মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি, তবুও আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া, যাত্রীদের মুখেও নেই মাস্ক

BUS-1.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

পৃথিবীর ২১৫টি দেশে করোনা মহামারি চলছে। কোন দেশে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে এমন নজির নেই। তবে অনেক দেশেই গণপরিবহনের ভাড়া ফ্রি করেছে, আবার অনেক দেশে ৩০/৪০% কমিয়ে দেয়া হয়েছে । কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০% বাড়িয়েছে সরকার। তবে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০% বাড়ালেও পরিবহন মালিকরা অনেক ক্ষেত্রেই ভাড়া নিয়েছে ১০০-১২০% বেশি। তারপরও যাত্রী বহনে স্বাস্থ্য বিধি মানা হয়নি। আমাদের সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে উদাশীন ছিলেন।

করোনাকালীন সময়ে যেসব শর্তে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল তার অধিকাংশই এখন আর মানছে না পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবুও যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। অধিকাংশ যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্কহীন এসব পরিবহনে চড়ছেন। ফলে বেড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

এর আগে গত ৩১ মে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর অনুমোদন দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এদিন এ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, আন্তঃজেলা ও দুরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে নির্ধারিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে একজন যাত্রীর সর্বোচ্চ ভাড়া হবে ১ দশমিক চার-দুই টাকা।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তবে ঢাকা মহানগরী ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া হবে যথাক্রমে ১ দশমিক সাত শূন্য ও ১ দশমিক ছয় শূন্য টাকা। ঢাকা মহানগরীতে সর্বনিম্ম ভাড়া ৭টাকা ও চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ টাকা নেওয়া যাবে।

ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছিল। শর্তগুলো হল- বাসে সিটের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল হবে। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া যাবে না, ভাড়ার চার্ট দেখিয়ে ভাড়া নিতে হবে। যাত্রীদের মাঝে একটি করে সিট খালি রাখতে হবে ইত্যাদি।

তবে গত কয়েকদিন রাজধানীর সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ গণপরিবহনে এসব শর্ত মানা হচ্ছে না। অনেক বাসে প্রতিটি আসনেই যাত্রী নেয়া হচ্ছে। আর আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখন দেশের কোনো গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। যেসব শর্ত অনুসরণ করে বর্ধিত ভাড়া আদায়ের কথা বলা হয়েছিল তার কোনোটাই মানা হচ্ছে না। আগের মতোই গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। বর্ধিত এ ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি এর পাশাপাশি প্রশাসনও কাজ করছে। অবশ্যই এ বিষয়ে উন্নতি হবে।

এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে বন্ধ থাকার পর গত ১ জুন থেকে ১১টি শর্তে গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয় সরকার। সংক্রমণ রোধে পাশাপাশি সিটে যাত্রী পরিবহন না করা, নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার, মাস্ক পরাসহ শর্তগুলো মেনে যানবাহন চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল পরিবহন মালিকরা। তবে এসব শর্তেরও বেশিরভাগই এখন মানা হচ্ছে না।

সংক্রমণ রোধে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে তুলতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মিডিয়াকে বলেন, অনেক মানুষের মধ্যে আতঙ্কটা কমে যাওয়ায় সচেতনতা কমে গেছে। সচেতনতাকে আরও বৃদ্ধি করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যদি মোবাইল কোর্ট করা যায়, এসব বিষয় নিয়ে সচিব কমিটিকে আলোচনা করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে বলে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আরও এনফোর্সমেন্টে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top