বিএনপিনেতা ফখরুল ইসলামকে ঘিরে কোম্পানীগঞ্জ বিএনপির আগামীর পথ চলার ভাবনা

F-N.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

৭০-র দশকের কোম্পানীগঞ্জের মাঠ কাপানো সর্বাদিক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। মুজিব কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে যিনি মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। করেছিলেন তেল-জল আর দা-কোমড়া সংমিশ্রন ঐক্য। ১৯৭৮ সালে নবরুপে জন্ম নেয়া ছাত্রশিবিরের দায়িত্ব নিয়ে এক বছরেরর মাথায় মুজিব কলেজ ক্যাম্পাসে শীর্ষ ছাত্রসংগঠনে আত্ম প্রকাশ করে নিজেকে জানান দিয়েছেন একেবারে চরাঞ্চাল থেকে ওঠে আসা তারুণ্যে ভরা টগবগে এক যুবক। নাম যার ফখরুল ইসলাম। পারিবারিক নাম ফারুক।

১৯৭৯ সালের ছাত্রসংসদের সে নির্বাচনে মুজিব কলেজের দাপটের ছাত্রসংগঠন জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রক নেতাদের কপালে ভাজ পেলে দিয়েছিলেন ফখরুল-অহিদ-বকুল পরিষদের নেতা ফখরুল ইসলাম। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তৎকালীন সরকারের চরম প্রতিপক্ষ হয়ে কলেজ সংসদে একক আধিপত্য বজায় রাখা জাসদ ছাত্রলীগকে চিন্তায় পেলেছেন।। সে সময়ে ফখরুল ইসলামদের ঠেকাতে জাসদ ছাত্রলীগ হাত মিলাতে বাধ্য হয় চরম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধী মুজিববাদী ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। ত্রি-দলীয় ঐক্য করে হারাতে হয়েছে ফখরুল ইসলামকে। সে হারের জেরে চরম মূল্য দিতে হয়েছে মুজিববাদী শাহাব উদ্দিনকে।

সে দিনের সে হার ফখরুল ইসলামকে কঠোর করে দেয়। ছেড়ে দেন নিজ এলাকা। দলীয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। চট্টগ্রাম থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে চাকুরীতে যোগদেন। ইবনেসীনার পিআরও থেকে আজ কর্পোরেট গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। রাজনীতির মতো ব্যবসায়েও সফলতা পান অল্প সময়ে। হাউজিং, বীমা, স্বাস্থ্য খাতের একজন বড় ব্যবসায়ী। প্রায় ডজনখানেক বড় কোম্পানীর কর্ণধার ফখরুল ইসলাম।

দীর্ঘ রাজনৈতিক রিরতির পর ১৯৯১ সালে নাছের সাহেব ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের হাতে তুলে দেন ফখরুল ইসলামকে। সে থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রতিটি বিজয়ে ফখরুল ইসলামের মানসিক, শারিরিক ও অর্থনৈতিক যোগসূত্র ছিলো সর্বাধিক। কোম্পানীগঞ্জের বিএনপি জামায়াত ঘরনার সব নেতাই কারনে অকারনে ফখরুল ইসলাম অনুসারি হয়ে ওঠেন। কিন্তু ফখরুল ইসলাম কখনও বিএনপি কোন কমিটিতে যেতে চাননি। এক সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ চাইলেও তিনি সম্মত হননি। কোন দলে না থেকেও কমিটিতে না থেকেও ফখরুল ইসলাম ২০০৮ সালে ৪ দলীয় জোটের উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনয়ন পান। স্বয়ং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ফখরুল ইসলামের মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

পরে বিএনপি জামায়াত ঘরনার ফখরুল ইসলামের জনপ্রিয়তা ভালোভাবে নিতে পারেননি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ফলে স্নায়ূ যুদ্ধ চলে দুজনের। তৈরি হয় রাজনৈতিক দূরত্ব। ২০১৮ সালে ফখরুল ইসলাম বাদে জাতীয় নির্বাচনে জামানত হারান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। হতাশ হয়ে পড়ে বিএনপি নেতা কর্মীরা। এসময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একক আধিপত্যের ভিড় নড়বড়ে হয়ে য়ায়। সেটি ষোল আনা রূপ নেয় মাঠ কর্মীদের সাথে আলোচনা ছাড়া ব্যক্তিগত প্যাডে নিজের মত করে স্থানীয় কমিটি ঘোষনা দেওয়ায়। ফখরুল ইসলামের সাথে সখ্যতার অজুহাতে দলীয় পদ হারান সাবেক সেক্রেটারী নূর আলম সিকদার, আনছার চেয়ারম্যান, চরপার্বতীর নূরু চেয়ারম্যান, রামপুরের কাজী একরামসহ দুই ডজন নেতা।

এহেন কমিটির বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ হয়। হয় পাল্টা কমিটি। এমনকি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে অবাক করে দিয়ে বিক্ষুদ্ধ নেতা কর্মীরা দিনের আলোতে ফখরুল ইসলামের সাথে দেখা করে দলীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেয়ার অনুরোধ করেন।

চলতি বছরের প্রথম দিকে ঢাকা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মেট্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফখরুল ইসলামের ব্যক্তিগত সফরকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিক্ষুব্ধদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সারাদিন দফায় দফায় উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা ফখরুল ইসলামের বসুরহাটের বাসভবনে এসে জড়ো হলে এ মিলনমেলার সৃষ্টি হয়।

জানাগেছে, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে সংসদীয় নোয়াখালী-৫ আসন গঠিত। এ আসনে দীর্ঘ ২৩ বছর জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজ বলয়ের লোকজনকে দলের কমিটিতে স্থান দিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগ নেতা তাঁর জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। এদের বেশির ভাগের দলে গ্রহণযোগ্যতা নেই। এসব কমিটি জেলা বা কেন্দ্র অনুমোদন করেনি।

গত কয়েক বছর ধরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূলের পছন্দে নতুন কমিটি দেয়ার দাবী উঠলেও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কমিটি পুনঃ গঠনের কথা বলে পুরোনো সবাইকে বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করে নিজের প্যাড়ে ঘোষণা দেন। পরে স্থানীয় বিএনপির বিক্ষোভের মুখে সেই কমিটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

বর্তমানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চাপিয়ে দেয়া কমিটি বাদ দিয়ে তৃণমূলের পছন্দের ভিত্তিতে নতুন কমিটি চায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা। সেই লক্ষ্যে ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব ফখরুল ইসলামকে কোম্পানীগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিকে বেগবান করতে সক্রিয় অংশগ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। এসব নেতাদের ধারনা বয়সের কারনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মাঠ রাজনীতিতে সময় দেয়ারও সুযোগ নেই।

আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে দলের জন্য কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, কমিটিতে স্থান পাওয়ার চাইতে প্রথম কাজ হচ্ছে দলকে শক্তিশালী করা। সেই লক্ষ্যে যারা কাজ করবে তাদের সার্বিক সহযোগিতায় তিনিও সহযোগি হবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে তিনি দলের ক্রান্তি লগ্নে মতবিরোধ না করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top