আওয়ামী লীগের নোয়াখালী জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন একরাম

AKram.jpg

একরামুল করিম চৌধুরী। ছবি ফেইসবুক।

নোয়াখালী প্রতিনিধি ।।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার আলোচিত মেয়র সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির ছোট ভাই  আবদুল কাদের মির্জার বিগত ৬ মাসের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দীর্ঘদিনের কমিটিহীন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

গত ৬ মাসর নানা বিতর্ক আলোচনা সমালোচনার মধ্যে অবশেষে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘বর্তমান নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের অননুমোদিত কমিটির সভাপতি খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিমকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।

দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ অননুমোদিত কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী নবঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিতে থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটি প্রকাশ করা হলে সেটা দেখা যাবে।

২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জেলা সম্মেলনে কাউন্সিল ছাড়াই প্রথম অধিবেশনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যের শেষের দিকে সাবেক সভাপতি খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিমকে সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এরপর বারবার পূর্ণাাঙ্গ কমিটি দলের দপ্তরে জমা হলে আত্মীয়করন ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে জাসদীয় কমিটি করার প্রতিবাদ ওঠলে কোনো বারই কমিটির অনুমোদন পায়নি। জেলার এক নেতার মনগড়া খসড়া কমিটি জমা দিলে তা নিয়ে বারবার বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ফলে সম্মেলনের দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।

এরই মধ্যে নোয়াখালী ও ফেনী জেলার দুই নেতার অপরাজনীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেন দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারীর ছোট ভাই বসুরহাট পৌর মেয়র প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল কাদের মির্জা। তিনি দলবাজী, টেন্ডারবাজী, নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য, চাঁদাবাজীসহ নানা অপরাজনীতির জন্য নোয়াখালী ও ফেনী জেলার দুই নেতার অপসারণের দাবি তোলেন। আবদুল কাদের মির্জার এহেন দাবি শুধু নোয়াখালী ও ফেনী জেলার রাজনীতিতে নয় সারা দেশের আওয়ামী রাজনীতিতে সমাদৃত হয়। দিনে দিনে আবদুল কাদের মির্জা আওয়ামী মাঠ রাজনীতির নেতাদের আইডল হয়ে ওঠেন।

বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা  উদ্যোগ নিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। বিষয়টি গড়িয়েছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত। এখন এই কমিটির জটিলতা নিরসনে একাধিক বিকল্প চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। কাটছাঁট করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে স্থানীয় নেতাদের একমত করার চেষ্টা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তা না হলে শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনা বা বর্তমান কমিটির পরিবর্তে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার গত ৬ মাসের টানা আন্দোলন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর অপরাজনীতির বিরুদ্ধে।  তিনি একরামুল করিম চৌধুরীর সমালোচনা করে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন। এসব নানান ইস্যুতে নোয়াখালীর রাজনীতি অস্থির হয়ে ওঠে। বেশ কয়েক দফায় দু’পক্ষের মারামারির ঘটনাও ঘটে। এমনকি দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন এক নবীন সাংবাদিকসহ দু’জন। দাবি ওঠে একরামুল করিম চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার।

সর্বশেষ দলীয় একটি সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত, গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বৈঠকে আহ্বায়ক কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ? অভিযোগ ওঠায়, অননুমোদিত কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে একরামুল করিম চৌধুরীকে দলের দায়িত্ব থেকে বাদ দেয়ার  সিদ্ধান্ত হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে নোয়াখালীর রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে তোলা হবে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দীর্ঘদিন ধরে নেই। এটার একটা সমাধান আমরা দ্রুত করে ফেলব। তিনি বলেন, যেসব জেলাতে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা ভুল বোঝাবুঝি ছিল তা দূর করতে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলার নেতাদের নিয়ে বসেছি। আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে ফেলতে পারব।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবন ক্লাবে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে এতে টিমের সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার সঙ্গে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বুধবার বিভাগীয় টিমের মিটিংয়ে নোয়াখালীর বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। মিটিংয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কাউন্সিল করা, বিদ্যমান দ্বন্দ্ব/বিভেদ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর করা হবে এবং বিভিন্ন নেতাকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনা করে সংকট নিরসন করা হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের একটি সূত্রের দাবি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে সমস্যার সমাধান সহসাই হচ্ছে না। শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পেলে সেখানে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি করা হতে পারে। চলতি মাসের ২০ তারিখের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সম্মেলনে যাচ্ছেন। তার আগে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানেই এই কমিটি নিয়ে বিভাগীয় টিমের রিপোর্টের পরে চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা আসতে পারে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত কমিটি জমা হওয়ার পর থেকেই কাটছাঁট করে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি তৈরির কাজ করছিলেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরই মধ্যে সেখানে স্থানীয় বিরোধ আরও জটিল হয়ে ওঠে। পরে আর এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

চলতি বছরের ২৮ জুন নোয়াখালী আওয়ামী লীগের চলমান সংকট নিয়ে জেলার অননুমোদিত কমিটির সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে সে সময় অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছি। দলীয় কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। কমিটির বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের নেগেটিভ-পজিটিভ সবই তিনি দেখবেন এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top