মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন গ্রামের পর গ্রাম

meghna-Ramgoti.jpg

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।।

মেঘনার তীব্র ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ৯টির মধ্যে চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রাক্ষুসে মেঘনা ইতিমধ্যে গিলে খেয়েছে চরকালকিনি, সাহেবের হাট, চরফলকন ও পাটারির হাট ইউনিয়নের ৩৬ ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ড। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে খুব শিগগিরই পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে আরো ১২টি ওয়ার্ড। এছাড়াও ভাঙনের মুখে রয়েছে চরলরেন্স ও চরমার্টিন ইউনিয়ন। স্থায়ীভাবে কমলনগর রক্ষার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আপদকালীন প্রকল্পের নামে লোপাট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কমলনগর রক্ষার দাবিতে বিভিন্নস্থানে মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ বাজারের মেঘনার পাড়ে নিজস্ব উদ্যোগে জংলা বাঁধ দিচ্ছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ ইং সালে বৃহত্তর রামগতি উপজেলা থেকে ৫টি ইউনিয়নকে ৯টি ইউনিয়নে বিভক্ত করে কমলনগর উপজেলা সৃষ্টি করা হয়। এর অনেক আগে থেকে মেঘনার তীব্র ভাঙন দেখা দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। জানা যায়, ১৯৭০ সালে চরকালকিনি ও চরফলকন ইউনিয়নে মেঘনার ভাঙন শুরু হয়। দীর্ঘ পাঁচ দশকের মেঘনার এ অব্যাহত ভাঙনে চরকালকিনি ইউনিয়নের চরকাঁকড়া, চরসামছুদ্দিন ও তালতলি, সাহেবের হাট ইউনিয়নের চরজগবন্ধু, মাতব্বরনগর এবং চরফলকন ইউনিয়নের চরকটোরিয়া, চরকৃষ্ণপুর, মাতব্বরচর ও পাতারচর এবং পাটারীরহাট ইউনিয়নের উরিরচর, পশ্চিম চরফলকন ও ডিএস ফলকনসহ ১২টি গ্রাম সম্পূর্ণ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গত ৪৯ বছরের ভাঙনে মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়েছে এসব এলাকার প্রায় ২০ হাজার একর ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, আশ্রয়ণ কেন্দ্রের পাঁচটি কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং কয়েক কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়কসহ অসংখ্য মসজিদ, বিভিন্ন স্থাপনা ও হাটবাজার।

সম্প্রতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে চরফলকন ইউনিয়নের বাঘারহাট বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, সাহেবের হাট ইউনিয়নের নতুন কাদির পুন্ডিতেরহাট বাজার, চরকালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ বাজার, চরজগবন্ধুর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো সরকারি-বেসরকারি অনেক স্থাপনা। বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তাণ্ডবলীলা চলতে থাকায় লুধুয়া ফলকন এলাকায় আপদকালীন কাজের অংশ হিসেবে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ডাম্পিং করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন চলমান বরাদ্দ দিয়ে জিওব্যাগে ডাম্পিং ও জিও টিউবে ডাম্পিং করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এসব লোকদেখানো আপদকালীন প্রকল্পের নামে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে বলে স্থানীয় মেঘনা পাড়ের মানুষ ক্ষোভ জানান। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, মেঘনার ভাঙনরোধে কমলনগর উপজেলার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে এ অর্থবছরে ৬টি স্পটে প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষাধিক টাকার জিও টিউবে ডাম্পিং এর কাজ চলছে। ভাঙন ঠেকাতে ভিন্ন কৌশলে কাজের পরিকল্পনা নিচ্ছেন তারা।

গেল বছর লুধুয়া এলাকায় ৫ কোটি ৯২ টাকার প্রকল্পে ১ লক্ষ ৮ হাজার জিওব্যাগ ফেলে ডাম্পিং হয়েছে। অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত ভাঙনকবলিত এলাকায় থেকে কাজ করছি। এখানে অনিয়মের কোনো সুয়োগ ছিলোনা। যেহেতু ওই এলাকায় ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি; তখন মানুষতো বলবেই।” স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, মেঘনার ভাঙনরোধে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের নতুন ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় একটু ঢিলেমি করার কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এবছর পাশ করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি মেঘনার ভাঙনরোধে আগামী বছর থেকে স্থায়ীভাবে বাঁধের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top