দলীয় প্রতীক ছাড়াই কোম্পানীগঞ্জে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ইউপি নির্বাচন, মেয়র সমর্থিত প্রার্থীরাই এগিয়ে

273457007_1554306668287065_2274379035548107526_n.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

দলীয় প্রতীক না থাকায় জমে উঠেছে কোম্পানীগঞ্জের আট ইউনিয়নের নির্বাচনী মাঠ। প্রার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে আমেজ। পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে এলাকার অলিগলি ছেয়ে গেছে। মাইকের আওয়াজে সরগরম এলাকা। আর শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় দিন-রাত ছুঁটে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। চলছে পথ সভা ও উঠান বৈঠক। এগুলোতে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

বিএনপি নির্বাচনী মাঠে না থাকায় এবারের ইউপি নির্বাচন যতটা পানসে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নে ৩/৪ জন প্রার্থী থাকায় নির্বাচন তার ছেয়ে অনেক বেশি জমে উঠেছে। প্রথমে মনে হয়েছিলো প্রতীক ছাড়া নির্বাচন দলের মাঠ নেতাদের সাথে এ কেমন বৈষম্য। যেখানে সারা দেশে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে দলের সেক্র্রেটারীর নিজ এলাকায় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন তামাশা নয় তো। কিন্তু যতই যাচ্ছে নির্বাচনী আমেজ ভোট উৎসবে পরিনত হচ্ছে।

সারা দেশে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু যে উপজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা, সেই কোম্পানীগঞ্জের ৮ ইউনিয়নে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দলীয় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে! যে কারণে এই নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতাকর্মীর মধ্যে ও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছিলো। তবে সেটি এখন কেটে গেছে।

তবে অনেকে মনে করছেন, গত বছর নোয়াখালীতে বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট এলাকায় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার দ্বন্দ জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নোয়াখালী সদর এবং ফেনী সদর আসনের দুই সাংসদসহ দুই জেলার আরও কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন কাদের মির্জা। এমনকি ওবায়দুল কাদের ও তার স্ত্রীর দিকেও এলাকায় অপরাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্য তাদেরকে অভিযুক্ত করেন তিনি।

ফলে এবারের ইউপি নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার রাজনৈতিক দ্বদ্ধের কারণেই দলীয় প্রতীক বাদ দেয়া হয়েছে কিনা-তা নিয়েও দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, নির্বাচনে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা এড়াতেই দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করা হচ্ছে। কারণ দলীয় প্রতীকে ভোট হলে  কাদের মির্জার কর্মীদের সাথে কথিত আওয়ামী লীগ দাবিদারদের মধ্যে মারামারি ও সংঘাত হতে পারে।

এবারের ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট না হলেও এই নির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি, তবে ভোট করছে বিএনপির মাঠ নেতারা। দলের নামে বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও বেনামে আছে। আবার কয়েকটি ইউনিয়নে জামায়াতের প্রার্থীও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকায় বসুরহাট মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এবং আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাদের পছন্দের আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এদের প্রতিপক্ষ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ও আওয়ামী লীগের আরেক খন্ড অংশ অন্য আটজনকে সমর্থন দিয়েছেন। এছাড়া আরো কয়েক জন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাঠে আছেন।

নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা বলছেন, এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় ভোট কেন্দ্রে কোনো ঝামেলা হবে না। এরপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা তাদের পছন্দের এবং যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের আট ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান পদে আটজন এবং কাদের মির্জা সমর্থিত আটজন ছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রবাসী প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা আটটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৯ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৩০৪ জন প্রার্থীসহ মোট ৪২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের ঘরোয়া বিরোধে চরম উত্তেজনা আর উৎকন্ঠার মধ্যেই আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী কোম্পানীগঞ্জের ৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত ১২ জানুয়ারি মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষদিন পর্যন্ত মোট ৪৫৫ জন পদপ্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪৩ জন। বাকীরা সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও মেম্বার পদে। তবে প্রত্যাহারের পরে একণ ভোট লড়াইয়ে আছেন ৩৯জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এবারের ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন উম্মুক্ত হলেও ঘরের মধ্যে ঘর রয়েছে। ৮ ইউনিয়নের প্রার্থীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই আওয়ামী ঘরনার। দলের উঠতি নেতারাই এবার ভোটের লড়াইয়ে।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে দলের দুই পক্ষের ঘরোয়া মনোনয়ন নিয়ে নেমেছেন ১৬ জন। সর্বশেষ তথ্য মতে মেয়র অনুসারি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা হচ্ছেন, ১নং সিরাজপুরে নিজাম উদ্দিন মিকন, ২নং চর পার্বতীতে বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন কামরুল, ৩নং চর হাজারী ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আবু ছায়েদ মিয়ার ছেলে মাইনউদ্দিন সোহাগ, ৪নং চর কাঁকড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সফি উল্যাহ মিয়া, ৫নং চর ফকিরায় বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন লিটন, ৬ নং রামপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী, ৭নং মুছাপুরে আমেরিকা প্রবাসী আইয়ূব আলী, ৮নং চর এলাহী ইউনিয়নে আবদুল মালেক।

