করোনায় কতজন নেতাকর্মী আক্রান্ত ও মারা গেছেন, জানে না কোনও দল

All-Party-Logo.jpg

রাজনৈতিক দলগুলোর লোগো

স্টাফ রিপোর্টার

করোনাভাইরাসে নিজেদের দলের কতজন নেতাকর্মী আক্রান্ত  হয়েছে বা কতজন মারা গেছেন দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে সঠিক সেই তথ্য নেই।
১০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মাত্র একটি দল মোটামুটি পরিসংখ্যান জানাতে পেরেছে। বাকি ৯টি দলের মধ্যে কেউ বলেছে, জেলা পর্যায়ের নেতাদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবার কেউ বলছে, কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব তো চলমান, এ কারণে এখন কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে না। মহামারির প্রভাব কমে এলে জেলা-উপজেলা পর্যায় থেকে তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হবে।

আওয়ামী লীগ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কতজন নেতাকর্মী সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং কতজন মারা গেছে, দলটির কেন্দ্রীয় দফতরে সেই তথ্য এখন পর্যন্ত নেই। তবে জানা গেছে, দলের জেলা পর্যায়ের নেতাদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান মিডিয়াকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা কেন্দ্রীয়ভাবে এখনও আমাদের কাছে নেই। এটা তো চলমান প্রক্রিয়া, জেলা পর্যায়ের নেতাদের তৈরি করতে বলেছি। জেলা নেতৃবৃন্দ বয়স্ক ও অসুস্থ, তারা কিছুটা সময় নিয়ে আস্তে আস্তে তৈরি করছেন। জেলা থেকে তালিকা এলেই আমরা জানাতে পারবো।’ সায়েম খানের কথায়, তাদের অনেক নেতাকর্মী মাঠে থেকে কাজ করে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মৃত্যুবরণকারী নেতাকর্মীদের পরিবারকে কেন্দ্রীয়ভাবে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের যেকোনও নেতাকর্মী বিপদে পড়লে দলের পক্ষ থেকে তাকে সাহায্য করা হয়। তার পরিবারের পাশে দাঁড়াই আমরা। অসচ্ছল নেতাকর্মীদের পরিবারকে দলের পক্ষ থেকে সবসময় সহযোগিতা করা হয়। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, বিশেষভাবে তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে হয়নি।’বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মকবুল হোসেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের (এসসিসি) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ রওশন আলীসহ অর্ধশতাধিকের বেশি নেতাকর্মী।

বিএনপি
সারাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ও মারা যাওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের তথ্য সংগ্রহে করোনা সেল গঠন করেছে বিএনপি। এর সূত্রে জানা গেছে, ৩ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দলটির ৭৬ নেতাকর্মী, আক্রান্তের সংখ্যা ২৮৪ জন। এর বাইরে কয়েকজন নেতা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আব্দুল হক ও সাবেক ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী টি এম গিয়াসউদ্দিন। বিএনপির করোনা সেলের সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন, ‘করোনা আক্রান্ত যেসব নেতাকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের টেলিফোনে সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের একটি টিম রয়েছে। আর আর্থিকভাবে কারও সহযোগিতা দরকার হলে দলের পক্ষ থেকে তা দেওয়া হচ্ছে।’

