কোভিড ১৯ : আশার আলো দেখাচ্ছে গ্লোব বায়োটেক

Corona-Vaccin-600x337-1.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে আশার আলো দেখাচ্ছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। এখন পর্যন্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিট আবিষ্কারের কথা বলেছে। তবে প্রথমবারের মতো টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে গ্লোব বায়োটেক। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন ডা. আসিফ মাহমুদ। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সিইও ড. কাকন নাগ এবং সিওও ড. নাজনীন সুলতানা। ওষুধ প্রস্তুতকারী গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠানই গ্লোব বায়োটেক।

ডা. আসিফ মাহমুদ মিডিয়াকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা করোনার ভ্যাকসিনে সফল হয়েছি। এনিমেল পর্যায়ে (প্রাণীর ওপর) এটা সফল হয়েছে। এখন আমরা আশা করছি, মানবদেহেও সফলভাবে কাজ করবে আমাদের ভ্যাকসিন। তিনি বলেন, এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজ অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৫ হাজার ৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি। ওইসব সিকোয়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে টিকার টার্গেট নিশ্চিত করি। উক্ত টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে জমা দিয়েছি, যা ইতোমধ্যেই এনসিবিআই কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রকাশিত হয়েছে (এসসেশন নম্বর : এমটি৬৭৬৪১১)। পুরো প্রস্তুত হলে এটি যৌক্তিকভাবে এ ভৌগোলিক অঞ্চলে অধিকতর কার্যকরী হবে বলে আশা করি।

ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে যাব। এরপর আমরা তাদের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। শিগগিরই প্রটোকল তৈরি করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এটি হস্তান্তর করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে প্রযুক্তি এগিয়ে যাওয়ায় আমরাও কম সময়ের মধ্যে আমাদের গবেষণা দাঁড় করাতে পারছি। এ ভ্যাকসিন আবিষ্কারও হয়েছে প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে। আগে উন্নত অনেক দেশেই এ জাতীয় অনেক টিকা আবিষ্কার করতে অনেক সময় লেগেছে। যেমন ১৯০৬ সালে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়। ১১৫ বছরে ওই ভ্যাকসিন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইবোলার ভ্যাকসিন তৈরিতে লেগেছে ২৭ বছর। লাসার ভ্যাকসিন তৈরিতে লেগেছে ৩৯ বছর। আর এখন প্রযুক্তির উন্নতির কারণে খুবই কম সময় লাগছে।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি গত ৮ মার্চ টিকা আবিষ্কারে কাজ শুরু করে। কর্মকর্তারা বলছেন, সবপর্যায় যথাযথভাবে পেরোতে পারলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে টিকাটি বাজারে আনা সম্ভব হবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় কর্মকর্তারা বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আমাদের গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীর ওপর প্রাথমিক ট্রায়াল করেছি। বর্তমানে গ্লোব বায়োটেকের তেজগাঁওয়ের ল্যাবে বাকি কাজ চলছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্বের মানুষ বিপর্যস্ত। তাই অন্য দেশের আশায় বসে না থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে আমরা আমাদের নিয়মিত গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ তৈরিসংক্রান্ত গবেষণাকর্ম শুরু করেছি।

তারা আশা করছেন, আমাদের এ ভ্যাকসিন সফল হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনি দেশের মানুষ সাশ্রয়ে মানসম্মত সেবা পাবে। এখন দেশ এবং দেশের মানুষের উপকারে আসতে পারলেই আমাদের সার্থকতা। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ বলেন, এ টিকাটির সুরক্ষা ও কার্যকারিতা (সেফটি অ্যান্ড ইফিসিয়েসি) নিরীক্ষার লক্ষ্যে আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ সুরক্ষা ও কার্যকারিতা পরীক্ষায় সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।

তিনি বলেন, শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করে নয়, দেশের জন্য কিছু একটা করার জন্যই আমরা নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top