বিএনপি’র আন্দোলন নিয়ে মাঠ কর্মীদের হতাশা এবং ক্ষোভ

BNPn-Fak.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক  ।।

বিএনপি’র চলমান আন্দোলন কর্মসূচিকে অপরিকল্পিত, অগোছালো এবং হাফ-হার্টেট বলে মনে করছেন বিএনপির মাঠের নেতাকর্মীরা। এসব কর্মসূচির ফলে বিএনপি নেতাকর্মীরাই বিপদে পড়ছে, সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না। বরং এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের লাভ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

২২ আগস্টের থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন কর্মসূচি আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত মাঠ গরম করে রেখেছে মাঠের নেতারা। কিন্তু মাঠের এই গরম আন্দোলনে যেন জল ঢেলে দিলো কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেছিলো এই আন্দোলনে সরকার লাঠিপিটা করবে বিএনপির মাঠ নেতাদের। কিন্তু টু শব্দটিও করেনি। উপরন্তু পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সারা দেশের হাজার হাজার নেতাকর্মী নতুন মামলার শিকার হলো । ফলে মাঠের নেতারা নতুন ঝামেলায় জড়ালো। কোর্ট কাছারীর ঝামেলা বাড়লো।

বিএনপি এখন ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঢাকায় ১৫টি পয়েন্টে তারা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ করছে। বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা বলছেন যে, জনজোয়ার সৃষ্টির জন্য এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষ জেগেছে এবং এই সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিএনপি’র তৃণমূলের একজন নেতা বলেছেন যে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যে সমাবেশ করা হচ্ছে এই সমাবেশ বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হয়ে যাচ্ছে। এই সমাবেশের ফলে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী বেছে বেছে যারা এই সমস্ত কর্মসূচির উদ্যোক্তা, তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই পুরনো মামলা রয়েছে। কাজেই গ্রেপ্তার করার জন্য নতুন করে মামলার প্রয়োজন নেই। বিএনপির তৃণমূলের নেতা বলছেন যে, এমনভাবে আমাদেরকে চিহ্নিত করে দেয়া হচ্ছে যেন আমরা জেলে যাই। নেতারা জেলে যাচ্ছেন না কিন্তু কর্মীদের হয়রানি হচ্ছে। গত একমাস বিভিন্ন বিএনপি’র বিভিন্ন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে বিএনপির কর্মীরা এখন ঘরে থাকতে পারছেন না বলে ওই নেতা অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, এই ধরনের কর্মসূচি বিএনপিকে কর্মীশূন্য করবে, ভবিষ্যতে কোনো আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দেবে না।

বিএনপি কর্মীরা মনে করছেন যে, এই ধরনের কর্মসূচি অগোছালো এবং অপরিকল্পিত। কারণ, কয়েকটি সমাবেশ করে বিএনপি কি অর্জন করতে পারবে, সরকারের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। বরং এ ধরনের কর্মসূচির ফলে বিএনপি’র শক্তি ক্ষয় হবে, নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন। কারণ, নেতাকর্মীরা সবসময় আন্দোলনের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য চায় এবং একটি ফল চায়। সভা-সমাবেশ করে আর যাই হোক সরকারের পতন ঘটানো যাবে না।

বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছে, এখন সরকারের ওপর একটা আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হচ্ছিলো যে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এখন যখন আমরা সরকারের সাথে সমঝোতা করে সাজানো কর্মসূচি দিচ্ছি তখন সরকারের ওপর এই চাপ আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখছে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিরোধীদলের যে দাবী গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা নেই এবং বিরোধী দলকে জায়গা দেওয়া হয় না সেই দাবি অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।

বিএনপি’র অনেকে নেতাই মনে করেন যে, বর্তমানে যে আন্দোলন সেটি ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। বিএনপি’র একটি মহল সরকারের সাথে প্রকাশ্যে ও গোপনে ষড়যন্ত্র করছে, যে ষড়যন্ত্রের প্রধান বিষয় হলো আওয়ামী লীগকে আরেকবার ক্ষমতায় নিয়ে আসা। এ ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি যখন অযৌক্তিকভাবে পরিণত হবে, তখন এই নেতারা নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে।

আসলে একটি পাতানো খেলার অংশ হিসেবে এবং বর্তমান সরকারকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়ার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এদিকে আমরা বলছি যে সরকারের পতন অন্যদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। তাহলে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, বিএনপি কি করতে চায়। বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে টানাপড়েন তীব্র আকার ধারণ করেছে। দলের কর্মীরা মনে করে যে, একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত ধাপে ধাপে কর্মসূচি হবে। কিন্তু এখন বিএনপি কেন কর্মসূচি দিচ্ছে, কার উদ্দেশ্যে কর্মসূচি দিচ্ছে সেটি স্পষ্ট নয়। এ ধরনের কর্মসূচি আর কিছুদিন থাকলে বিএনপির মধ্যে হতাশা বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top