অভিযোগ সত্যি হলে পাপুলের আসন খালি হবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

Parlament.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়া হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপলু সম্পর্কে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’সে (এমপি পাপুল) কুয়েতের নাগরিক কি না, সে বিষয়ে কুয়েতের সঙ্গে কথা বলছি। যদি সত্যিই এটা হয়, তাহলে ওই সিট (নির্বাচনী আসন) হয়তো খালি করে দিতে হবে। যেটা আইন আছে সেটাই হবে। তার বিরুদ্ধে এখানেও তদন্ত চলছে।’

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘদিন পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিরোধী দলের অভিযোগের জবাব দিলেন স্বয়ং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে শুরু অধিবেশনে তিনি মানবপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন।

রিজেন্ট হাসপাতাল প্রসঙ্গে:
রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে সংসদে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই ধরেছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অনিয়মগুলো খুঁজে বের করেছি। ইতোমধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই (রিজেন্ট) হাসাপতালের এই তথ্য কিন্তু আগে কেউ দেয়নি, জানাতে পারেনি। অন্য কেউ জানায়নি। সরকারের পক্ষ থেকেই খুঁজে বের করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। র‌্যাব সেখানে গেছে। সেখান থেকে জড়িতদের খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংসদ সদস্য পাপুল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া সংসদ সদস্য পাপুল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’যে সংসদ সদস্যের কথা বলা হয়েছে, সে কিন্তু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। সে কিন্তু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন চেয়েছিল, আমি কিন্তু দেইনি। সে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। গত নির্বাচন ওই আসনটি জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির নোমান (প্রার্থী) নমিনেশন পেয়েছিল, কিন্তু সে নির্বাচন করেননি। এ কারণে ওই লোক (এমপি পাপলু) জিতে আসে। এরপর আবার তাঁর স্ত্রীকেও যেভাবে হোক বানায় (সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য)। কাজেই তাকে এমপি হওয়া কিন্তু আমাদের বানানো নয়। সংসদ নেতা বলেন, এখানে প্রশ্ন উঠেছে ওই সংসদ সদস্য (পাপলু) নাকি কুয়েতের নাগরিক! সে কুয়েতের নাগরিক কি না, সেটা নিয়ে কুয়েতের সঙ্গে কথা বলছি, বিষয়টা দেখবো। যদি এটা হয় তাহলে তাঁর ওই আসনটি (লক্ষ্মীপুর-২) খালি করে দিতে হবে। যেটা আইন আছে, সেটাই হবে। আর তার বিরুদ্ধে এখানেও তদন্ত চলছে।

এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন, সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা সম্পর্কে যে বিষয়টি তা এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি কেউ কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশী রাষ্টের আনুগত্য স্বীকার করে- তাহলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার যোগ্য হবেন না।

এ প্রসঙ্গে কুয়েতে গ্রেফতারকৃত সংসদ সদস্য পাপুল প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকার রেফারেন্স দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কুয়েতের নাগরিক হিসেবে এমপি পাপুল সেখানে গ্রেফতার হয়েছেন। আজকে যদি সত্যিই পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে এ ব্যাপারে স্পিকারকে এর সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। কারণ নিশ্চয়ই পররাষ্ট্র মন্ত্রী তথ্য সংগ্রহ করেই বলেছেন। আর তথ্য গোপণ করে সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্মসহ স্বাস্থ্যখাতের অনিয়মের অভিযোগ করে বিএনপির এই এমপি বলেন, কোভিড টেস্টের অনুমতি দলীয় বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে দুর্নীতি করতে। রিজেন্ট হাসপাতালের যে পরিচালনা বোর্ড রয়েছে, তাদের অগোচরেই কি এসমস্ত অপকর্ম হয়েছে? মানুষের জীবন মরণের সঙ্কটময় মুহূর্তে সরকারের জায়গা থেকে র‌্যাব অভিযান চালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এতে আমরা সন্তুষ্ট নই, এই রকম ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত নয়। তাদের ক্রয়ফায়ারে দেওয়া উচিত। তবে করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

