বুর্জোয়া দলগুলের সাথে বাম প্রগতিশীল দাবীদার দল গুলোর জোট, ফ্রন্ট, ঐক্য করে জনগনের কি লাভ হলো ?

110318752_139320477808604_2083881834730532594_n.jpg

মাহবুবুর রহমান বাবুল ।।

আমাদের দেশের বামপন্থী দলগুলো বরাবার বলে থাকে তারা সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে থাকেন। আবার প্রগতিশীল দাবীদারদের একই সুর জনগনের শাসন কায়েমের তাদের আন্দোলন আর সংগ্রাম । ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর দৃশ্যত ১২  জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও তার পর সেই পাকিস্তানি ভাবধারার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই পুঁজিবাদী ধ্যান ধারনায় আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করলো।

১৯৭৩ সালে এ দেশের প্রাচীন বাম দল কমিউনিস্ট পার্টি বুর্জোয়া ধারার দল আওয়ামীলীগের সাথে ত্রিদলীয় জোট করে তাদের সহযোগী হিসাবে বাকশাল সৃষ্টির আগের দিন পর্যন্ত টিকে ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কে দিয়া তাদের আদর্শের এক কানা কড়ি পরিমানও বাস্তবায়ন করাতে পারলো না।

তারপর সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান তার শাসন ক্ষমতা গনতান্ত্রিক খোলস পরানোর কৌশল শুরু করলো তখন চীনপন্থী বাম দলগুলো হুমড়ি খেয়ে তার পক্ষ নিলো, কেউ কেউ নিজের দল গুছিয়ে জিয়াউর রহমানের জাগদলে পরবর্তী জাতীয়তাবাদী দলে একাকার হয়ে গেলেন । আবদুল মান্নান ভূঁইয়া , কাজী জাফরের মত বাম দাবীদাররাও জিয়ার সাথে গাটছাড়া বেঁধেও সাধারণ জনগনের কল্যাণে একটি আইনও পাশ করাতে পারলেন না, বরাবরই পূঁজিপতি বুর্জোয়াদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় আইন পাশ হলো।

জিয়ার পরবর্তী কালে এরশাদ যখন জিয়ার কায়দায় সামরিক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়া নির্বাচন ঘোষনা করলেন , তখন কেউ কেউ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও আবার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলেন ! সে সময়ে রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জাসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দৃশ্যত এরশাদের পক্ষে সাফাই গাইলেন ! গৃহ পালিত বিরোধী দলের তকমা পেলেন ! এরশাদকে দিয়া জাসদ তাদের ধ্যান ধারনার কোন আইন পাশ করাতে পারলেন না, একমাত্র প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ এর নামে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা তথা জেলা, উপজেলা পরিষদ আইন পাশ করিয়েছিলেন , সেটা শেষ পর্যন্ত নখ আর দাঁত হীন বাঘে পরিণত হলো।

১৯৯০ এর গণঅভূত্থানে ডান বাম একাকার হয়ে এরশাদ কে হটিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা স্বভাবসিদ্ধ পাকিস্তান পন্থী ও ডান পন্থা তথা পুঁজিবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করে চললেন। যে কথিত বামেরা খালেদা জিয়ার পক্ষ নিলেন তাদের চর্বিত আমের আঁটি চোষা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না !

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী দলীয় প্রধান আসম আবদুর রব এক্যমতের সরকারে যোগ দিলেন, আবার মন্ত্রীও হলেন। দৃশ্যত তিনি জনগনের স্বার্থে সরকারকে দিয়ে কোন আইন প্রনয়ন করাতে পারলেন না! নিজেও অসহায় হয়ে পড়লেন! ” আমি কি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ” এমন অসহায় উক্তি প্রমান করেছিলো তিনি নিজেও স্বাধীন ভাবে তার মন্ত্রনালয়ের কাজ করতে পারছিলেন না !

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে তারা চরম ডানপন্থী কায়দায় রাজকারদের মন্ত্রী বানিয়ে সেই পূঁজিপতি দের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করলেন । সেনা সমর্থিত তত্বাধায়ক সরকার দুই বছর কালের মত সময়ে কিছু টা জনগনের কল্যাণমূখী অধ্যাদেশ জারী করে দেশ পরিচালনা করলেও সাংবিধানিকভাবে কোন আইন প্রননয়ন তাদের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতাসীন হলেও সেই একই ধারায় দেশ পরিচালিত করতে থাকলেন , সাধারণ জনগণের কল্যাণমূখী কোন আইন প্রনয়ন বা অধ্যাদেশ জারী করলেন না, তারপর ২০১৪ ও ২০১৯ এক তরফা নির্বাচনে তারা তাদের ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন । সেই পুরানো কায়দায় আর সেই ধনিক বনিক শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষা করে চলছে!

