নিজস্ব প্রতিবেদক। ।
ঢাকা-১৮ আসনের উপ নির্বাচনে গত কয়েকদিন থেকেই আলোচনায় আসেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও শিল্পপতি এম এ বাশারের নাম। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ বাশার গত দুটি নির্বাচনে ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে আসছেন। বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়ায় কপাল পুড়ে দাগনভূঞার মানুষের প্রিয় বাশার ভাইয়ের। ২০১৪ সালে এম এ বাশারের নিশ্চিত আসনটি দলীয় সিদ্ধান্তে ছেড়ে আসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী রিন্টুকে। অথচ রিন্টু নির্বাচন থেকে সরে আসেন। তবে নিন্দুকেরা বলে রিন্টু ছড়াদমে আসনটি সতন্ত্র প্রার্থীর কাছে বিক্রি করেছে। ২০১৮ আলোচিত সেনা কর্মকর্তা জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতে যাওয়ায় সেবারওও কপাল পুড়ে এ শিল্পপতি রাজনীতিকের। তাই গত দুুই সংসদ নির্বাচনে নিশ্চিত এমপি হওয়া থেকে বঞ্চিত হন এম এ বাশার।
গত দুুই সংসদ নির্বাচনে মহাজোটীয় সিদ্ধান্তের কারণে দলীয় প্রধানের নির্দেশনায় শেষ সময়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যান। ফেনী-৩ আসন থেকে নিশ্চিত এমপি হওয়া থেকে বঞ্চিত এ নেতা এবার ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তার এ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই হচ্ছে বলে মনে করছেন এ আসনের সাবেক রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা।
তারা বলছেন, প্রয়াত সাহারা খাতুনের মৃত্যুর কারণে এ আসন শূন্য হওয়ায় অনেকে নির্বাচন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তবে বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা এবং ব্যবসায়ীর নাম আলোচনায় থাকলেও গত সপ্তাহখানেক থেকেই এম এ বাশারের নাম আসছে ঘুরে ফিরে। তার এ মনোনয়ন চাওয়ার পিছনে কোনও গ্রীন সিগন্যাল আছে কি না তাও জানতে চেষ্টা করছেন স্থানীয় অনেকেই।
এ নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক সহকর্মীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। উত্তরের এক যুবলীগ নেতা বাশারের মনোনয়ন সংগ্রহ করাকে পজিটিভলি দেখছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, রাজনীতির সাবেক কর্মস্থলে এমপি হতে চাইলে বাশার ভাই অবশ্যই এগিয়ে থাকবেন। তিনি গত নির্বাচনে ফেনী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাইলেও জাতীয় পার্টির জন্য বঞ্চিত হন। এবার সেই বঞ্চনা থেকে হয়তো পরিত্রাণ পেতে চান তিনি। আমার মনে হয় দলীয় হাইকমান্ডের সাথে আলোচনা করেই তিনি নির্বাচনে আসছেন। আর ঢাকা-১৮ আসন এলাকাটি তার জন্য নতুন কিছুও নয়। ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর এ অঞ্চলে রাজনীতি করেছেন। তাই এখানের প্রতিটি নেতাকর্মী তাকে চিনে এবং অনেকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কও আছে। মনোনয়ন পেলে অনেকের থেকেও তিনি ভালো করবেন। এটা বলাই যায়।
তবে নিজের মনোনয়ন চাওয়ার ব্যাপারে এম এ বাশার এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এ অঞ্চলে। এখানের প্রতিটি রাস্তাঘাট ও নেতাকর্মী আমার জানাশোনা। বিএনপি-জামাতের দুঃশাসনের কঠিন সময়ে রাজপথে থেকে যে লড়াই সংগ্রাম করেছি এবং রাজনীতির কারনে জেল জুলুমসহ শারীরিক নির্যতনেরও শিকার হয়েছি ঢাকার এই রাজনৈতিক মাঠেই। তাই আমার সাবেক সহকর্মীরা আমাকে ঢাকা থেকে নির্বাচন করার জন্য বলছেন। আমার অনেক শুভাকাঙ্খীরাও চাচ্ছেন আমি ঢাকা-১৮ থেকে নির্বাচন করি। দলীয় ভাই বন্ধুদের পরামর্শেই মূলত মাঠে নামা বা মনোনয়ন সংগ্রহ করা। আর ঢাকাতে আমি নিকুঞ্জ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই করবো। গত নির্বাচনে ফেনী-৩ থেকে জিতে আসার সব রকমের প্রস্তুতি থাকলেও নেত্রীর কথায় ছেড়ে দিয়েছি। রাজনীতি করি আর্দশের কারণে, লোভে নয়।
ঢাকা সিটি উত্তরের সাবেক এ যুবনেতা ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতা আসার পর অভিভাবকহীন ফেনী জেলার আওয়ামী রাজনীতি শুরু করেন। যার ফলশ্রুতিতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসন থেকে তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেই নির্বাচনে তিনি প্রায় ৯৩৬০০ ভোট পান, যা বিগত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুন ছিল। দশম সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় নমিনেশন পান তিনি। পরবর্তীতে মহাজোট এর শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধে সম্মান জানিয়ে নিজের নমিনেশন প্রত্যাহার করে নেন।
রাজনীতিতে প্রতিশ্রুতিশীল, পরিশ্রমী এম এ বাশার ব্যবসায়িক ভাবেও একজন সফল উদ্যোক্তা। নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত বাশার গ্রুফ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর চেয়ারম্যান। এর বাইরে তিনি জনশক্তি রপ্তানিকারক শীর্ষ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বায়রা’র দুই বারের নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর চেয়ারম্যানও। এছাড়াও দেশের টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ব্যবসায় জগতে তিনি স্বনামধন্য একজন ব্যাবসায়ীও। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শহর খ্যাত ময়মনসিংহের ভালুকায় তিনি গড়ে তুলেছেন আবুল বাশার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।