করোনাকালে ত্রাণ সহায়তার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে আমরা সহায়তা দিচ্ছি। তাদের তালিকা বানানো হয়েছে। সেই তালিকা তিন দফা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের আইডি কার্ড ভোটার লিস্টে নাম সবকিছু মিলিয়ে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সবকিছু যাচাই করে সঠিক ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌঁছে দিচ্ছি। এ প্রক্রিয়ায় আমাদের সময়ও লেগেছে। অন্য যে নামধাম (ভুয়া/অযোগ্য) এসেছে, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী : সরকারি দলীয় বেনজীর আহমদ-এর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশী কর্মীরা যাতে করোনা পরবর্তী সময়ে পুনরায় কর্মে নিয়োগ পেতে পারে সেজন্য বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এই অন্তবর্তী সময়ে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আমরা দুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রায় ১১ কোটি টাকার ঔষধ, ত্রাণ ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে চাকুরিচ্যুত হয়ে কিংবা অন্য কোন কারণে বিদেশ ফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছি। এছাড়া, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের এবং প্রবাসে করোনায় মৃত কর্মীর পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে বিনিয়োগ ঋণ প্রদানের জন্য আমরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছি। এ সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র বৈধ ও নিবন্ধিত অভিবাসী মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল হতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। করোনা মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আমরা ৩ লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ হতে প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। তবে এ চাপ প্রশমিত করার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্নমুখী কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ।

শেখ হাসিনা বলেন, চলাচলের অনুমতির বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং কুটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে আমি কতিপয় রাষ্ট্র প্রধান/সরকার প্রধানের নিকট এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করেছি। এছাড়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও এয়ারলাইন্সের আবেদনের প্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিমান চলাচালে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের সরকারের গৃহীত খাদ্য ও চিকিৎসা কূটনীতির আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং ঔষুধ প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত সময়োযচিত কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে ফিরে আসা প্রবাসীর সংখ্যা এখনও কম রয়েছে। আমাদের সরকার ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের টেকসই পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রবাসীদের যথাযথ সহায়তা প্রদানের জন্য একটি ডাটাবেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া, যারা পুনরায় বিদেশে যেতে সক্ষম তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। প্রবাসীদের বিদেশে চাকুরি ধরে রাখা, নতুন নতুন প্রফেশনে যোগদান, কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ এবং এন্টারপ্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে গমনাগমনের সুবিধার্থে আমরা ইতোমধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া এবং এমিরেটসকে বাংলাদেশে নিয়মিত বিমান চলাচলের অনুমতি প্রদান করেছি। তাছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমান চালু করা হয়েছে। মালয়েশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, করোনা চলাকালীন সময়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে প্রাপ্ত ২ লাখ ১৫ হাজার আবেদনের অধিকাংশ পাসপোর্ট মুদ্রণ করে আমরা বিদেশস্থ বিভিন্ন মিশনে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়া পাসপোর্ট না থাকার কারণে বাংলাদেশের কোন নাগরিক যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য যে সকল পাসপোর্ট মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে তা দ্রুত মুদ্রণ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের সংকট নিরসনে সরকার বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শ্রমিক ও অভিবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত ও অন্তত ছয় মাস চাকরিচ্যুত না করতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছি। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার অনুরোধ করা হয়েছে।

সরকারী দলের সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশি কর্মীরা যেন করোনা পরবর্তী সময়ে পুনরায় কাজে নিয়োগ পেতে পারে, সেজন্য সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরো জানান, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে (১২ জুন পর্যন্ত) ১৪ হাজার ৯৫৭ জন প্রবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত এসেছে।

সরকারী দলের আরেক সদস্য আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রভাবে সারাবিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে এর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে অনেক প্রতিরোধ/প্রতিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দ্রুততম সময়ে সঠিক কৌশল অনুসরণ করায় এ পর্যন্ত দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারি বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে এক অভূতপূর্ব সংকটের সম্মুখীন করেছে। উন্নত দেশগুলো এ ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস মোকাবিলায় কোনও কার্যকর টিকা বা চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এ রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং বিস্তার রোধে মাস্ক ব্যবহার, কাশি শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব, হোম কোয়ারেন্টিন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন মেনে চলা ও সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকেই মূল কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা বিস্তাররোধে লকডাউন কার্যকর কৌশল হলেও এই পরিস্থিতি দীর্ঘকাল অব্যাহত থাকলে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতিতে কর্মহীনতা ও দরিদ্রতা লাগামহীন হারে বেড়ে অন্যান্য কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ক্ষয়ক্ষতি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এ দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সমন্বিত জনস্বাস্থ্য প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হন চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’সহ বঙ্গবন্ধুর লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইগুলোর তথ্য তুলে ধরেন। ওই বইয়ের তথ্যগুলো কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছিলেন সেটা বলেন। বঙ্গবন্ধুর লেখা বা তাঁর সংশ্লিষ্ট দেশে-বিদেশের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তা প্রকাশের পরিকল্পনার কথাও এ সময় তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এ প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিকথা নিয়ে নতুন বই প্রকাশের প্রসঙ্গও টানেন।

