কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির একাংশের দিনব্যাপী সভা: মওদুদকে ‘অগণতান্ত্রিক নেতা’ বলে আখ্যা

bnp.jpg

বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির।।

কোম্পানীগঞ্জের উপজেেলা বিএনপির  সাধারণ সম্পাদক  নূরুল আলম সিকদারের আহবানে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও মুছাপুর বিএনপির সেক্রেটারী আজিজুল হক মেম্বারের মৃত্যুতে শোক সভা ও ঈদত্তোর দলীয় নেতাকর্মীদের মিলনমেলা  মুছাপুরে সিকদারের নিজ বাডিতে অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ আগস্ট রবিবার দুপুরে বিএনপির মূল অংশের (নতুন কমিটির বিরোধী গ্রুপ) এ মিলনমেলায় প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা বিএনপির  মূল অংশকে পাশ কাটিয়ে ৯ মাস আগে মওদুদ আহমেদ নিজ অফিসের কর্মচারি দিয়ে ব্যক্তিগত প্যাডে নতুন কমিটি ফেইসবুকে ঘোষণা দেন।  এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতারা প্রতিবাদ করে এবং প্রকাশ্যে রাস্তায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী মিছিল ওবিক্ষোভ করে।

এরপর থেকে মূল কমিটি, মওদুদ আহমেদ ব্যক্তিগত প্যাডে ঘোষিত নতুন কমিটি  এবং আহ্বায়ক কমিটি তিন ভাগে দল করে।  মওদুদ আহমেদ ব্যক্তিগত প্যাডে ঘোষিত নতুন কমিটি  ও আহ্বায়ক কমিটি দুইটি কমিটি জেলায় জমা দেয়া হয়। জেলা বিএনপি ৯ মাসেও কোন কমিটি অনুমোদন দেয় নাই। ফলে পূর্বের কমিটি নিজেদেরকে বৈধ কমিটি বলে দাবি করে আসছে।

কয়েকদিন আগে মুছাপুর বিএনপির সেক্রেটারী আজিজুল হক মেম্বারের মৃত্যুতে ঘরোয়াভাবে শোক সভা করে মওদুদ আহমেদ ব্যক্তিগত প্যাডে ঘোষিত নতুন কমিটি। সেই শোক সভায় সাড়া দেয়নি মুল কমিটি ও আহ্বায়ক কমিটি।

ফলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই দশকের দাপটের নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজ এলাকা ও নিজ জেলা এবং কেন্দ্রে কোনঠাসা। আপাতঃ দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে জেলা ও কেন্দ্র শুনছে না মওদুদ আহমেদকে। মানছে না নিজ এলাকার বৃহৎ অংশ। কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির বৃহৎ এ অংশ বরং বিকল্প নেতৃত্ব খুজছে।

তাই রোববার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে দিনব্যাপী উপজেলা বিএনপির কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পদ বঞ্চিত নুরুল আলম শিকদারের মুছাপুরের বাড়িতে এ সভায় নেতা-কর্মীর ঢল নামে। প্রায় ৩ ঘন্টা ফেইসবুকে লাইভ চলে মওদুদ বিরোধী এ অংশের সভাটি।

এতে বক্তরা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ‘অগণতান্ত্রিক নেতা’ বলে আখ্যা দিয়ে পদ বঞ্চিত নেতারা বলেন, মুখে গণতন্ত্রের বুলি ফোটালেও কার্যক্ষেত্রে পুরোপুরি ‘অগণতান্ত্রিক নেতা’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। কোম্পানীগঞ্জ বিএনপিতে বিভক্তির জন্যও একমাত্র মওদুদ আহমদকে দায়ি করেন তারা।

দুইশতাধিক নেতাকর্মীর এ সভায় উপজেলা, পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন বিএনপির মওদুদ পন্থীদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। চারদলীয় ঐক্যজোটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াত থেকে আগত বিএনপির নেতা শিল্পপতি ফখরুল ইসলামের ইশারায় বিএনপির বিদ্রোহীরা এমন সভার আয়োজন করেন বলে শোনা যায়।

