কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, লেখক, সাহিত্যিক শহীদ জহির রায়হানের আজ ৯৫তম জন্মদিনে

117665080_3370883316334082_3118531732443437330_n.jpg

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদ জহির রায়হান।

মোহাম্মদ মকছুদের রহমান মানিক ।।

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, লেখক, সাহিত্যিক সাংবাদিক শহীদ জহির রায়হানের ৯৫ তম জন্মদিন দিন। জন্মদিনে জহির রায়হানের প্রতি আমাদের অফুরান শ্রদ্ধা-ভালবাসা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক, জহির রায়হানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বাংলা চলচ্চিত্র ও বাংলা সাহিত্যে প্রবাদপ্রতীম চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক জহির রায়হানের জন্মদিনে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ফেনীর মজুপুরের এ কৃতি সন্তান ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারী ঢাকার মিরপুরে বিহারী ক্যাম্পে তাঁর ভাই প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও অভিনেত্রী শমী কায়সারের পিতা শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন। তাঁর নিখোঁজ রহস্য আজো উদঘাটিত হয়নি।

জহির রায়হান বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী তিনি জানতেন যে দেশকে ভালবাসা এবং তাকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা তার জন্মগত এবং আদর্শগত অধিকার। তাই আমরা জহিরকে দেখেছি এক বহুমুখী ভূমিকায়। এ বেলা সে পাক- মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছে, ওবেলা দেখতাম সাংস্কৃতিক দলের অনুশীলনে স্ক্রিপ্ট পুর্নবিন্যাস করছে। যখন কিছু কিছু লোককে দেখেছি নিজেদের ফিল্মের প্রিন্ট বিক্রি করে আর্থিক সাচ্ছল্য বাগাতে সচেষ্ট, ঠিক তখনি দেখেছি জহিরকে তার ‘জীবন থেকে নেয়া’র ভারতে বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে দান করতে, স্বীয় অর্থকষ্ট থাকা সত্ত্বেও।

ঘরে স্ত্রী সুচন্দা জ্বরে অজ্ঞান, বড় ছেলে অপুও অসুস্থ। জহির ঘরে নেই। স্টুডিওতে। রাত নেই, দিন নেই, ঘুম নেই- ‘স্টপ জেনোসাইড’ তৈরি করছে। ও জানতো বাঙলার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচারই যথেষ্ট নয়। বিশ্বের সকল পরাধীন শোষিত মানুষের সংগ্রামের সাথে বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের একাত্মতা বোঝাতে হবে এই ছবির মাধ্যমে।
আমরা আজ তাঁর ৯৫তম জন্মদিনে নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবী জানাচ্ছি।

১৯৭০ সালে ‘জীবন থেকে নেয়া’ ১৯৭১ সালে ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘লেট দেয়ার বি লাইট’সহ অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্রের নির্মাতা জহির রায়হান ‘হাজার বছর ধরে’, ‘বরফ গলা নদী’ ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’সহ অনেক দ্রুপদী সাহিত্য গ্রন্থের রচয়িতা।

জহির রায়হানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জহির রায়হান। একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ আর এক সাগর রক্তে কেনা বাংলার আকাশে স্বাধীন সূর্যোদয়ের পর পরই নিখোঁজ বড় ভাইয়ের খোঁজে বেরিয়ে আর কোনোদিন বাড়ি ফিরে আসেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার মৃতদেহের কোনো সন্ধান করা যায়নি।

১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে কলকাতা হতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি ১৯৫৮ সালে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার-এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসংগীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬০ সালে ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি রুপালি জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ মুক্তি দেন। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’তে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেও তিনি অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’র কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ সে সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। জহির রায়হান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ এর ৩০ জানুয়ারি তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্ধানে মিরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। পরবর্তীতে প্রমাণ মেলে যে সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন।

জহির রায়হান বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী তিনি জানতেন যে দেশকে ভালবাসা এবং তাকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা তার জন্মগত এবং আদর্শগত অধিকার। তাই আমরা জহিরকে দেখেছি এক বহুমুখী ভূমিকায়। এ বেলা সে পাক- মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছে, ওবেলা দেখতাম সাংস্কৃতিক দলের অনুশীলনে স্ক্রিপ্ট পুর্নবিন্যাস করছে। যখন কিছু কিছু লোককে দেখেছি নিজেদের ফিল্মের প্রিন্ট বিক্রি করে আর্থিক সাচ্ছল্য বাগাতে সচেষ্ট, ঠিক তখনি দেখেছি জহিরকে তার ‘জীবন থেকে নেয়া’র ভারতে বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে দান করতে, স্বীয় অর্থকষ্ট থাকা সত্ত্বেও।

ঘরে স্ত্রী সুচন্দা জ্বরে অজ্ঞান, বড় ছেলে অপুও অসুস্থ। জহির ঘরে নেই। স্টুডিওতে। রাত নেই, দিন নেই, ঘুম নেই- ‘স্টপ জেনোসাইড’ তৈরি করছে। ও জানতো বাঙলার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচারই যথেষ্ট নয়। বিশ্বের সকল পরাধীন শোষিত মানুষের সংগ্রামের সাথে বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের একাত্মতা বোঝাতে হবে এই ছবির মাধ্যমে। তথ্য সংগৃহীত।

লেখক : সম্পাদক-নোয়াখালী মেইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top