কোম্পানীগঞ্জে যেভাবে নিজেদের নিজেরাই প্রতিহত করছি, এতে দলও দলের নেতাকর্মীরা কোথায় যাবে : এডভোকেট এবিএম জাকারিয়া

ad-zakariya.jpg

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি ।।

গত ৩০ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষির্কীতে বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদ্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট এবিএম জাকারিয়া দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিষ্ফোরন্মুখ বক্তব্যে  বলেন, দলীয় বিশৃঙ্খলা, গ্রুপিংয়ের জন্য স্থানীয় নেতারাই দায়ী।

এডভোকেট এবিএম জাকারিয়ার এমন বক্তব্যে স্থানীয় নেতারা নাখোশ হলেও তৃণমূলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। অভিযুক্ত স্থানীয় কতিপয় নেতার যাঁতাকলে পিষ্ট তৃণমূলের সিংহভাগ নেতাকর্মীরা জেলার জনপ্রিয় এই নেতার হৃদয়গ্রাহী ও সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা মূলক সময়োপযোগী বক্তব্যে নবউদ্যোমে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।

তিন বলেন, কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির যে জনসমর্থন আছে এবং আওয়ামী লীগ আমলে গত ১৭ বছর যেভাবে দলের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা, নির্যাতন, নিষ্পেষিত হয়েছে, এতে দলের জন সমর্থন বেড়েছে। সাধারণ মানুষ চেয়ে আছে বিএনপির দিকে। এ হলের (বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তন) মাত্র ৫’শ লোককি আমাদের বিএনপি? আমাদেরতো লক্ষ লক্ষ জনসমর্থন রয়েছে। এখানকার স্থানীয় নেতারা কেউ বলে অমুক ভাইয়ের সাথে চলেন, কেউ তমুক ভাইয়ের সাথে হাঁটেন। দয়া করে এসব বন্ধ করুন। পৌরসভা বা উপজেলা বিএনপি সভা ডাকলে সব নেতাকে বলুন, দাওয়াত দিন। কোন নেতা না শুনলে জেলা বিএনপিকে জানান, জেলা না শুনলে কেন্দ্রীয় বিএনপিকে জানান।

বলুন অমুক নেতা আমাদেরকে সহযোগিতা করছে না, অসহযোগিতা করছেন। সব নেতাকে এক মঞ্চে আনুন, দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করুন। ছাত্রদলের কমিটি, এটা কোন কমিটি হলো? অথচ ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে এখানে ঝাড়– মিছিল, লাঠি মিছিল, জুতা মিছিল, হামলা-মামলা বিশৃঙ্খলা হলো, হোয়াটিস দিস? ফেসবুকে লেখালেখি, উল্টাপাল্টা স্ট্যাটাস বন্ধ করুন। স্টেজে (সভা মঞ্চে) এত বিশৃঙ্খলা কেন, এত লোক কেন, কাজ কি এদের? কে দলের নমিনেশন পাবে তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। আমরা কেউ বলতে পারবো না। সুতরাং দলের মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য সব পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।-

আজকে কোম্পানীগঞ্জে যেটা দেখছি, অস্বীকার করবেন না, মনে কষ্টও কেউ নেবেন না। এক নেতা এক জায়গায় দলের প্রোগ্রাম করছেন, সেখানে বক্তব্যে তিনি বলছেন দল নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, প্রতিহত করব। আরেক নেতা আরেক জায়গায় তাও দল নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলে প্রতিহতের আহবান জানান। তিন জায়গায় তিন নেতা একই সুরে প্রতিহতের কথা বলছেন। এভাবে যদি নিজেদের নিজেরা প্রতিহত করি, তাহলে দলও দলের নেতাকর্মীরা কোথায় যাবে? তিনদিক থেকে তিনজন যদি নিজেদের নিজেরা প্রতিহত করি, তাহলে দলের কী অবস্থা হবে। আওয়ামী লীগ তো এখন নেই, নিজেদের নিজেরা প্রতিহত করতে করতে দলতো শেষ হয়ে যাবে।

শহীদ জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকীর প্রোগ্রামে এসে আমাকে অপ্রিয় সত্য কথাগুলো বলতে হল। সরি…..আমি দলের মধ্যে সুস্পষ্ট চরম বিশৃংখলা দেখে একথা গুলো বলতে বাধ্য হয়েছি। ভবিষ্যতে যখন, যেখানে দলের যে সভাই হোক, এখনকার সব নেতাকে দাওয়াত দেবেন। সকল নেতাকে একই মঞ্চে একত্রিত করে দলীয় প্রোগ্রাম করবেন। এতে দলের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য হবে, দলও শক্তিশালী হবে। আমি কোম্পানীগঞ্জে দৃশ্যত স্পষ্ট যা দেখছি।

এসময় এডভোকেট এবিএম জাকারিয়া বলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা এটা নিউজ হবে না। এগুলো আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়, নিউজ করবেন না। যে অবস্থা দেখছি, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার ভাগ্য খুবই খারাপ হবে।

