বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন : আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দল চরমে

59389849_2264159510306569_3421825097835479040_n.jpg

আবদুল কাদের মির্জা (আওয়ামী লীগ) নূরুল আলম সিকদার ও আবদুল মতিন লিটন (বিএনপি)

মোহাম্মদ মকছুদের রহমান মানিক ।।

নোয়াখালীর ভিভিআইপি উপজেলা খ্যাত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে সবসরকারেরই মন্ত্রী ছিলো এ উপজেলায়। কারণ আমাদের নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ দেশের সব কটা দল করেছেন। এরপর গত ১৮ বছর কোম্পানীগঞ্জের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জের মাটিতেই বেড়ে ওঠা জাতীয় নেতা ওবায়দুল কাদের।

দেশের সব নির্বাচনে সচেতন মানুষদের চোখ থাকে কোম্পানীগঞ্জের দিকে। আসলে নোয়াখালীর অঘোষিত জেলা সদরই কোম্পানীগঞ্জ। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসনও সর্বাদা সজাগ থাকে কোম্পানীগঞ্জকে নিয়ে।

আসন্ন পৌর নির্বাচন নিয়ে এবারও জেলাবাসীর চোখ কোম্পানীগঞ্জের দিকেই।  কোম্পানীগঞ্জের থানা সদর নিয়েই গঠিত বসুরহাট পৌরসভা। এটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষর বাস পৌর এলাকায়। ভোটার রয়েছে প্রায় ২৯০০০ (ঊনত্রিশ হাজার)।

তিন হাজার কোটিপতির এলাকা কোম্পানীগঞ্জ। বাংলাদেশের প্রায় সবকটি তফসিল ব্যাংকের শাখা রয়েছে বসুরহাট পৌসভায়। পৌর এলাকায় বিত্তবান মানুষের সংখ্যা নগন্য হলেও সব বিত্তবানরাই মাথা গামন পৌর নির্বাচন নিয়ে। এর আগেও মওদুদ সাহেবের সাথে বিরোধ করে কয়েকজন ব্যবসায়ী একজন সতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে নেমে ক্ষমতাসীন মওদুদ সাহেবকে আওয়ামী মুখাপেক্ষি করতে বাধ্য করেছেন। সেবার মওদুদ সাহেব সমঝোতায় না গেলে তার প্রার্থী (সে সময়ের সরকার দলের) জামানত হারাতেন। দলীয় সমঝোতা করতে না পারলে এবারও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন মওদুদ সাহেব।

সম্প্রতি ২৩৪ পৌরসভার নির্বাচনী তালিকায়  প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা বসুরহাট পৌরসভার নাম রয়েছে। গণমাধ্যমে খবর আসার পর থেকেই বিএনপির দলীয় বিভক্তি চাঙ্গা হতে থাকে। ২০০৮ সালের উপজেলা নির্বাচনে ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদের নিজ হাতে মনোনয়ন জমা দেয়া বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ফখরুল ইসলাম বিএনপির মাঠ পর্যায়ের বড় অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আসন্ন পৌর নির্বাচনে এবারও দলের উপজেলা সেক্রেটারীকে মেয়র পদে প্রার্থী করে চমক দেখাতে চান।

অন্যদিকে  মেয়র পদে আওয়ামী লীগে আবদুল কাদের মির্জার  বিকল্প প্রার্থী না থাকায় বর্তমান মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকেই দলীয় মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন ঐক্যজোট হয়ে কোমর বেধে নেমেছেন যেন ভোটের প্রতিযোগিতায় আবদুল কাদের মির্জার কাছাকাছি কেউ না আসতে পারে।

এদিকে বিএনপির কোন অংশই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না দিলেও ফেইসবুক সাংবাদিকদের সুবাদে বিএনপর একধিক প্রার্থীর নাম সামিজিক মিডিয়ায় এসেছে। অতি সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকও বিএনপির দুই প্রার্থীর নাম এনেছে। এর আগে জাতীয় পাক্ষিক নোয়াখালী মেইল পত্রিকাও  বিএনপির একাধিক প্রার্থী হবে এমনটাই বলেছে।

তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থী নিয়ে বিএনপির জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে এবার দলীয়ভাবে সমঝোতা না করে ফখরুলকে এড়িয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রার্থী দিলে চরম বেকায়দায় পড়তে পারেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঘোষিত মেয়র প্রার্থী জামানতও হারাতে পারেন।

২০০৪ সালেও বিএনপি’র ক্ষমতার সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আইনমন্ত্রী থাকাবস্থায় দলে সমন্বয় না করে প্রার্থী দেয়ায় উনার প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরীর বিপরীতে পৌরসভার বাহির থেকে নিয়ে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রফেসর মোহাম্মদ আলী যে চমক দেখিয়েছেন তা আজও পৌরবাসীর মনে আছে। এবারও স্থানীয় বিএনপি দলীয়ভাবে সমঝোতা না করতে পারলে বিএনপি’র মওদুদ বিরোধী অংশটি উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম শিকদারকে প্রার্থী দিয়ে নতুন চমক সৃষ্টির ইঙ্গিত দিয়েছেন।  নুরুল আলম শিকদারের ভোটার পরিবর্তনের আভাসও দিয়েছে দলের সূত্রটি।

সামাজিক মিডিয়ায় মওদুদ আহমদ অংশের বিএনপির মনোনীত বিএনপি প্রার্থী হিসেবে এবারও কামাল উদ্দিন চৌধুরীর নাম শোনা গেলেও  তিনি নির্বাচন করতে চান না এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন একাধিক মিডিয়াকে। সেই ক্ষেত্রে সাবক ছাত্রনতা পৌর বিএনপি’র অননুমোদিত কমিটির সভাপতি ও বসুরহাট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন লিটন-এর নামও বেশ আলোচিত হচ্ছে।

স্থানীয় বিএনপি দলীয়ভাবে সমঝোতায় না আসতে পারলে বিএনপি’র অপর বিদ্রোহী অংশটি চমক নিয়ে মাঠে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদের দাবি, মুছাপুরের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম শিকদারকে প্রার্থী দিয়ে নতুন চমক সৃষ্টির বিষয়টি অমূলক নয়। এজন্য নুরুল আলম শিকদারের ভোটার পরিবর্তনের আভাসও দিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্রটি। এ নিয়ে বসুরহাট পৌরসভায় চায়ের দোকান সহ শহরের অলিতে-গলিতে চায়ের টেবিলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

তবে বসুরহাট পৌর নির্বাচন নিয়ে বসুরহাট পৌরসভার ভোটরদের মুখে আলোচনা না থাকলেও সামাজিক মিডিয়ায় ফেইসবুক সাংবাদিকরা ঝড় প্রবাহমান রেখেছে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top