এ সময় অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র মতো ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা’ নামে আরেকটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা’ একটা লেখা আছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র মতোই উনার জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কিছু লেখা। সেই লেখাগুলো আমি প্রস্তুত করেছি। তা প্রায় তৈরি হয়ে আছে। ওটা আমরা ছাপতে দেবো। আমার ধারণা, এটা ছিল একটি রাফ কাজ। প্রথমে তিনি ওটা করেন। তারপর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রস্তুত করেন ছাপানোর জন্য।

জাতির জনক তার জীবদ্দশায় সন্তানদের বা পরিবারের সদস্যদের কাছে কখনও জেলজীবনের দুঃখ-কষ্টের কথা বলতেন না বলে শেখ হাসিনা সংসদকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি কিন্তু কখনও তাঁর কারাজীবনের কোনও কষ্ট, দুঃখ-যন্ত্রণা কিছুই তিনি বলেননি। যেটুকু আমরা জানি এই বই পড়ে। তার লেখা পড়ে আমরা এটা জেনেছি। এর বাইরে আমরা কিছু জানতে পারিনি। কোনোদিন তিনি মুখ ফুটে বলতেন না যে উনার কষ্ট ছিল। ক্খনও বলেননি। আমি রেহানাকে জিজ্ঞাসা করেছি। ও ছোট ছিল তো, ও মাঝেমধ্যে আব্বাকে এ সমস্ত জিজ্ঞাসা করতো, যা আমরা সাহস পেতাম না। আমি কয়েকদিন আগেও জিজ্ঞাসা করেছি ‘তুই কি কিছুই শুনিস নাই?’ জবাবে বললো ‘আব্বাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বলেছিলেন তোর শোনা লাগবে না। শুনলে সহ্য করতে পারবি না।’ উনার কথা ছিল, ‘শোনার দরকার নেই। আমি বলবো না। তোরা সহ্য করতে পারবি না।’

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এত কষ্ট একজন মানুষ একটা দেশের জন্য, জাতির জন্য করতে পারেন তা ধারণার বাইরে। তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন সংগঠন করার জন্য। আওয়ামী লীগ করার জন্য। দেশের মানুষের জন্য তিনি সব কিছুই ছেড়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। ক্ষমতায় যেতে পারতেন। কিন্তু উনার লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বাধীন করার।

প্রধানমন্ত্রী জানান, কারাগারের রোজনামচা মূলতঃ
১৯৬৬ সাল থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত। ’৭১ সাল থেকে আমরা উনার কোনও লেখা পাইনি। কারণ একাত্তর সালে উনি কারাগারে (পাকিস্তানে)। সেখানে কীভাবে ছিলেন, কী অবস্থায় ছিলেন, আসলে তার কিছু আমরা জানি না। সামান্য একটা লাইন পাওয়া গেছে আইয়ুব খানের ডায়েরিতে, অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত এটা। সেখানে উনার সম্পর্কে কিছু কমেন্ট করা আছে। বঙ্গবন্ধুকে যখন কোর্টে নিয়ে আসা হতো, উনি আসতেন, দাঁড়াতেন, বসতে বললে বসতেন। উনি এসে দাঁড়িয়েই নাকি ‘জয় বাংলাদেশ’ বলতেন। বলতেন ‘আমাকে যা খুশি তাই করো। আমার যেটা করার আমি তা করে ফেলেছি। অর্থাৎ আমার বাংলাদেশ তো স্বাধীন হবেই’। এর বাইরে একাত্তরের কিছু আমি পাইনি। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনও আমার চেষ্টা আছে ওখান (পাকিস্তান) থেকে কোনও কিছু উদ্ধার করা যায় কিনা। আর আমি জেলখানায় ছবি আনতে গিয়েছিলাম। জেলখানা ভেঙে নতুনভাবে করা হয়েছে। ছোট্ট একখানা দেয়ালের ছবি পেয়েছি। আর কিছু পাইনি। তবে আমার চেষ্টা আমি করে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ক্লাসিফাইড রেকর্ড সংগ্রহ করেছি। যেখানে বাংলাদেশের বিষয়টি রয়েছে। সাউথ এশিয়ার কিছু বিষয় আছে। অনেকগুলো কাগজ। বিশাল। এগুলো আমার অফিসে ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে একটা সুবিধা হয়েছে। ঘরে থাকার কারণে সেগুলো সব ধীরে ধীরে দেখছি। সেখানে ওই সময়কার কিছু পাওয়া যায় কিনা সেই চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top