নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয় ৮ মার্চ। এরপর ৫০ হাজার ব্যক্তির করোনা শনাক্ত করতে লেগে যায় প্রায় তিন মাস (৮৭ দিন)। গত দেড় মাসে (৪৭ দিন) আরও দেড় লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রথম এক লাখ শনাক্ত করতে লেগেছিল ১০৩ দিন। শেষ এক লাখ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৩১ দিনে।
তবে প্রথম এক লাখ রোগী শনাক্তে ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে কম সময় নিলেও দ্বিতীয় এক লাখে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ১১০ দিনে প্রথম এক লাখ শনাক্তের পর দ্বিতীয় এক লাখে ভারতের সময় লাগে মাত্র ১৫ দিন। আর ১০৫ দিনে লাখ পার করা পাকিস্তান পরের এক লাখে সময় নেয় ২০ দিন। করোনা থেকে পার পাচ্ছেন না কেউ। চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, আমলাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি রাজনীতিবিদরাও আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারাও গেছেন অনেকেই।
সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব দেশে নমুনা পরীক্ষা বাড়লেও কমছে বাংলাদেশে। নমুনা পরীক্ষার হারে ভারত, পাকিস্তানের চেয়েও অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এতে অনেক রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তারা বলছেন,যত পরীক্ষা হবে তত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। রোগী শনাক্ত করা না গেলে করোনার সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হবে।
করোনাভাইরাস শনাক্তে বিশ্বের ১৭তম দেশ হিসেবে গত ১৮ জুন এক লাখ পার করে বাংলাদেশ। এর এক মাস পর শনিবার ১৭তম দেশে হিসেবেই ২ লাখ পার করেছে দেশটি। গড়ে এখন তিন হাজারের বেশি শনাক্ত হচ্ছে প্রতিদিন। প্রথম ৩০ দিনে ১০০ শনাক্ত পার হয়েছিল। আর শেষ ৩০ দিনে শনাক্ত হয়েছে এক লাখ।
তথ্য বলছে, দেশে শনাক্তের সংখ্যা কমলেও পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার বাড়ছে। ভারতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৭ শতাংশ। পাকিস্তানে এটি ১৫ শতাংশ। তবে পরীক্ষা বাড়িয়ে এ হার কমিয়ে এনেছে পাকিস্তান। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৮ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ২০ শতাংশ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় এটি ছিল ২৫ শতাংশ। গত এক মাস ধরে নমুনা পরীক্ষা কমছে দেশে।
এ বিষয়ে আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেন, কম নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসছে। সারা দেশেই নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারও উপসর্গ থাকলে দেরি না করে নমনুা দিতে আসুন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল ২ জুলাই। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। এরপর থেকে শনাক্ত কমলেও শনাক্তের হার বাড়ছে। সর্বোচ্চ শনাক্তের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৬২টি নমুনা। এরপর দিনে নমুনা পরীক্ষা আর ১৬ হাজার পার হয়নি। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১০ হাজার ৯২৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর আগে দেশে এর চেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে গত ৩০ মে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, শনিবার পর্যন্ত দেশে ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর প্রথম শতক পূর্ণ করতেই লেগে যায় ৩০ দিন।তারপর গতি কছিুটা বাড়তে থাকে।৩৮ দিনের মাথায় এক হাজার এবং ৫৮ দিনের মাথায় ১০ হাজার পার করে বাংলাদেশ।
তবে প্রথম ১০ হাজার করতে ৫৮ দিন লাগলেও পরের ১০ হাজার শনাক্ত হয় মাত্র ১১ দিনেই। তারপর সময়ে আরও কমিয়ে আনা হয়।৭ দিন, ৬ দিন ও ৫ দিনে ১০ হাজার করে শনাক্ত হতে থাকে।আর এখন তো মাত্র ৩ দিনেই ১০ হাজার পার হয়ে যাচ্ছে।তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন, পরীক্ষা বাড়লে আরও কম সময়ে বেশি ব্যক্তির করোনা শনাক্ত করা সম্ভব।
সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৭টি দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে। ১৭তম দেশ হিসেবে এ তালিকায় আজ ঢুকেছে বাংলাদেশ। আগের ১৬টি দেশের মধ্যে ৩ লাখ পার করেছে ৯টি দেশ।এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ লাখ, ব্রাজিল ২০ লাখ ও ভারত ১০ লাখ পার করেছে।শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে দিনে সর্বোচ্চ ৭৭ হাজারের বেশি শনাক্ত হয়েছে গতকাল।ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডায় করোনা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৩৪ হাজার ৮৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।টানা তিন দিন ধরে ৩০ হাজারের বেশি শনাক্ত হচ্ছে দেশটিতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই করোনা শনাক্ত হয়েছে।এর মধ্যে শনাক্তের অর্ধেক ঢাকা শহরে। তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম ও নারায়ানগঞ্জে উচ্চ সংক্রমণ হার ছিল শুরু থেকেই।
দেশে করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সুস্থ হয়ে গেছেন।ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৯৮ জন, যা মোট রোগীর প্রায় ৫৫ শতাংশ।৪৪ শতাংশ রোগী এখন চিকিৎসাধীন।আর করোনায় মারা গেছেন ১ দশমিক ৩ শতাংশ।আজ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৫৮১ জন।