১০ ডিসেম্বর ঘিরে নমনীয় সরকার, সন্দেহ বিএনপির

bnp101222.jpg

সীমান্ত চৌধুরী ।।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ। বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে নমনীয় সরকার। জনভোগান্তি এড়িয়ে দলটি যেন রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারে, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ। বিএনপি সমাবেশের সুবিধা বিবেচনায় ৮ ও ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে সংগঠনটির সম্মেলন হবে ৬ ডিসেম্বর। সম্মলনের পরপরই ভেঙে ফেলা হবে মঞ্চ। বিএনপির সমাবেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। তবে বিএনপির নেতারা বলছে, উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়ার পেছনে সরকারের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। ফলে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় দলটির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির টার্গেট ২৫ লক্ষ লোকের সমাবেশ করা। অথচ সমাবেশ করতে চায় নয়াপল্টনের রাস্তায়। এই রাস্তায় কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্ষন্ত জনসমাবেশ করা যাবে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মানুষের। ঢাকায় লক্ষাধীক লোকের সমাবেশ করতে হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকল্প নেই।

জানা যায়, সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে এখনো মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি ও সরকার। দলটির মহাসমাবেশের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নির্ধারণ করা হলেও নাখোশ বিএনপি। তারা নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। ফলে দিন যতই এগুচ্ছে, ততই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি সমাবেশ করতে রাজি না হওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করছে আওয়ামী লীগ দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছে, নয়াপল্টনে সমাবেশের নামে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির পাশাপাশি আগুন-সন্ত্রাসের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খা পরিস্থিতি অবনতি ঘটাতে চায় বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, দুই কারণে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় না। এক বিএনপির সমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিয়ে সন্দেহ আছে। যেমন হাক-ডাক দিচ্ছে, তেমন জমায়েত হবে না। দুই- বিএনপি পল্টনের মতো ছোট স্থানে সমাবেশের নামে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির পাশাপাশি আগুন-সন্ত্রাস করতে চায়। দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়। নইলে কেন তারা পল্টনের মতো ছোট স্থানে সমাবেশ করতে চায়? কারণ তাদের সভা-সমাবেশ মানেই আগুন, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করা। তিনি আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অনেক বড় জায়গা। সেখানে আওয়ামী লীগও ১০ লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত করেছিল। তা হলে বিএনপির সমস্যা কথায়?

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকায় যে কোনো রাজনৈতিক দল সভা-সমাবেশ করলে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী। তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে ঢাকায় যাতে কোনো ধরনের যানজট তৈরি না হয়, সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। তারা চান, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হোক। এজন্য দলটির সমাবেশের দুদিন আগে থেকে উদ্যানে কোনো রাজনৈতিক দল যেন সভা-সমাবেশ করতে না পারে, ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন করে, নতুন তারিখ নির্ধাণের জন্য ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোনো রাজনৈতিক দলের একার নয়। সেখানে দেশের যেকোনো রাজনৈতিক দল নিজেদের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করতে পারে। শান্তিপূর্ণভাবে কোনো দল সেখানে সমাবেশ করলে আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই। তাদের দাবি, শহরের যে কোনো স্থানে বড় সমাবেশ হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়। দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। সেই বিবেচনায় সব দলের উচিত উদ্যানে সভা-সমাবেশ করা।

এদিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কারণ প্রসঙ্গে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। নয়াপল্টনে এর আগেও আমাদের সমাবেশ হয়েছে। মহাসমাবেশ হয়েছে কোনো সমস্যা হয়নি। এবারও কোনো সমস্যা হবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না যাওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ওইখানে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কর্মসূচি রয়েছে। ৮ ও ৯ তারিখেও তাদের সমাবেশ হবে সেখানে। তাহলে কিভাবে আমরা ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশের প্রস্তুতি নেব। এটা সাংঘর্ষিক হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থায়ী অনেক স্থাপনা নির্মাণ হওয়ায় জায়গাও ছোট হয়ে গেছে। তাই ওইখানে সমাবেশ করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। যদিও ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ দুদিন পিছিয়ে ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতির পেছনে সরকারের দুরভিসন্ধি রয়েছে দাবি করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের প্রতিটি সমাবেশ ঘিরে সরকার নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করেছে। ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করেও বাধা দেয়া হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়ার পেছনে সরকারের অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। শাহবাগ মোড়, টিএসসি এলাকায় ছাত্রলীগের সক্রিয় অবস্থান সব সময় থাকে। তারা সেখানে অবস্থান নিলে আমাদের নেতাকর্মীরা বাধার মুখে পড়বে।

তবে বিএনপির সমাবেশের সরকার কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর যেন তাদের সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগের ৮ ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ৬ তারিখে করা হয়েছে। তাদের সমাবেশে সরকার কোনো বাধা দেবে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করা। তারা যদি সমাবেশের নামে আগুন ও লাঠি নিয়ে খেলতে এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেয়া হবে জানান কাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top