হ্যাট্রিক করতে পারেন ওবায়দুল কাদের

oka-S.jpg

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি।

মকছুদের রহমান মানিক ।।

ওবায়দুল কাদের একটি নাম একটি প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগের মাঠকর্মী থেকে শীর্ষ নেতা। তারপর আওয়ামী লীগ। অভাব, অনটন, অবহেলা, নির্যাতন, জেল জুলুম সব কিছুকে ডিঙ্গিয়ে, শত লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গকন্যার হাত ছাড়েননি কখনও। সুযোগ অনেক ছিলো। ইচ্ছে করলে অনেক আগেই ছোঁয়া যেতো। ৮০ দশকেই বহুবার সে সুযোগ পায়ে গড়াগড়া খেয়েছিলো।

বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শর সাথে বেইমানির চিন্তাও মাথায় আনেন নি কখনও। তার সর্বোচ্চ স্বীকৃতিও দিয়েছেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা। করেছেন নিজের রানিংমেট। করেছেন আওয়ামী লীগের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদেরও শেখ হাসিনার বিশ্বাসের শতভাগ মূল্যায়ন করেছেন।

এখন তৃতীয় দফায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তিনি জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। সুযোগও আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের সেক্রেটারী হওয়ার মতো খুব বেশি নাম শেখ হাসনার কাছে নাই। আগমী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে যাদের নাম মিডিয়া আসছে তাদের জাতীয় গ্রহণযোগ্যতা ওবায়দুল কাদেরের কাছাকাছিও নাই। তাই অনেকেই মনে করছেন, ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য শেষপর্যন্ত হয়তো ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে। আর এটা শেষমেষ হয়ে গেলে ইতিহাসের খাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে ওবায়দুল কাদেরের নাম। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাট্রিকের প্রথম ইতিহাস হবেন ওবায়দুল কাদের।

হ্যাট্রিক করার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে অতি সরব দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হ্যাট্রিক করতে মরিয়া হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। সাম্প্রতিক সময়ে আড়মোড়া ভেঙেছেন আওয়ামী লীগের এই ত্যাগী নেতা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করছেন। আড়ষ্টতা ভেঙে তিনি এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভায় যোগদান করছেন, আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন বিরোধী দলের সমালোচনায়।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, এই সবকিছু তিনি করছেন আগামী কাউন্সিল অধিবেশনকে সামনে রেখে। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যদিও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত দিন তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে কাউন্সিল হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত।

আর এই কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নতুন সাধারণ সম্পাদক কে হবে সেটি নির্ধারণ করা। কারণ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই এবং দলের নেতাকর্মীরা নিরঙ্কুশভাবে তাকে সমর্থন করেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনিই থাকতেন, তার কোনো বিকল্প নেই। এই বিবেচনায় দলের সাধারণ কে হবেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে ওবায়দুল কাদের হয়তো তৃতীয় দফায় আর সাধারণ সম্পাদক হবেন না। তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এবং নির্বাচনের আগে দলকে গতিশীল করার জন্য সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ওবায়দুল কাদের যতই কাউন্সিল এগিয়ে আসছে ততই নিজেকে সক্রিয় করছেন।

অনেকে মনে করছেন যে, নির্বাচনের মাত্র দেড় বছর আগে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন না আনার পক্ষে একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। তারা মনে করছে যে, এই মুহূর্তে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন ভুল বার্তা দিতে পারে। আর এ কারণেই হয়তো ওবায়দুল কাদের আশার আলো দেখছেন।

তাছাড়া ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প কে হবে এ নিয়েও দলের ভেতর নানারকম মেরুকরণ রয়েছে। এই সমস্ত মেরুকরণ দলের মধ্যে অনৈক্য এবং বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে বলেও কারো কারো ধারণা। এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই শেষপর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরকে রাখার পক্ষে একটি মহল সক্রিয় হয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, এখন যে পরিস্থিতি, তৃণমূল বিভক্ত, সংগঠনের মধ্যে নানারকম সমস্যা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এরকম পরিস্থিতিতে নতুন সাধারণ সম্পাদক হলে লে স্থবিরতা আসতে পারে। তাছাড়া ছাত্রলীগ যুবলীগে ওবায়দুল কাদেরের এখনও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রন রয়েছে। ফলে দলে গতিশীলতা আনতে ওবায়দুল কাদেরই শেষ ভরশা।

যারা এতদিন সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কিছু চিন্তা করেছেন তারাও এখন আবার চাচ্ছেন সার্বক্ষণিক ভাবে দলের জন্য কাজ করতে পারবেন একমাত্র  ওবায়দুল কাদেরই।  সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই হয়তো শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এখন পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই আছেন ওবায়দুল কাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top