নিজস্ব প্রতেবেদক ।।
আইনের ফাঁক ফোকর, কমিশনের স্বাধীনতা, সরকারের নিয়ন্ত্রণ, ল’ ইন ফোর্সের পক্ষপাত, ভোটারদের ভোটের মূল্য বিষয়ে না জানা এতসব ব্যর্থতা ও দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও দেশবাসী দেখতে চায় নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নতুন নির্বাচন কমিশন আজ (১৪ জুন) প্রথম পরীক্ষায় যে বসেছে সেখানে কতোটা সফল হতে পারবে!
পরীক্ষায় পাস না ফেল সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুটা সময়। তবে এ কথাও বলব যে কুমিল্লার ভোটকেন্দ্রে পরীক্ষার পাস করাই শেষ কথা নয়। বিগত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নূরুল হুদা কমিশন সুষ্ঠু করেছিলো সেটা বিএনপিও স্বীকার করেছিলো। এখানে উল্লেখ্য বিএনপি না জিতলে সেবারও কারচুপির নির্বাচনই বলতো। আমাদের দেশের নির্বাচনের ধারাই এমন, জিতলে নির্বাচন ঠিক ছিলো না জিতলে কারচুপি। যেমনটা বাজেটে হয়। নিজেরা বাজেট দিলে উত্তম, স্মরণকালের সেরা বাজেট। আর অন্যরা দিলে গতানুগতিক জন বিরোধী বাজেট। তবে এটা ঠিক যিনিই বাজেট দেন ব্যবসায়ীদের পোয়া বারো। তারা মনে করে বাজেট মানেই দাম বাড়িয়ে দাও।
বাংলাদেশের অতিত বর্তমানের সকল সরকারগুলো অনেক সময় পরীক্ষা না দিয়েও পাস করতে চায়। যেমন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। আবার অনেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নকলও করে টিকে যান। কিন্তু ছোট–বড় প্রতিটি নির্বাচনে যে কমিশনকে ভোটারের কাছে পরীক্ষা দিতে হয়, তাদের কারচুপি করার সুযোগ কম।
এবার কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নির্বাচন নিয়ে কমিশন যতটা গর্জন করেছে, ততটা বর্ষণ তারা দেখাতে পারেনি। অভিযোগ তদন্ত করে বেশ কয়েকজন প্রধান প্রার্থীদের জরিমানা করে কমিশন খুবই ভালো কাজ করেছে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে সেটি প্রতিপালন করতে না পারা তাদের ব্যর্থতা হিসেবেই গণ্য হবে।
আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন সার্বভৌম। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন, তারা সেটা করবে। কমিশন নির্দিষ্ট অভিযোগ ও তদন্তের ভিত্তিতে সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়তে বলেছে। তিনি কী এখতিয়ারে সেই নির্দেশ অমান্য করলেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা উচিত ছিল কমিশনের। কেন তারা সেটি করতে পারলো না? এটাতো জনগণের অজানা রয়েই গেলো।
যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থীর জয়–পরাজয় আছে। যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনি জিতবেন। আর যিনি কম ভোট পাবেন, তিনি হারবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হার–জিতটা ভোটের সংখ্যা বা উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের ওপর। ভোটারদের নির্বিঘ্নে তাঁদের পছন্দসই প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার ওপর। ভোট গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে; যাতে কেন্দ্রের ভেতরে কেউ কারসাজি করতে না পরে কিংবা বাইরে থেকে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে না পারে। এটাই সুষ্ঠু নির্বাচন। আদর্শ নির্বাচন।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোটের পরিবেশ রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পুরো শহরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু সেই সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করতে যে লোকবল দরকার, তা নির্বাচন কমিশনের নেই। নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে জাল ভোট বা কেন্দ্র দখল ভোট বাক্স চিনতাই সম্ভবনা কম থাকবে। ভোট গণনায়ও সময় লাগবে না।
এখন প্রশ্ন হলো এই পরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন টেনেটুনে পাস করবে, জিপিএ–৫ পাবে, না ডাহা ফেল করবে, সেটি জানা যাবে বিকেল চারটায়। নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছে, এটা তাদের প্রথম পরীক্ষা। এর আগে ছোটখাটো বাছাই পরীক্ষা হয়েছে, সেটা ধর্তব্যের বিষয় নয়। তাই দেশবাসীর চোখ এখন কুমিল্লার নির্বাচনে।