নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সারাদেশে কয়েক লাখ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কেনার সঙ্গে জড়িত থাকে। কয়েক হাজার পাইকারি ব্যবসায়ী এই চামড়া তাদের কাছ থেকে কিনে আড়তদারদের কাছে জমা রাখেন।
কিন্তু গত বছর চামড়া কিনতে দেখা যায়নি মৌসুমী ক্রেতাদের। ফলে যারা কোরবানী দেন তারা চামড়া নিয়ে পিাকে পড়েন। ক্রেতা না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদ্রাসার ছেলেরা চামড়া সংগ্রহে বাহির হয়। কোরবানী দাতারাও উপায়ন্তর না দেখে মাদ্রাসার ছেলেদরে চামড়া দিয়ে বিপদ থেকে উদ্দার হন। গরীরে হক চামড়া নিয়ে তালবাহানা গরীর যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি কোরবানী দাতারাও সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মাদ্রাসায় চামড়া দেওয়ায় কোন সওয়াবতো হবেইনা বরং কোন কোন আরৈমদের মতে কোন কোন ক্ষেত্রে গুনাহ হতে পারে গরীবের হক নাহক করার জন্য। তবে এতিমখানা বা লিল্লাহ বোর্ডিং আছে এমন প্রতিষ্ঠানে দেয়ার জায়েজ আছে।
চামড়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর এবং তার আগের বছর (২০১৯ ও ২০১৮) চামড়া কিনে বড় বিপদে পড়েছিলেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছিলেন, তারাই বিপাকে পড়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কয়েক হাজার মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনে লোকসান গুনেছেন। অনেকে চামড়া কিনে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন।
চামড়া প্রক্রিয়াজাত করন বা ট্যানারিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই চামড়া মূলত আড়তদারের কাছে সংরক্ষিত থাকে। আড়তদার কিছু লাভ রেখে ট্যানারিতে চামড়া পৌঁছে দেন। যদিও ট্যানারি পর্যন্ত পৌঁছানোর খরচও বহন করতে হয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের। ট্যানারির মালিকরা সেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন পণ্য বানান। এসব পণ্য বিদেশেও রফতানি করা হয়।
বিগত বছর চামড়া বিক্রি না হওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় এ বছর মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে নাই। ফলে চামড়ার কদর না থাকায় অপাত্রে চামড়া দান করতে বাধ্য হন কোরবানীদাতারা।
গত দুই কোরবানির ঈদে চামড়া কিনে বড় ধরনের লোকসান গুনেছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। এবার তাই চামড়া কেনা থেকে বিরত ছিলো মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া পাইকার, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে চামড়া কেনার ব্যাপারে কোনও নির্দেশনা ছিলো না। সরকারের পক্ষ থেকে কাঁচা চামড়া রফতানি করার সিদ্ধান্তের পরও চামড়া কেনার ব্যপারে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কোনও আগ্রহ জন্মেনি।
এদিকে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কিনলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিতে পড়বেন না।বরং ঝুঁকিতে থাকবেন ট্যানারি মালিকরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাশে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ মিডিয়াকে বলেন, ‘ব্যবসায় লাভ লোকসান থাকে। এবার হয়তো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসান করবে না। কিন্তু ঝুঁকিতে থাকবেন ট্যানারি মালিকরা।’ কী কারণে ঝুঁকিতে থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ ঘরের মধ্যে বন্দি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। অধিকাংশ মানুষ এখন অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান—এই তিনটি নিয়ে ভাবছে। জুতা বা চামড়ার পণ্য ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতিতে কেউ নেই। পৃথিবীর নামি-দামি শোরুমগুলো বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করবো। কারণ, এ সময়ের সংগৃহীত চামড়া দিয়েই আমাদের সারাবছর কাজ করতে হয়। ফ্যাক্টরি চালু রাখতে হয়। শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়।’