জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ
বিশেষ প্রতিবেদক ।।
ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব করেছিল, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর) ১০০ আসনের উচ্চকক্ষের আসন বন্টন হবে। ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে- তা অস্বাভাবিক বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাহউদ্দিন আহমদ।
পিআরে রাজি নয় বিএনপি । দলটি চায়, সংসদে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জামায়াত, গণঅধিকার, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টিসহ ২১টি দল পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ চায়। বিএনপিসহ পাঁচটি দল পিআরে রাজি না হওয়ায় ১৪ জুলাই সোমবার কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করে।
১৪ জুলাই সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৩তম দিনে সংলাপ শেষে তিনি বলেছেন, উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাব অস্বাভাবিক মনে হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘বিএনপিই প্রথম উচ্চকক্ষের কথা বলেছে। বিএনপির ৩১ দফায় উচ্চকক্ষ গঠনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত করা।
সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রস্তাবকে ‘জেলা পরিষদ বা প্রাদেশিক ব্যবস্থার মতো’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এ ধরনের উচ্চকক্ষ তৈরি করা উপযুক্ত বা প্রয়োজনীয় নয়।’
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে- তা অস্বাভাবিক বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাহউদ্দিন আহমদ। সংসদের নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিরোধী বিএনপি, এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার নতুন প্রস্তাবেরও বিরোধী।
বিএনপি পিআর মানবে জানিয়ে বলেন, ‘উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য আছে, তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হওয়া যায়নি। কেউ বলছে নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে প্রতিনিধি আসবে, কেউ বলছে পিআর।’
নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনে রাজি নয় বিএনপি। সংসদের নারী আসন বৃদ্ধিতে বিএনপি রাজি হলেও সরাসরি নির্বাচন চায় না- জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নারী আসনে নির্বাচিন হোক বিদ্যমান পদ্ধতিতে। সরাসরি নির্বাচন বাস্তবভিত্তিক নয়। এছাড়া প্রস্তাবিত ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতেও অস্পষ্টতা রয়েছে।
বিএনপি, জামায়াতসহ একাধিক দল নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিরোধিতা করায় সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। এ প্রস্তাবও নাকচ করেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল।
তিনি বলেছেন, ‘এখনও দলের বিভিন্ন কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখতে পারিনি দলগুলো। বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ নারী ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে সরাসরি রাজনীতিতে আসতে এখনও দ্বিধা অনুভব করেন। তাই আমরা ধাপে ধাপে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই। রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় গেলে নারী আসনে সরাসরি নারী নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। বিএনপি কী সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছে- এ প্রশ্নে বলেছেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম যে ২০০৬ সালের মধ্যে একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে। তবে বাস্তবতা হলো, সমাজ এখনও নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের পর্যায়ে পৌঁছায়নি।’