সভায় বিএনপি নেতা নুরুল আলম শিকদারের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উল্যাহ, বিএনপি নেতা কাজী একরাম, সিরাজপুর সেক্রটারী মাঈন উদ্দিন মাসুম, মিলন মেম্বার, মজিদ মেম্বার, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব, মাস্টার আবু নাছের, আবদুল্লাহ, মোঃ জসীমউদদীন আলমগীর, লুৎফুল কবির মানিকসহ নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন।

নেতৃবৃন্দের দাবি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় বিএনপিকে তাঁর পকেটস্থ করে রেখেছেন। তিনি (মওদুদ আহমদ) মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাঁর কর্মকাণ্ডে গণতন্ত্রের লেস মাত্রও নাই। বক্তারা মওদুদ আহমদ কর্তৃক গঠিত ‘পকেট কমিটি’ অনুমোদন না দেয়ায় জেলা কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কমিটি গঠনের জোর দাবি জানান।

সভা সম্পর্কে উপজেলা বিএনপির নুরুল আলম শিকদার বলেন, তাঁর কমিটির সভাপতি আবদুল হাই সেলিম গত দুই বছর ধরে ‘নিখোঁজ’। তাই দলের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বর্ধিত সভার আয়োজন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা মওদুদ আহমদের বিপক্ষে নই। তবে তাঁর (মওদুদ আহমদের) অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছি।

বিএনপি নেতা কাজী একরাম বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একজন অগণতান্ত্রিক নেতা। তিনি গনতন্ত্র নিয়ে সরকারি দলেরও সমালোচনা করেন। কিন্তু তাঁর (মওদুদ আহমদের) নিজের মধ্যেই গণতন্ত্র নাই। তিনি আরও বলেন, আমরা মূল বিএনপিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি, আমাদের নেতা শিল্পপতি আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম।

এদিকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গঠিত নতুন উপজেলা কমিটির (অননুমোদিত) সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, পদ বঞ্চিতদের সভাকে দলের বর্ধিত সভা বলে প্রচার করলেও এটি মূলত শিল্পপতি ফখরুল ইসলামের এজেন্ডা বাস্তবায়নের একটা প্রক্রিয়া মাত্র।

প্রসঙ্গত; গত বছরের নভেম্বর মাসে দলের পুনর্গঠনের কথা বলে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আগের কমিটির সকলকে বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের নেতাদের দিয়ে কমিটির তালিকা তৈরি করে পাঠান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এর বিরোধীতা করে কোম্পানীগঞ্জে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে পদ বঞ্চিতরা। অবশেষে মওদুদ আহমদের দেয়া সেই কমিটিগুলো জেলার নেতৃবৃন্দরা এখনো অনুমোদন করেননি। অন্যদিকে মওদুদ আহমেদ বিরোধী গ্রুপের কমিটিও অনুমোদন করেননি। ফলে মুল কমিটি এখনও বৈধ।

উল্লেখ্য গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে কোম্পানীগঞ্জের মওদুদ বিরোধী অংশকে আর্থিক মানসিক সমর্থন দিয়ে আসছেন গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি নেতা শিল্পপতি আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম। কোম্পানীগঞ্জের উপজেেলা বিএনপির  সাধারণ সম্পাদক  নূরুল আলম সিকদার তার বক্তব্যে বলেন ১৯৯১ সালে বিএনপি এডভোকেট জাকির হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে আমরা তাকে চিনতাম না, ১৯৯৬ সাল কর্ণেল এনাম সাহেবকে  মনোনয়ন দিয়েছে আমরা তাকেও চিনতাম না। কিন্তু দলীয় প্রার্থী বলে ভোট করেছি। এখন বিএনপি যদি আমাদের  নেতা শিল্পপতি আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম মনোনয়ন দেয় আমরা ভোটই করবো।

সভা নূরুল আলম সিকদার নিজে মৃতদের জন্য ও দলের নেতাদের জন্য দোয়া পরিচালনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top