়ন যুদ্ধ শেষ হলে ফেসবুক ও মাঠ থেকে হারিয়ে যাবেন তারা।

তবে বিএনপির হাইকমান্ড চাচ্ছেন এবার ক্লিন ইমেজের অর্থশালী প্রার্থী। সে হিসাবে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার মতো একক প্রার্থীই ফখরুল ইসলাম। তবে এই হিসেবে ছিড় ধরতে পারে যদি বিএনপি সাবেক আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী (২০১৪ সালের) হুমায়ূন কবীর পলাশ যদি শেষমেষ মনোনয়ন দৌড়ে এসে যায়। ফখরুল ইসলামের বাহিরে নোয়াখালী ৫ আসনে বিএনপির যত প্রার্থীর নাম শোনা যায় এদের সবাইকে মাঠে নামিয়েছেন এই হুমায়ূন কবীর পলাশ। পলাশ খোলশ ছেড়ে বেরিয়ে আসলে অনেক হিসেব পাল্টে যাবে। ২০১৪ সালেও পলাশ প্রকাশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলো না। কিন্তু দলের হাইকমান্ডের ইশারায় পলাশকেই মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মওদুদ আহমদ। এবারো অনেক দূর থেকে কলকাড়ি নাড়ছে হুমায়ূন কবীর পলাশ। এবার এখনও বোঝা যাচ্ছে না পলাশ কী চাইছে। আবার আরেক সমীকরণ আছে নোয়াখালী ৫ বিএনপির সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী ফখরুল ইসলাম এবং হুমায়ূন কবীর পলাশ শশুর জামাই। বিএনপির সকল আলোচনায় ফখরুল ইসলমকে নোয়াখালী ৫ আসনের বিএনপির দেবদূত বলছেন পলাশ।

কিন্তু প্রার্থীতা বিষয় পরে আগে আন্দোলনের এই সময়ে মাঠের নেতা কর্মী সমর্থকদের পাশে নেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ২ ডজন নেতার কেউই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলা বিএনপির মেয়াদ উত্তীর্ণ আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবসহ আহ্বায়ক কমিটির কোনো নেতাই এলাকায় নাই। এভাবে মাঠের নেতাদের বিপাকে রেখে মনেসানয়ন প্রত্যাশী সকল নেতাই অনিশ্চিত গন্তব্যে বা আত্মগোপনে। অন্যদিকে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ। প্রায় প্রতিদিনই অবরোধের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে সরব আওয়ামী লীগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top