সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধই সেনাবাহিনীর চেতনার উৎস : সেনাপ্রধান

army-chif-1.jpeg

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চেতনার মূল উৎস হলো সংবিধানের নির্দেশনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির অসীম আত্মত্যাগ থেকে পাওয়া শিক্ষা। এই চেতনায় বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।

২৯ মে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনার জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রাণ উৎসর্গ করা দেশের বীর সৈনিক ও পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, ১৬৮ জন বীর সৈনিক ও পুলিশ সদস্যদের, যারা বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে।’

জেনারেল ওয়াকার বলেন, বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৮৮০ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৩ জন, বিমান বাহিনীর ৩৯৬ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ১৯৯ জনসহ মোট ৫৫১৮ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নয়টি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিজেদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিক মূল্যবোধ ও দক্ষতার প্রমাণ রেখে নিরপেক্ষতার সঙ্গে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি ৩৬৪৫ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ৪৪৪ জন নারী শান্তিরক্ষী সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।’

তিনি গর্বের সঙ্গে জানান, সম্প্রতি কঙ্গো মিশনে একটি হেলিকপ্টার কন্টিনজেন্ট মোতায়ন করা হয়েছে। পেরুর সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের তৈরি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী সরঞ্জাম অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। ক্লিনিক উদ্বোধনে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট এবং সেনাপ্রধান নিজেও উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

এই পর্যায়ে কূটনীতিক ও বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশ্যে ইংরেজিতে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আপনাদের অবহিত করতে চাই, বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তির প্রতি তার সুদৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে, যা প্রতিনিয়ত জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের চেতনার উৎস হলো সংবিধানের নির্দেশনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসীম আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা। আমরা ভবিষ্যতেও বৈশ্বিক শান্তির পক্ষে অবিচলভাবে অটল থাকব।’

এতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর একটি বিশেষ উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস ও ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মো . রুহুল আলম সিদ্দিকী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড . সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি শেষভাগে বক্তব্য দেন এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত বাংলাদেশি সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারেরা, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনীর প্রধানেরা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবেরা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top