দালাল বাজার জমিদার বাড়ি।
রিয়াজ মাহমুদ বিনু ।।
৩০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার জমিদার বাড়ি। দালাল বাজার সংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম পাশে লক্ষ্মীপুর মৌজায় অবস্থিত প্রাচীন এই জমিদার বাড়িকে ঘিরে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।
অসাধারণ স্থাপত্য শৈলীর নিখুঁত কারুকাজ শোভিত লক্ষ্মীপুরের দালালবাজার জমিদার বাড়ি। যদিও এখন সবখানে গজিয়েছে গাছপালা আর ঝোপঝাড়। জমিদার বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে নানান কৌতূহল। লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের পশ্চিমে ছয় কিলোমিটার দূরে দালাল বাজারে পাঁচ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা জমিদার বাড়িটি দালাল বাজার জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত। তবে এটির প্রকৃত নাম লক্ষ্মী-নারায়ণ জমিদার বাড়ি।
ইতিহাস বলছে, ভারতের কলকাতা থেকে লক্ষ্মী-নারায়ণ বৈষ্ণব নামের এক ব্যবসায়ী লক্ষ্মীপুরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। তার উত্তরসূরিরা ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চলে ইংরেজদের বাণিজ্যিক এজেন্ট ছিলেন। স্থানীয়রা তাদের ব্রিটিশদের দালাল বলে আখ্যায়িত করেন। তখন থেকেই এলাকাটি দালাল বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
জমিদার বাড়ি রাজকীয় প্রবেশদ্বার এখনো চোখে পড়ার মতো। ভেতরে প্রবেশের পর ছাদ না থাকলেও রয়েছে প্রশস্ত অন্দরমহল, অন্দর পুকুর, শানবাঁধানো পুকুরঘাট, লোহার বিম বিরাটাকার লোহার সিন্দুক, নৃত্যশালা ও বহিরাঙ্গন। এগুলো দেখার জন্য এখনো মানুষ ছুটে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। দর্শনার্থীদের এখনো আকর্ষণ করে এসব স্থাপনা। এছাড়া বিশাল বিশাল থাম, সিঁড়ি ঘর, সিংহদরজা, মূল প্রাসাদ ও কাচারি ঘর রয়েছে বাড়িটিতে।
তবে বাড়িটির বেশির ভাগ অংশে ছাদ নেই। বিশাল বিশাল লোহার বিমগুলো নতুনমুখী। যেকোনো সময় নিচে পড়ে যেতে পারে। দর্শনার্থীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ প্রতিটি বিম ঝুলিয়ে আছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল বলেন, জমিদার বাড়িটিকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসে। জেলার সবচেয়ে সুন্দর এবং ঐতিহ্য হচ্ছে দালাল বাজার জমিদার বাড়ি। এই বাড়িটিকে পূর্নাঙ্গ সংস্করণ করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিলে জেলার মানুষের জন্য বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আসতো। আমরা চাই দ্রুত এটিকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা হোক।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, সর্বশেষ ২০২১ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নত্তত্ত্ব অধিদফতরের এই বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ধ্বংসপ্রায় এই বাড়িটি দেখতে অনেকেই আসেন। এখনো পরিকল্পনা আছে, জমিদার বাড়িটিকে নতুন আঙিকে সাজানো হবে এবং পর্যটনের জন্য পর্যটক স্থান হিসেবে তৈরি করা হবে। যাতে লক্ষ্মীপুরের বিনোদনপ্রেমী যারা আছে তারা ঘুরতে পারেন। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানান দিবে।