উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

image-236638.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে সড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। নৌপথ সচল করছে, নতুন অঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করে রেলওয়ে যোগাযোগ বাড়ানোর কাজ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে পণ্য পরিবহনের সুবিধা হয়। আর সুফল হিসেবে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এই মহাসড়কটি এলাকাবাসীর জন্য উপহার।’

হাওরের বিস্ময় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার মহাসড়ক। হাওরের বুক চিরে ৮৭৪ দশমিক ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। ২৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে ৫৯০ দশমিক ৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসি গার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯ দশমিক ৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এবার তা চলাচলের জন্য উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের কোনো অঞ্চলের মানুষ অনুন্নত থাকবে না উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো হবে। হাওর এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা ও গড়ে তুলতে চায় সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি উপজেলার এক একটি বৈশিষ্ট্য আছে। এক এক এলাকায় বিভিন্ন পণ্য বিশেষভাবে উৎপাদিত হয়, উৎপাদিত পণ্য যেন বাজারজাত হয়, যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তারা যেন ন্যায্যমূল্য পায়, আমরা তারই ব্যবস্থা করতে চাই। এজন্য দরকার সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন। অর্থনৈতিকভাবে মানুষ যেন আরো উন্নত হয়, সমৃদ্ধিশালী হয়, সেটাই করতে চাচ্ছি। এখন এ হাওরে মহাসড়ক হয়েছে। এখানকার পণ্য দেশের অন্যান্য প্রান্তেই নয়, বিদেশেও রফতানি হবে।

হাওরবাসীর অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন শুধু মাছ তুলবে না, মাছ যেখানে রাখবে, মাছ সংরক্ষণ করার জন্য বরফকল থেকে বাকি সবকিছু করেছি। কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ এই তিন জেলায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ মহাসড়কটি নির্মাণের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়ে যাবে। ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মানুষ আগে যে কষ্টভোগ করতেন, সেটা আর ভোগ করবেন না।’

এ অঞ্চলের মানুষ এখন নাসিরনগর বা ভৈরব হয়ে দ্রুত ঢাকা যাতায়াত করতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মহাসড়ক নির্মাণ করে একটি দুর্দান্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’

এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে এমন মহাসড়ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির অনুপ্রেরণা ও উদ্যোগের কারণে রাস্তাটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মুজিববর্ষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এ রাস্তা উপহার হিসেবে দিয়েছি।’

আসন্ন শীতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ থেকে শুরু করে অক্সিজেনের ব্যবস্থা এবং সব ধরনের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। তা ছাড়া আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় দুই হাজার ডাক্তার ও তিন হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি, আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি।

এ সময় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে দৃপ্তকণ্ঠে বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, ইনশাল্লাহ।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। শুরুতে উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পের ওপর ভিডিও চিত্র ও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেসসচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অডিটরিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মিঠামইন প্রান্ত থেকে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল হক, অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চু, ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী। পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাজাহান ও সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, মিঠামইনের উপজেলা চেয়ারম্যান আছিয়া আলম, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top