কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোম্পানীগঞ্জে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন, ৮ ইউনিয়নে বেসরকারীভাবে ফলাফল ঘোষণা

C-UP-1.jpg

কোম্পানীগঞ্জ ( নোয়াখালী ) প্রতিনিধি ।।

সকল জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-পর্যালোচনার অবসান ঘটিয়ে বহু প্রতিক্ষিত ৭ম ধাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউপি নির্বাচন সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় সকল কেন্দ্রে ভোটারদের শতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোট সম্পন্ন হলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার অভিযোগ তুলে প্রার্থী ও ভোটাররা। প্রতিটি ইউনিয়নে কোন না কোন একটি কেন্দ্রকে টার্গেট করে ডিবি পুলিশের একতরফা আক্রমণ ও সহযোগিতাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য দায়ী করছে বেশ কয়েকজন প্রার্থী ও ভোটার।

১নং সিরাজপুর ইউনিয়নের ৭নং ভোট কেন্দ্র, চরপার্বতী ইউনিয়নের ১ ও ৭নং কেন্দ্র, চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৭নং ভোট কেন্দ্র, রামপুর ইউনিয়নের ৫নং কেন্দ্র, চরফকিরা ও চরএলাহী ইউনিয়নের প্রায় সবকয়টি কেন্দ্রের অনিয়মের অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রার্থী ও ভোটাররা। এসকল কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে না আসতে হুমকি দেয়া, ডিবি পুলিশ ঘুষ নিয়ে বুকে ধারণ করা ব্যাজ দেখে একতরফা আক্রমণ করে ভোট কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়া সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তারা। এ দিকে রাত ৯টা থেকে উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ বেসরকারীভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।

১নং সিরাজপুর ইউনিয়নে নাজিম উদ্দিন মিকন অটোরিক্সা প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল হাশেম চশমা প্রতীক পেয়েছেন ৫ হাজার ৪শ ৪৮ ভোট।

২নং চরপার্বতী ইউনিয়নে মোহাম্মদ হানিফ মোটরসাইকেল প্রতীকে ৫ হাজার ৪শ ২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মোজাম্মেল হোসেন কামরুল টেলিফোন প্রতিকে পেয়েছেন ৪ হাজার ২শ ১৬ ভোট।

৩নং চরহাজারী ইউনিয়নে এ জেড এম মহি উদ্দিন আনারস প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৪শ ৪৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি চশমা প্রতীক নিয়ে মুহাম্মদ শাহ জাহান পেয়েছেন ৪ হাজার ৪শ ভোট।

৪নং চরকাঁকড়া ইউনিয়নে ৫ হাজার ৩শ ৩১ ভোট পেয়ে চশমা প্রতীকের মোঃ হানিফ সবুজ নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মোঃ সফি উল্যা অটোরিক্সা প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ২৫ ভোট।

৫নং চরফকিরা ইউনিয়নে মোহাম্মদ জায়দল হক আনারস প্রতীক নিয়ে ৭ হাজার ২শ ১১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি জামাল উদ্দিন মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৮০ ভোট পেয়েছেন।

৬নং রামপুর ইউনিয়নে সিরাজিস সালেকিন রিমন আনারস প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৬শ ৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ইকবাল বাহার চৌধুরী মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৯শ ৪৮ ভোট।

৭নং মুছাপুর ইউনিয়নে আইয়ুব আলী আনারস প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৯শ ২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি নজরুল ইসলাম মোটর সাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৮৪ ভোট।

৮নং চরএলাহী ইউনিয়নে ৬ হাজার ১শ ২২ ভোট পেয়ে আবদুর রাজ্জাক আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মোঃ আবদুল মালেক চশমা প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৬২ ভোট পেয়েছেন।

২নং চরপার্বতী ইউনিয়নের চরপার্বতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার দিদারুল ইসলাম নিজ টেবিলে বসে এজেন্টদের উপস্থিতিতে প্রিসাইডিং অফিসারের নির্দেশে ৪টি ব্যালট বইয়ে আনারস প্রতীকে স্বাক্ষরবিহীন সীল মারতে থাকলে গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে পড়ে। পরে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা ছবি ও ভিডিও ধারণ করলে প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালটগুলি বাতিল ঘোষণা করে।

এ সময় সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কঠোর নির্দেশ জারি করে প্রিসাইডিং অফিসার ও সোনালী ব্যাংক বসুরহাট শাখার সিনিয়র অফিসার নিরঞ্জন সরকার। পরে তিনি ডিবি কল করে। ডিবির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকতা এস আই মোঃ শামীমুল এহসান এসে সাংবাদিকদের মাঠ ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে পেশাগত কাজে বাধা প্রদান করে ও শিষ্টাচারহীন আচরণ করে নাজেহাল করে। এরপর প্রিসাইডিং অফিসার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রটি মৌখিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেও পরবর্তীতে ভোট গণনা করেন।

অপরদিকে বিকেল ৩টায় চৌধুরীহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ডিবি পুলিশের একই টীমের উপস্থিতিতে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা টেলিফোন প্রতীকের সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে ইট, পাটকেল, কাঁচের বোতল ও ককটেল নিক্ষেপ করে এবং চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে আতংক সৃষ্টি করে। ডিবি পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ড জনসাধারণের যেন দৃষ্টিপাত না হয়, সে জন্য সকল দোকানপাট বন্ধ করে ডিবি পুলিশের টীমটি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বাজারের ব্যবসায়ীদের দোকান-পাট বন্ধ করে নানারকম দূর্ব্যবহার, লাঠি চার্জ ও হুমকি ধমকি প্রদান করার অভিযোগ করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেন কামরুল।

এ ব্যাপারে ডিবি পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই মোঃ শামীমুল এহসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সত্য নয়। আমি চৌধুরীহাট কেন্দ্রটি বাজারের উপর হওয়ায় কেন্দ্রের আশপাশের কোন গোলযোগ সৃষ্টি না হয় তার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের নির্দেশে বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ করে দেই।

অপর দিকে মঙ্গলবার (৮ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বামনী বাজারস্থ নির্বাচনী কার্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ৬নং রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল বাহার চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ নির্বাচন একটি কলংকিত নির্বাচন হয়েছে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব আমাদেরকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও ভাগিনাকে জিতানোর জন্য অর্থ দিয়ে প্রশাসনকে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিশেষ করে নির্বাচনের তিনদিন আগ থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যবহার ভোটরাদের কিনে নেয়া হয়েছে। ভোটের আগের দিন রাতে প্রশাসনকে অর্থ দিয়ে কিনে নেয়া হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স-বিজিবি সহ সবাই আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমার কর্মী-এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারদের আনা নেয়ার জন্য আমার ৯৫টি রিক্সার চাবী নিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আনারস প্রতীকের চাবী নেয়া হয়নি। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের নামে ব্যালটে সীল মারা হয়েছে, ব্যালটের সিরিয়ালের সাথে কোন মিল ছিল না। আমি অনতি বিলম্বে পুননির্বাচনের দাবী করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top