ফেনী মুহুরী সেচ প্রকল্প, বদলে যাচ্ছে নদীর গতি, কার্যকারিতা হারিয়েছে স্লুইজ গেট, জাগছে নতুন চর

Muhuri-nodi.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রাম ও ফেনী সীমান্তবর্তী এলাকার ফেনী নদীতে বাস্তবায়ন হওয়া মুহুরী সেচ প্রকল্প কার্যকারিতা হারাচ্ছে। নদীর ভাটি এলাকায় জমে ওঠা পলির স্তরের কারণে স্বাভাবিক গতি বদলে যাচ্ছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে এখানকার সিডিএসপি বাঁধ, বিস্তীর্ণ এলাকা ও শত শত মৎস্য ঘের। এতে ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে বসেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন বলছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে গেলে এখানে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে। পার্শ¦বর্তী এলাকার মানুষ হারাবে ভিটে-বাড়ি ও জমি। নদী গর্ভে বিলীন হবে শত শত মৎস্য ঘের। ব্যাহত হবে এ এলাকায় বাস্তবায়ন হতে যাওয়া দেশের সর্ববৃহৎ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের উন্নয়ন কাজ। কার্যকারিতা হারাবে সেচ প্রকল্প।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘খুব সহসা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে। এখানকার জনবসতি, মৎস্য প্রকল্প ও বাস্তবায়নাধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ ক্ষতির মুখে পড়বে।’

পাউবো ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুন নবী জানান, নদীর ভাটি এলাকায় জমে থাকা পলি ড্রেজিং এর জন্যে আরো আগে উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটিও হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সব বন্ধ না থাকলে এটির কার্যক্রম আরো এগিয়ে যেত।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের আগস্ট মাসে সিডিএসপি বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে যায়। ওইসময় ভেঙে যাওয়া অংশ নদীর গতি প্রকৃতি বুঝে অন্য দিক দিয়ে ঘুরিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে সিডিএসপি বাঁধের পশ্চিম পাশে সুরক্ষা ব্লক না বসালে চলতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিবে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্পের ভাটিতে প্রায় ৭শ বর্গমিটার এলাকা পলি জমে ৭৫ ভাগ ভরাট হয়ে গেছে। এতে নদীর পানি প্রবাহের পথ বদলে একদিকে ছোট ছোট চর জেগে উঠছে অন্যদিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আবার সেচ প্রকল্পের বেশ কিছু স্লুইজ গেট ইতোমধ্যে পলি জমার কারণে কার্যকারিতা হারিয়েছে। এদিকে প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে মুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই, ফেনী ও সোনাগাজী উপজেলার ২৭.১২৫ হেক্টর জমি ইরি চাষের আওতায় আসে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে ভরা বর্ষা শুরু হওয়ার আগে নদীতে পলি জমা এলাকা জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং করা না হলে একদিকে নদীর উজান এলাকার গ্রামের পর গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে অপরদিকে এখানকার জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকবে।

এছাড়া মিরসরাইয়ের বিস্তৃন্য জনপদকে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৪ সালে চর ডেভেলপমেন্ট এন্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্পের (সিডিএসপি) আওতায় বাস্তবায়ন করা হয় ১১.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধ।

এ বাঁধের কারণে এখানকার বাঁশখালী ও ইছাখালী এলাকায় গড়ে ওঠে হাজার হাজার একর মৎস্য ঘের। বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ফেনী নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। বাকি অংশটুকু বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগর অববাহিকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top