অন্যদিকে মেয়র বিরোধীরাও সব কয়টি ইউনিয়নে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থী দিয়েছেন, তারা হচ্ছেন: ১নং সিরাজপুর ইউনিয়নে মাইন উদ্দিন মামুন। ২নং চরপার্বতী ইউনিয়নে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু, ৩নং চর হাজারীতে বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, তবে অবস্থা বেগতিক দেখে মেয়রের প্রার্থী সোহাগকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ালে তারা স্বপনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। ৪নং চরকাঁকড়াতে ডাবল সবুজ, ৫নং চরফকিরা ইউনিয়নে জায়দল হক কচি, ৬ নং রামপুর ইউনিয়নে সিরাজিস সালেকিন রিমন। ৭নং মুছাপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন। ৮নং চর এলাহী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সর্বশেষ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ। সে নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জের ৮টি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ জিতেছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিভাজনে এবার আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ। তরে আওয়ামী লীগের বিভাজন কে কাজে লাগিয়ে জয় নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে এমন জোরালো প্রার্থীও নেই। তবে আওয়ামী বিরোধী ভোট জোট হলে নির্বাচনী হিসেব পাল্টে জেতে পারে।

মাঠ জরিপ মতে, ১নং সিরাজপুরে মিকন জয়ের পান্থে থাকলেও বিএনপি জামায়াতের ভোট এক হলে জামায়াত প্রার্থী হাসেম মেম্বার জয় নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। তবে বিএনপির উপর আস্থা রাখা কঠিন। বিএনপির ভোট টাকার দিকে ঝুকে আছে। সেক্ষেত্রে নিজাম উদ্দিন মিকনের গলায় ওঠতে পারে জয়ের মালা।

২নং চরপার্বতীতেও কামরুল মঞ্জুর লড়াই শেয়ানে শেয়ানে টক্কর। মেয়রের সমর্থনের কারনে কামরুল কিছুটা সুবিধায় থাকলোও সন্দ্বীবি ভোটে জামায়াত প্রার্থী হানিফ কাজী জয় নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। তবে ভোটের জরিপে বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুল এগিয়ে আছেন।

৩নং চরহাজারীতে মেয়র সমর্থিত প্রার্থী মহিউদ্দিন সোহাগ-এর বিজয় অনেকাটা নিশ্চিত। চরহাজারীতে বাকী ৩জন মিলেও সোহাগের সমান ভোট পাবে না বলে স্থানীয়দের ধারণা।

৪নং চরকাঁকড়াতে মেয়র সমর্থিত হাজী সফির অবস্থা ভালো। পুরো ইউনিয়নে হাজী সফির ভোট রয়েছে। বাড়তি পাওনা হচ্ছে মেয়রের বিমেষ নজর। হাজী সফির সাথে বাদলের লড়াই হতে পারে।

৫নং চর ফকিরাতে ত্রিমুখি লড়াই তুঙ্গে। শেষমেষ লড়াইটা টেলু ও কচির মধ্যে গড়াতে পারে।  পারিবারিক অংকে শেষ হাসিটা এবার টেলুকেই হাসতে দেখা যেতে পারে।

৬নং রামপুরে বেশ সুবিধা জনক অবস্থানে আছেন মেয়র সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী। কারণ বিগত সময়ে ইকবাল তখনও দলের চেয়ারম্যান ছিলেন না, ছিলেন জনগণের চেয়ারম্যান। ইকবালের সেই জনপ্রিয়তা কাল হবে অন্যদের। এছাড়া ইকবাল চেয়ারম্যানের শালিস বানিজ্যসহ লুটপাটের কোন অভিযোগ নাই। নিতান্তই একজন জনদরদি সৎ মানুষ হিসেবে এবারো জয় নিয়ে ঘরে ফিরবেন এমনটাই ধারণা রামপুরের ভোটারদের। অন্যদিকে ইকবালকে টেক্কা দিতে পারে এমন প্রার্থীও এবার নেই। ভোটারদের মন্তব্য সব প্রার্থী থেকে বেশি ভোট পাবে ইকবাল একাই।

৭নং মুছাপুরে পারিবারিক কারনে এখনও অনেকাটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে মেয়র বিরোধী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শাহীন। তবে মেয়র সমর্থিত প্রার্থী আমেরিকা প্রবাসী আইয়ূব আলীও শক্ত শিকড় করে নিচ্ছেন প্রতিদিন। দলের আইয়ূব আলীর হাত অনেক দূর পর্যন্ত আছে। শেয় পর্যন্ত চমক থাকলেও থাকতে পারে। জয়ের মালা হয়ত আইয়ূব আলীই পরবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top