জাতীয় পার্টি
সারাদেশে কতজন দলীয় নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন সেই হিসাব নেই জাতীয় পার্টির কাছে। দলটির পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনও। জাপার সহ-দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান মিডিয়ার কাছে সহজ স্বীকারোক্তিতে এসব উল্লেখ করে জানান, ‘করোনায় মৃত্যুবরণকারী দলীয় কোনও নেতাকর্মীর পরিবারকেও দল থেকে সাহায্য করা হয়নি।’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জাপার দুই কেন্দ্রীয় নেতা মারা গেছেন। তারা হলেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বাহাউদ্দিন বাবুল, জাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট শাহজাহান তালুকদার। এছাড়া সারাদেশে তাদের কয়েকজন নেতাকর্মীর মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল -জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের-জাসদ জেলা পর্যায়ের তিন নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া জানা গেছে, দলটির কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারাদেশে প্রায় ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন মিডিয়াকে জানিয়েছেন, দলের পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বাচ্চুসহ তিনজন করোনায় মারা গেছেন। আর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আট নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন সুস্থ। এছাড়া সারাদেশে ১০-১২ জন নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্তের তথ্য তিনি জানেন। তার ধারণা, এই সংখ্যাটা আরও বেশি হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
জাপার মতো একই অবস্থা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। তাদের কাছেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দলীয় নেতাকর্মীদের কোনও তথ্য নেই। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেটের ডা. মোয়াজ্জেমের স্ত্রী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এর বাইরে চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জে একজন করে সদস্য মারা গেছেন। তবে সারাদেশে কতজন নেতাকর্মী মারা গেছেন ও আক্রান্ত হয়েছেন সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই। জেলার নেতৃবৃন্দ তালিকাটি তৈরি করছেন, সেটি কেন্দ্রে আসতে কয়েকদিন সময় লাগবে।’ অধ্যক্ষ ইউনুছের দাবি, আর্থিকভাবে অসচ্ছল দলের যেসব নেতাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা মারা গেছেন, দলের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে এর পরিমাণ তিনি জানাতে পারেননি।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) শতাধিকের মতো নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, আর মারা গেছেন একজন। দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স সঠিক হিসাবটা দিতে পারেননি। তবে তিনি জানান, ‘কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারাদেশে শতাধিক নেতাকর্মী আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এসেছে। আর নারায়ণগঞ্জ মহানগর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বিকাশ সাহা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’
সিপিবি’র সম্পাদকমণ্ডলীর এই সদস্য জানিয়েছেন, তাদের চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত নেতাকর্মীদের বিশেষ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোনও নেতাকর্মীর আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা দরকার হলে জেলা পর্যায় থেকে তা দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি আক্ষেপ নিয়ে জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে সেভাবে নেতাকর্মীদের সাহায্য করা হয়নি।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আটজন নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তবে দলটির কেউ মারা যাননি। তাদের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, ‘সারাদেশে করোনা উপসর্গ আছে আমাদের এমন নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন দূরবর্তী উপজেলায় নমুনা পরীক্ষার স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে তারা রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না।’

গণতন্ত্রী পার্টি
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের শরিক দল গণতন্ত্রী পার্টির ১৮ থেকে ২০ জন নেতাকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য মারা গেছেন। তিনি হলেন পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী মিডিয়াকে নিশ্চিত করেন, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চার নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা সবাই এখন সুস্থ। সব মিলিয়ে সারাদেশে ১৮-২০ জন নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছেন তিনি। তার কথায়, ‘আমরা সারাদেশে অসহায় মানুষের পাশাপাশি অসচ্ছল নেতাকর্মীদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি।’

খেলাফত মজলিস
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর চার নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং চট্টগ্রামে একজন কর্মী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তবে সারাদেশে দলটির কতজন নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত সেই পরিসংখ্যান দলটির কাছে নেই। খেলাফত মজলিসের অফিস ও প্রচার সম্পাদক আবদুল জলিল মিডিয়াকে জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রামে দলের কর্মী আবুল কাশেম মারা গেছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর চার নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা এখন সবাই মোটামুটি সুস্থ। এর বাইরে সারাদেশে নেতাকর্মীদের আক্রান্তের তালিকা এখনও তারা পাননি।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি
২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কতজন নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত তার কোনও সঠিক হিসাব নেই। দলটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মিডিয়ার কাছে উল্লেখ করেন, ‘করোনায় আমাদের দলের কোনও নেতাকর্মী মারা যায়নি। তবে সারাদেশে ১৪-১৫ জন নেতাকর্মী আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। মহামারিতে অসহায় মানুষের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।’

সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top