বিগত ৪৮ বছর বামপন্থী বা প্রগতিশীল দাবীদারদের এ ডিগবাজিতে সাধারণ জনগনের কোন কল্যাণতো হয়নি বরঞ্চ নিজেরা বহুধা বিভক্ত হয়েছেন, আর এ বিভক্তি কোন আদর্শিক কারনে হয়নি। হয়েছেন ব্যক্তিগত স্বার্থ ও ইর্ষার কারনে! নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন জাসদ, ওয়ার্কাস পার্টি , ইউপিপি, বাসদ বার বার ভেঙ্গে ব্যক্তি স্বার্থ আর ইর্ষা, নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে উদীয়মান সূর্য ছিল জাসদ, এত বেশী দেশ প্রেমিক কর্মী বাহিনীর দল ১৯৪৭ সালের পর এ উপমহাদেশে আর জন্ম লাভ করেনি। এত বেশী কর্মী বাহিনী হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়নি এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে কোন দলের। অথচ সে দলটি আজকে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে কিছু নেতার ভুল সিদ্ধান্ত, লেজুড়বৃত্তি ও ব্যক্তি স্বার্থ, ইর্ষার কারনে ! সামনে আরেকটি ভাংগনের সংকেত শোনা যাচ্ছে। মুখে জনগনের স্বার্থের কথা বললেও বেশীর ভাগ কেন্দ্রীয় নেতার স্বপ্ন নিজেদের ঘিরে আবর্তিত ! বিশাল ত্যাগী কর্মী বাহিনী স্থবির নিঃস্তেজ ও সিদ্ধান্ত হীনতায় নিপতিত !

বিগত ৪৮ বছর বাম প্রগতিশীল দলগুলোর এ ডিগবাজী, লেজুড়বৃত্তি, বড় পূঁজিবাদী দলগুলোর সাথে জোট, ফ্রন্ট, এক্য গড়ে তুলে জনগণের জন্য কিছুই করতে পারেননি। নিজেদের আম চালা দুটিই হারাতে বসেছেন ! আর একটি জিনিসও প্রমানিত হয়েছে তিন পূ্ঁজিবাদী দলের সাথে জোট, ফ্রন্ট, ঐক্য করে জনগণের কোন কল্যাণ হবে না। তারা ছোট এ সব দলগুলোর নেতাদের৷ বড় পূঁজিবাদী দলগুলোর থানা লেভেলের কর্মীরাও বামনেতাদের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ভাবে ! সামনের কাতার থেকে পিছনে সরিয়ে দেয় ! দুঃভাগ্য ওদের চোখে লজ্জাও আসে না !

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একটি পথ হচ্ছে বাম দাবীদার বা প্রগতিশীল দাবীদারদের একটি কার্যকর ঐক্য, এ ঐক্যে তারা মনে প্রাণে আদর্শে একত্রিভূত হলে একটি তৃতীয় শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারবে, হতাশায় স্থবির হওয়া কর্মীবাহিনী আন্দোলন, সংগ্রামে যোগ দিবে।

পূঁজিবাদী দলগুলোর সরকার হটানোর আন্দোলন বেগবান হবে। একটি কার্যকর নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হবে। সংসদে হোক আর সংসদের বাহিরে হোক এ তৃতীয় জোট সরকারকে জন কল্যাণমূখী আইন, সংবিধান প্রনয়নে বাধ্য করতে পারবে। দুর্নীতিবাজরা তটস্ত থাকবে।
আর যদি বড় দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি , ঐক্য, জোট, ফ্রন্টে থাকেন তাহলে নিজেরা নিঃশেষ হয়ে যাবে অপর পক্ষে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে।

পাপিয়া, শাহেদ, সাবরিনা, সম্রাট, পপুলরা আরও লাখো সৃষ্টি হবে ! এর দায় শুধু ক্ষতাসীনদের ঘাড়ে বর্তাবে তা না। বাম প্রগতিশীলদের ঘাড়েও বর্তাবে। কার্যকর সরকার বিরোধী ভূমিকা না নেওয়ার কারনে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে ।

আসুন বাম প্রগতিশীলরা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এক হই।

লেখক : মাহবুবুর রহমান বাবুল মাঠ পর্যায়ের রাজনেতিক কর্মী ও সেক্রেটরী সাবেক সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চেতনা মঞ্চ, নোয়াখালী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top