কোম্পানীগঞ্জে ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের বিবাধমান দু’গ্রুপ, সুবিধা নিতে পারে জামায়াত, বিক্রি হচ্ছে বিএনপির ভোট
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
আওয়ামী লীগের ঘরোয়া বিরোধে চরম উত্তেজনা আর উৎকন্ঠার মধ্যেই আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী কোম্পানীগঞ্জের ৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৩ জানুয়ারি মার্কা পাওয়ার পর থেকে প্রচারণায় নেমে গেছে প্রার্থীরা। এবার কোম্পানীগঞ্জে দলীয় প্রতীক না থাকায় আওয়ামী লীগের সব প্রার্থীই নিকে দলের প্রার্থী বলে দাবী করছে।
গত ১২ জানুয়ারি মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষদিন পর্যন্ত মোট ৪৫৫ জন পদপ্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪৩ জন। বাকীরা সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও মেম্বার পদে। তবে প্রত্যাহারের পরে একণ ভোট লড়াইয়ে আছেন ৩৯জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এবারের ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিগত ৬ মাসের অনেক জল্পনার কল্পনার অবসান হলো দলীয় মনোনয়ন নিয়ে। শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন উম্মুক্ত হলেও ঘরের মধ্যে ঘর রয়েছে। ৮ ইউনিয়নের প্রার্থীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই আওয়ামী ঘরনার। দলের উঠতি নেতারাই এবার ভোটের লড়াইয়ে। সরকার দলে পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ে সতন্ত্র নামের অনেকেরই ভোটের জোয়ারে ভাটা লেগেছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে দলের দুই পক্ষের ঘরোয়া মনোনয়ন পেয়ে মাঠে নেমেছেন। সর্বশেষ তথ্য মতে মেয়র অনুসারি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা হচ্ছেন, ১নং সিরাজপুরে নিজাম উদ্দিন মিকন, ২নং চর পার্বতীতে বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন কামরুল, ৩নং চর হাজারী ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আবু ছায়েদ মিয়ার ছেলে মাইনউদ্দিন সোহাগ, ৪নং চর কাঁকড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সফি উল্যাহ মিয়া, ৫নং চর ফকিরায় বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন লিটন, ৬ নং রামপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী, ৭নং মুছাপুরে আমেরিকা প্রবাসী আইয়ূব আলী, ৮নং চর এলাহী ইউনিয়নে আবদুল মালেক।
অন্যদিকে মেয়র বিরোধীরাও সব কয়টি ইউনিয়নে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থী দিয়েছেন, তারা হচ্ছেন: ১নং সিরাজপুর ইউনিয়নে মাইন উদ্দিন মামুন। ২নং চরপার্বতী ইউনিয়নে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু, ৩নং চর হাজারীতে বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, তবে অবস্থা বেগতিক দেখে মেয়রের প্রার্থী সোহাগকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ালে তারা স্বপনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। ৪নং চরকাঁকড়াতে ডাবল সবুজ, ৫নং চরফকিরা ইউনিয়নে জায়দল হক কচি, ৬ নং রামপুর ইউনিয়নে সিরাজিস সালেকিন রিমন। ৭নং মুছাপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন। ৮নং চর এলাহী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সর্বশেষ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ। সে নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জের ৮টি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ জিতেছে। বিএনপি বিহীন নির্বাচনে এখন কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের জন্য আরো উর্ববর মাঠ ছিলো। মনোনয়ন পেলেই নব্বাইভাগ চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভবনা ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিভাজনে এবার আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ। তরে আওয়ামী লীগের বিভাজন কে কাজে লাগিয়ে জয় নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে এমন জোরালো প্রার্থীও নেই। তবে আওয়ামী বিরোধী ভোট জোট হলে নির্বাচনী হিসেব পাল্টে জেতে পারে।
১নং সিরাজপুরে মিকন জয়ের পান্থে থাকলেও বিএনপি জামায়াতের ভোট এক হলে জামায়াত প্রার্থী হাসেম মেম্বার জয় নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। তবে বিএনপির উপর আস্থা রাখা কঠিন। বিএনপির ভোট টাকার দিকে ঝুকে আছে। সেক্ষেত্রে নিজাম উদ্দিন মিকনের গলায় ওঠতে পারে জয়ের মালা।
২নং চরপার্বতীতেও কামরুল মঞ্জুর লড়াই শেয়ানে শেয়ানে টক্কর। মেয়রের সমর্থনের কারনে কামরুল কিছুটা সুবিধায় থাকলোও সন্দ্বীবি ভোটে জামায়াত প্রার্থী হানিফ কাজী জয় নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। তবে ভোটের জরিপে বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুল এগিয়ে আছেন।
৩নং চরহাজারীতে মেয়র সমর্থিত প্রার্থী মহিউদ্দিন সোহাগ-এর বিজয় অনেকাটা নিশ্চিত। চরহাজারীতে বাকী ৩জন মিলেও সোহাগের সমান ভোট পাবে না বলে স্থানীয়দের ধারণা।
৪নং চরকাঁকড়াতে মেয়র সমর্থিত হাজী সফির অবস্থা ভালো। পুরো ইউনিয়নে হাজী সফির ভোট রয়েছে। বাড়তি পাওনা হচ্ছে মেয়রের বিমেষ নজর। হাজী সফির সাথে বাদলের লড়াই হতে পারে।
৫নং চর ফকিরাতে ত্রিমুখি লড়াই তুঙ্গে। শেষমেষ লড়াইটা লিটন ও টেলুর মধ্যে গড়াতে পারে। তবে কচিও পেলনা না। পারিবারিক অংকে শেষ হাসিটা এবার টেলুকেই হাসতে দেখা যেতে পারে।
৬নং রামপুরে বেশ সুবিধা জনক অবস্থানে আছেন মেয়র সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী। কারণ বিগত সময়ে ইকবাল কখনও দলের চেয়ারম্যান ছিলেন না, ছিলেন জনগণের চেয়ারম্যান। ইকবালের সেই জনপ্রিয়তা কাল হবে অন্যদের। এছাড়া ইকবাল চেয়ারম্যানের শালিস বানিজ্যসহ লুটপাটের কোন অভিযোগ নাই। নিতান্তই একজন জনদরদি সৎ মানুষ হিসেবে এবারো জয় নিয়ে ঘরে ফিরবেন এমনটাই ধারণা রামপুরের ভোটারদের। অন্যদিকে ইকবালকে টেক্কা দিতে পারে এমন প্রার্থীও এবার নেই। ভোটারদের মন্তব্য সব প্রার্থী থেকে বেশি ভোট পাবে ইকবাল একাই।
৭নং মুছাপুরে পারিবারিক কারনে এখনও অনেকাটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে মেয়র বিরোধী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শাহীন। তবে মেয়র সমর্থিত প্রার্থী আমেরিকা প্রবাসী আইয়ূব আলীও শক্ত শিকড় করে নিচ্ছেন প্রতিদিন। দলের আইয়ূব আলীর হাত অনেক দূর পর্যন্ত আছে। শেয় পর্যন্ত চমক থাকলেও থাকতে পারে।
৮নং চর এলাহীতে বর্তমান চেয়ারম্যান রাজজাক সাহাব উদ্দিনের কাটাকাটিতে জয় নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে মেয়র সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মালেক।
আমাদের এই জরিফ আপেক্ষিক। তবে পক্ষপাতমুলক নয়। মেয়রের সমর্থিত প্রার্থীরা একক নেতৃত্বে গোছালো, অন্যরা এলোমেলো। তবে অর্থনৈতিক না হয়ে রাজনৈতিক হলে অনেক হিসাব পাল্টে যেতে পারে!