আজ নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন, সবার নজর সভাপতি সেক্রেটারি পদের দিকেই

Salim-AlL.jpg

নোয়াখালী প্রতিনিধি ।।

আজ ৫ ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের দিনক্ষন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই আলোচনা জোরালো হচ্ছে, কারা হচ্ছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আগামীর কান্ডারি। নতুন করে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসছেন। নাকি পুরোনো নতুনে মিলে হচ্ছে জেলা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আগামীর নেতৃত্ব। নাকি একেবারে নতুন নেতৃত্ব দিয়েই সাজানো হবে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ। তাই সবার নজর সভাপতি সেক্রেটারি পদের দিকেই।

এই দুই পদে জেলার কাউন্সিলররা এরই মধ্যে তিনজনের নাম জেনেছেন। যারা সভাপতি ও সেক্রেটারী প্রার্থী হিসেবে  নিজেদের প্রার্থীতা অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। তারা হলেন সভাপতি পদে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন ও সহিদ উল্যাহ খান সোহেল। সহিদ উল্যাহ খান সোহেল । সহিদ উল্যাহ খান সোহেল নোয়াখালী পৌরসভার টানা দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।

অপর দিকে এখনও সরাসরি প্রার্থীতা ঘোষণা না দিলেও সভাপতি পদ পেতে দলে আলাপচারিতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। তবে জানা গেছে মোহাম্মদ আলী সম্মেলনে কোনো পদের জন্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেবেন না। তার আস্থার জায়গা দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে। তারা যদি তাকে কোনো দায়িত্ব দেন, তা অবশ্যই নিতে রাজি আছেন।

এছাড়াও বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার আন্দোলনের মুখে দলের সেক্রেটারির পদ হারানো জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী তাকিয়ে আছেন দলের সাধারণ সম্পাদকের দিকে। তিনি ইতোমধ্যে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। মির্জাকেও ম্যানেজ করার চেষ্টা করে চলেছেন। আবার পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের পৌর নির্বাচনে সহযোগিতা না করার জন্য অনুতপ্ত হয়ে প্রকাশে ভুল স্বীকারও করেছেন। সোহেলকে দলে টেনে সোহেল একরাম-সোহেল মানে একরাম সভাপতি  সোহেল সেক্রেটারি এমন প্রচারণাও চালাচ্ছেন অনুসারিদের মাধ্যমে।

একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে ঘোষিত আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিত ও পারিবারিক লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় ওই কমিটি কেন্দ্রের অনুমোদন পায়নি। পরে নানা বিতর্ক ও মেয়র মির্জার চরম বিরোধীতায় তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান। শেষে তার ঠাঁই হয় বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনের দলের প্রার্থী ও প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ভোট করে আরো বিতর্কীত হন এবং জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকেও বহিস্কৃত হন।

উল্লেখ্য নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর জেলা শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে। অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে আরেক প্রার্থী ছিলেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল। সেই সম্মেলন ঘিরে সেদিন একরামুল করিম চৌধুরী ও সহিদ উল্যাহ খানের সমর্থকদের মধ্যে শহরে ব্যাপক সংঘর্ষে আহত হয়েছিলো কমপক্ষে ৭০ জন। পরে ওবায়দুল কাদেরের আশ্বাসে সহিদ উল্যাহ খান সোহেল কোন রকম বাড়াবাড়িতে যাননি।

২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে যে স্বজনপ্রীতি ও পারিবারিক কমিটি করা হয়েছিলো সেটি ছিলো লজ্জার। এমনকি দলের ঘোষিত আংশিক কমিটির সেক্রেটারি তৎকালীন সময়ে তার নাবালক ছেলেকে কমিটির সম্পাদকীয় পদে নিয়ে আসে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মতে সেই সময়ে একরামুল করিম চৌধুরী মুলত আওয়ামী লীগ নয়, জেলায় একরাম লীগ করেছিলেন। সেটি সবার জানা।

সেই অবস্থা থেকে দলকে উত্তরণের জন্য গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির নেতৃত্বে বর্তমানে পুরো জেলার আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত বলা যায়। সম্ভবত স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম সব উপজেলা থানা সম্মেলন শেষ করে জেলা সম্মেলন হচ্ছে।

নোয়াখার্লী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির একাধিক সদস্য নোয়াখালী মেইলকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতে যারা আছেন, তাদের অনেকেই ইতিপূর্বে দলের জেলা কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। কিন্তু কোণঠাসা করে রাখার কারণে দলে ভূমিকা রাখতে পারেননি তারা। যা তারা গত এক বছরে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন।

সুতরাং দলের আগামী নেতৃত্ব তাদের মধ্য থেকেই  নির্বাচন করা হবে। এটাই প্রত্যাশা করেন তারা। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে এরই মধ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং উপজেলা সম্মেলনগুলো শেষ হয়েছে। সম্মেলন নিয়ে কোথায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ থেকে পরিষ্কার বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বের প্রতি সব পর্যায়ের আস্থা রয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গত ১৪ বছরে জেলায় আওয়ামী লীগে যা কেউ করতে পারেননি, আমরা আহ্বায়ক কমিটি সেটা করে দেখিয়েছি। আমরা দলকে তৃণমূল থেকে সুসংগঠিত করেছি।’ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে জানিয়ে শিহাব উদ্দিন বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি তিনি মেনে নেবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী সহিদ উল্যাহ খান বলেন, আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বের ধারাবাহিকতায় তিনি আজকের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী। এর আগে ২০১৯ সালের সম্মেলনেও তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ছিলেন। এখন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটি তিনিও মেনে নেবেন।

সম্মেলনে আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজমুল হক নাজিম নোয়াখালী মেইলকে বলেন, তাদের চাওয়া যোগ্য ব্যক্তির হাতে যেন দলের নেতৃত্ব যায়।

আরতো মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। দিন শেষেতো সবার সামনে চলে আসবে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আগামীর কান্ডারি কারা হয়েছেন। পুরানো নতুনে নাকি একেবারই নতুন দুইজন আসছেন জেলা আওয়ামী লীগের আগামীর কান্ডারি হয়ে। মাঠের নেতাকর্মীদের ধারনা সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে দুই যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে শাহীন বা সোহেল হতে পারে। দুই যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে শিহাব উদ্দিন শাহীন সভাপতি সহিদ উল্যাহ খান সোহেল সেক্রেটারি এমনও হতে পারে।  এখন অপেক্ষার পালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top