আমাদের নেতা তারেক রহমান বার বার বলছেন, আসুন দলকে ঐক্যবদ্ধ করি। আমাদের এডভোকেট আবদুর রহমান সদ্য বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য, হায়দার বিএসসি সাবেক সভাপতি। নতুন-পুরাতন সবাই আমরা দলীয় সভাগুলোতে সবাই একসাথে একই স্থানে, একই মঞ্চে দলীয় সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করছি, দলকে সুসংগঠিত করার জন্য। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় কেন ব্যাতিক্রম হবে? এজন্য সম্পূর্ণ দায়ী এখানকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। কেন এটা হবে? কেন আপনারা পক্ষা-পক্ষি করেন? আপনারা কেউ এ ভাই, কেউ ওই ভাইয়ের পক্ষে। জাতীয় নির্বাচনের সময় স্পষ্ট হবে, কোন ভাই এক ভাই। এখন তো সব ভাই এক ভাই। ঐক্যবদ্ধ থাকলে যিনি দলীয় নমিনেশন পাবেন, তিনিই জয়ী হবেন। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে, কি হবে তা সবাই জানেন।

এডভোকেট জাকারিয়া শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি চারণ,তাঁর আদর্শ,রাজনৈতিক দর্শন বিষয়ে বক্তব্যের পর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, এক সময়ে মরহুম এডভোকেট একেএম শাহাব উদ্দিনকে সভাপতি ও জিয়াউল হক জিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কোম্পানীগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি করেছিলাম। ৭ জনের বেশী ৮ জনকেও কমিটি করতে নাম দিতে পারিনি। এখন মাশাআল্লাহ অনেক নেতাকর্মী, দল অনেক সমৃদ্ধশালী, কিন্তু দুঃখ হলেও সত্য, গুণগত কোনো পরিবর্তনই হয়নি। অপ্রিয় হলেও সত্য কথাগুলো বলছি, দলটি কার- শহীদ জিয়াউর রহমানের। আমরা একজনেরই অনুসারী শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শের। দলের আদর্শের স্বার্থে কোনো ভাই-বোনের রাজনীতি চলবেনা, পরিস্কার কথা। আমাদের নেতারা আসবে, নেতাদের সকলকে আমরা সম্মান দেখাব। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমরা তাকে জয়ী করার জন্য জান প্রাণ দিয়ে কাজ করবো।

উল্লেখ্য ৫ আগস্টের পর কোম্পানীগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে দলকে বিভক্ত করে দল করছে কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় নেতারা। নোয়াখালী-৫ আসনে এরশাদ সরকারের উপ রাষ্ট্রপতি কোম্পানীগঞ্জের মানুষের প্রাণের নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর থেকে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদই নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপির একমাত্র অভিভাবক ছিলেন। ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ-এর মৃত্যুর দিন থেকে নিজ অর্থে মরহুম ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ-এর নোয়খালী-৫ আসনের দুই উপজেলায় বিশাল আকারের জানাজার ব্যবস্থা করে প্রিয় নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে অভিভাবকহীন নোয়খালী-৫ আসনের দুই উপজেলার অভিভাবকত্ব গ্রহন করেন চরদলীয় জোটের মনোনীত বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। ২০২১ সালের ১৬ মার্চের পরে দলের নেতাদের মামলা হামলা ও স্বৈরচার বিরোধী সকল আন্দোলন সংগ্রামে কোম্পানীগঞ্জ-নোয়াখালী-চট্টগ্রামবিভাগীয়সহ কেন্দ্রীয় সকল বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামই পাশে ছিলেন এবং একমাত্র ভরশা ছিলেন।  মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামই প্রথমে নোয়াখালী জেলার সাথে যোগাযোগ করে কোম্পানীগজ উপজেলা বিএনপি ও পরে বসুরহাট পৌর বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি দাঁড় করান। এর আগে দীর্ঘ বছর জেলা অনুমোদিত কোম্পানীগজ উপজেলা বিএনপি ও পরে বসুরহাট পৌর বিএনপির কোন সাংগঠনিক কমিটি ছিলো না।

কিন্তু ৫ আগস্টের পর কোম্পানীগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা বেগমগঞ্জের আবেদের। নোয়াখালী-৫ আসনের সাংগঠনিক অভিভাবক ধোয়া তুলে মাঠ দখলের চেষ্টা করেন। দলকে করেন বিভক্ত। আরেক ভাগ করেন এরশাদ সরকারের জাতীয় পার্টির ১৯৮৮ সলের একদলীয় নির্বাচনের অবৈধ এমপি হাসনা মওদুদ। এাড়াও দলের মনোনয়ন পেতে দলীয় মাঠে টাকা ছাড়েন আরো হাফডজন দেশীয় ও প্রবাসী নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top