দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা পেতে ১৪ দলীয় জোটের ছোট দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ

14-Dal-NM24.jpg

আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পুরোদমে মাঠে * আসন ছাড়তে নারাজ, জাতীয় পার্টিও একই পথের সঙ্গী

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

টানা ১৫ বছরের ক্ষমতাসীন সরকারী দল আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় নেতাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থীতা নিয়ে খুব চাপে রেখেছে এবার। একমাত্র কুষ্টিয়ায় ইনু সাহেবের আসন ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের সব কয়টি আসনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া আরো একটি আসন খালি রেখেছে আওয়ামী লীগ। সেটি নারায়নগঞ্জ ৫ আসন। এই আসনের বর্তমান এমপি শামীম ওসমানের ভাই সেলিম ওসমান।

অন্যদিকে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে মরিয়া হয়ে আছে ১৪ দল। কারন আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া এদের১৪ দলর ৯০ ভাগ নেতা নির্বাচনী তৈরি পার পাবে না। ১৪ দলীয় জোটের জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ছাড়া আর কোন নেতা নৌকা ছাড়া নির্বাচিত হতে পারবেন এমনটা মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেশকরা।

আবার ১৪ দলের নোতাদের রাজনীতির মাঠে সমর্থন ছাড়াও আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতো না। জোটের প্রয়োজন কতোটা এটা শেখ হাসিনা ছাড়া আয়ামী লীগের অন্যরা বুঝবে না। আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের ধারনা শেখ হাসিনা জোটকে বেহুদা টানছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা জানেন ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগের জন্য কতোটা প্রয়োজন।

এই জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জোটবদ্ধ ভোটের। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের শরিক ১৪ দলকে নিয়ে নির্বাচনি লড়াইয়ে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এর বাইরেও দুই বারের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, একাধিক রাজনৈতিক দল, ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল এবং জোটকেও সঙ্গী করতে চায় আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে কোথাও প্রকাশ্যে আবার কোথাও অপ্রকাশ্যে পর্দার অন্তরালে আসন সমঝোতার পথে হাঁটতে দেখা যেতে পারে আওয়ামী লীগকে।

নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই দীর্ঘদিন পর ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) গণভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে শরিক দলকে নিয়েই ভোট করার বিষয়ে আস্বস্ত করেন তিনি। এ সময় আসন সমঝোতা প্রশ্নে আলাপ-আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দেন। এরই অংশ হিসাবে মঙ্গলবার ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় বৈঠক করেন জোট নেতারা।

জানা গেছে, এই বৈঠকে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এজন্য নেতারা আরও সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন। ফলে ১৪ দলের প্রার্থীদের পুরোপুরি ভোটে নামতে আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, এর বাইরে দুবারের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গেও নেপথ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের। আজকালের মধ্যে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসবেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বৈঠক শেষে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দল জোটগতভাবেই নির্বাচন করবে। তিনি আরও বলেন, একসঙ্গে যুদ্ধ করার বিষয়ে ১৪ দল পরীক্ষিত। এটা শুধু আসন বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে না। আমরা একটি আদর্শিক রাজনৈতিক জোট। এটা অন্যদের মতো ভাগাভাগির জোট নয়। আমরা ২০০১ থেকে যুদ্ধ করে এসেছি। ২০০৬ সালে যুদ্ধ করেছি। আসন বিন্যাস বা কে কি পেল না পেল-এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো আমরা আছি, কাজ করছি।

শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা এবং সমঝোতা হওয়া আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের থাকা না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সব আনসার্টেন্ট। কারণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই তো আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে। ফলে কে থাকবে কে, থাকবে না, কে প্রত্যাহার করবে কে করবে না, এগুলো এখনই বলা যাচ্ছে না। আসন বিন্যাসের ঘোষণা হয়তো আগে হতে পারে কিন্তু মূল বিষয়ের জন্য আরও অপক্ষো করতে হবে। এছাড়া জাতীয় পার্টি আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তাদের আসন বিন্যাস হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপিসহ তাদের বলয়ে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যে এবারের নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন, তাদের অনেকেই নানাভাবে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে থাকতে চাইছেন। কেউ প্রকাশ্যে জোটে থেকে, আবার কেউ অপ্রকাশ্যে আসন সমঝোতার আশায় রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় করে তুলতে বেশি আগ্রহী। এ কারণে তারা দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরেও যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন-তাদের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে বলবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

অনেকটা এ কারণে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে হতাশাও বিরাজ করছে। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দিনক্ষণ মিলিয়ে দেখলে ভোটের আর মাত্র ৩০ দিন বাকি। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা পুরোদমে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দলের বাইরেও ক্ষমতাসীনদের অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠে গরম হাওয়া বইয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের শরিকরা এখনো অন্ধকারে। কোন দলের কোন প্রার্থী কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন এখনো অজানা। দলীয় নাকি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের ময়দানে নামবেন তাও জানেন না শরিক দলের নেতারা। তাই এখনো হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন তোপখানা-পল্টন-বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় অবস্থিত তাদের ছোট ছোট কার্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top