আন্দোলন থেকে সরে ভোটে আসতে শুরু করেছে ছোট দলগুলো

EC-President-Meeting.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ছোট ৮-১০টি দল তফসিল ঘোষণার পরপরই ভোটে আসার ঘোষণা দেবে, এমন একটা ধারণা পেয়েছিল আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এ জন্য এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তদের ব্যর্থতা দেখছেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো দায়িত্বশীল নেতা।

তারপরও কয়েক বছর ধরেই সরকারি মহলের চেষ্টা ছিল, বিএনপির জোট থেকে শরিকদের বের করে দলটিকে রাজনৈতিকভাবে আলাদা করা। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, এনপিপি, বাংলাদেশ ন্যাপসহ সাত-আটটি দল বিএনপির জোট ছাড়ে।

গত বছরের ডিসেম্বরে বিএনপি ২০-দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে সমমনা ৩৬টি দল নিয়ে নতুন রাজনৈতিক মৈত্রী গড়ে। প্রায় ১১ মাস ধরে তারা নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে। এই মুহূর্তে সমমনা দলগুলো সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে রয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি ও মুসলিম লীগ (শেখ জুলফিকার) আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিল। এ দুটি দলই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।

নির্বাচন প্রশ্নে কিছুদিন ধরে ‘ধোঁয়াশা’ তৈরি করে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ভোটে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। যদিও এখনো ইসলামপন্থী কিছু দলকে তারা ভোটে আনতে পারেনি। তাদের পেছনে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এ ঘটনার উল্লেখ না করলেও গতকাল দলীয় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা মনে করেছিল, কে আসে কে না আসে…ফুল কিন্তু ফুটতে শুরু করেছে। আরও অনেক ফুল ফুটবে। মনোনয়ন ফরম সরকারিভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া পর্যন্ত শত ফুল ফুটবে। কাজেই এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ছিলেন। গতকালই তাঁকে বহিষ্কার করে জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেনকে (সেলিম) নতুন মুখপাত্র করা হয়েছে। এই জোটের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কারাবন্দী থাকায় জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধানকে ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক করা হয়েছে। জাগপার এই অংশটি ইবরাহিমের যুক্তফ্রন্টে যাওয়ার কথা ছিল। তারা একাধিক বৈঠকে অংশও নিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে নির্বাচনে আনার চেষ্টায় আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া, সংসদ সদস্য করার মতো প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে। আবার কিছু ইসলামপন্থী দলকে কোনো প্রলোভন ছাড়াই চাপ দেওয়া হচ্ছে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ইসলামি দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা গতকাল নোয়াখালী মেইলকে বলেন, ‘আমাদের ওপর চাপটা খুব নরমভাবে। শুধু বলছে, নির্বাচনে যাবেন কি না, সেটা আপনাদের ব্যাপার। তবে আপনাদের সহযোগিতা ছাড়াই যদি এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসে, আপনাদের মামলা আছে, প্রতিষ্ঠান আছে, এগুলো মাথায় রাখবেন। তখন করার কিছুই থাকবে না।’

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এখন তাদের লক্ষ্য চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদকে নির্বাচনে আনা। গণফোরাম আগামী শনিবার নির্বাচন প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর বাইরে অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপিও আওয়ামী লীগের নজরে আছে।

তবে মন্ত্রিসভার দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর নতুন করে আরও কিছু ঘোষণা আসবে। এর মধ্যে দল ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকবেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, দলটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিজেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। তবে ৩০০ আসনের নয়, ভেঙে ভেঙে প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি ছেড়ে আসতে পারেন, এমন সম্ভাব্য নেতাদের জন্য ৭০টির মতো আসন বাদ রেখে প্রার্থী ঘোষণা হবে।

অন্য দল ও নেতাদের ভোটে আনার ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি থাকায় মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা কিছুটা পেছানোর কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে ভোটের তারিখ কোনোভাবেই পেছানোর পক্ষে নয় আওয়ামী লীগ।

গতকাল তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের। সময়সীমা কিন্তু আছে। এই সময়সীমা ঠিক রেখে তারা যদি সমন্বয় করে, সেটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়।
বিএনপির সাবেক নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী

বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপিতে এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা যোগ না দিলেও বিভিন্ন এলাকায় দলটির বহিষ্কৃত ও সাবেক নেতাদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top