সরকারের উন্নয়ন উৎসবে অবরোধেও জনজীবন স্বাভাবিক, সন্ধ্যা-রাতে চোরাগোপ্তা হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ

Al-U.jpg

সরকারের উন্নয়নের কিছু চিত্র।

মিরাজ মৃত্তিক ।।

২৮ অক্টোবরের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যাওয়া বিএনপি ৪ দফা অবরোধ ডেকে রাজপথ ছেড়েছে। ভাড়া করা টোকাই দিয়ে সন্ধ্যা ও রাতে চোরাগোপ্তা হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে চলেছে তেজহীন অবরোধ। প্রথম দুই দফার ৫ দিনে সাধারণ মানুষ হিসেব কষে চললেও এখন এই অবরোধকে ২০১৫ সালের মতো অকার্যকর অবরোধ ধরেই জীবনের স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চতুর্থ দফা সর্বাত্মক অবরোধের গতকাল রবিবার (১২ নভেম্বর) ছিল প্রথম দিনে কোন রকম বাঁধা ছাড়াই স্বাভাবিক ছিলো জনজীবন। দিনের শুরু থেকেই মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়ি তুলনামূলক কম চললেও রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে গণপরিবহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরে যানজট না হলেও সিগন্যালগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তবে  চতুর্থ দফা সর্বাত্মক অবরোধে রাস্তায় গাড়ি থাকায় অফিসগামী মানুষদেরও পোহাতে হয়নি দুর্ভোগ। অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যেই নিজ নিজ গন্তব্যে যাতায়াত করতে পেরেছেন তারা।

একদিকে সরকারের উন্নয়ন উৎসব, অন্যদিকে বিএনপি সাধারণ মানুষের জনজীবনে সন্ধ্যা-রাতে চোরাগোপ্তা হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে যেন রাত আর দিনের তফাৎ করে দিচ্ছে। বিএনপি নিজেরাই প্রমাণ করছে তারা ধ্বংশের উৎসব করছে। অন্যদিকে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ প্রমাণ করছে তাদের দল ও সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী।

বিএনপি জামায়াতের অবরোধের তান্ডব

তবে বিএনপি-জামায়াতের ঘোষণা অনুযায়ী, অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা কিংবা ৯টা নাগাদ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। যা চোরাগোপ্তা হামলা হিসেবেই দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবরোধের সারা দিনে কোথাও সমর্থকদের ভাঙচুর কিংবা মিছিলের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সিগন্যালে যানবাহনের চাপ সামলাতে হয়েছে।

গতকাল রবিবার সকাল থেকেই সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর রামপুরা, বাডডা, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, গুলিস্তান, ফার্মগেট, মহাখালী, কমলাপুর, খিলগাঁও রেলগেট, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, মালীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহনের চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের কড়া অবস্থান। বিজিবিও ছিল সর্বোচ্চ তৎপরতায়। যে কারণে কোথাও সুবিধা করতে পারেনি অবরোধ-সমর্থকরা। সাধারণ মানুষের ভাষ্য, দিনের বেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানের কারণে তারা সুবিধা করতে না পারলেও সন্ধ্যা-রাতে সুযোগ বুঝেই বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে দিনের চলাচলে যে কারণে তেমন আতঙ্ক নেই গণপরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে। এর আগে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ধারাবাহিক অবরোধে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অ্যাসকর্ট দেয়ার ঘোষণা দেয় র্যাব। র্যাবের অ্যাসকর্টে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যেও স্বস্তি বিরাজ করছে।

তৃতীয় দফার অবরোধে চট্টগ্রাম থেকে আসা তেলবাহী লরি কনভয় অ্যাসকর্ট দিয়ে রংপুরে অবস্থিত তেলের ডিপোতে পৌঁছেও দেয় র্যাব-১৩। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব বিএনপি-জামায়াতের প্রতি দফায় ডাকা অবরোধে অ্যাসকর্ট দিয়ে যাচ্ছে। যারাই অ্যাসকর্ট চাইবে তাদেরই অ্যাসকর্ট দিতে প্রস্তুত রয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া অবরোধে অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে সারা দেশে শোডাউন-শান্তি সমাবেশ করছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠন। গতকাল উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসেন জুনায়েদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি মতিঝিলের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গেল কয়েক দিনের চেয়ে আজকে রাস্তা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কোনো ঝামেলা দেখিনি আসার পথে। এর আগে অবরোধের অন্য দিনগুলোতে উত্তরা থেকে আমার অফিসে আসতে সময় লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট। তবে আজকে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট লেগেছে। রাস্তায় গাড়ি বেড়েছে, জ্যামও বেড়েছে। তবুও মানুষের মনে আতঙ্ক কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের স্বাভাবিক চলাচল অনেকটা থমকে যায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। যানবাহন ভাঙচুর হয়েছে অনেক এলাকায়। অবরোধ সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি শোডাউন দেখা যায়। তবে গতকাল রোববার এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত গাড়িতে আগুন দেয়ারও তেমনি কোনো ঘটনা ঘটেনি। স্বাভাবিক দিনের মতোই শেষ হয় বিএনপি-জামায়াতের চতুর্থ দফায় ডাকা অবরোধের প্রথম দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top