কোম্পানীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত জনজীবন, ডিজিএমের মুখোমুুখি সাংবাদিক মুজাক্কির

DGM.jpg

নোয়াখালী মেইল-এর বিশেষ প্রতিনিধি বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির-এর মুখোমুখি ডিজিএম আরিফুল ইসলােম।

কোম্পানীগঞ্জ থেকে বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির ।।

কোম্পানীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত জনজীবন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শতভাগ বিদ্যুতায়নের এলাকা কোম্পানীগঞ্জে ঈদের দিনেও পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকয় ১৮-২০ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিলো না।

পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ বারবার বলেছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা থাকবে না বলে কথা দিয়েও কথা রাখে নি। ঋতু বদলের সাথে সাথে প্রকৃতি যেমন তেঁতে উঠছে তেমনি গরম শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ে নিত্য বিড়ম্বনায় পড়ছেন কোম্পানীগঞ্জের জনগন। ভূক্তভোগীরা জানান, ঈদুল আযহা আসার পূর্ব থেকেই বারবার লোডশেডিং এর কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জেরবাসীকে।

পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের অবিশ্বাস্ব বাহানা, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় বাধ্য হয়ে এলাকাভেদে বারবার লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। এছাড়া থাকছে না আমাদের কিছু করার। অথচ সরকার বলছে চাহিদার চাইতে বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি। কোথাও লোডশেডিংয়ের কারন নাই যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়া।

এমনিতেই প্রচন্ড গরম তার উপর‌ বারবার বিদ্যুতের লোডশেডিং দেওয়ায় সময় কাটাতে হচ্ছে মোমবাতির আলোতে। এ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। প্রায় পৌণে চার লাখ জন-অধ্যুষিত কোম্পানীগঞ্জবাসী বিদ্যুতের এই লুকোচুরি থেকে নিস্কৃতি চায়। কবে এই ভোগান্তির অবসান ঘটবে এটাই এখন জনমনে প্রশ্ন?

আকাশে মেঘ এবং একটু বৃষ্টির লক্ষণ মানেই বিদ্যুতের লোডশেডিং। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় মানুষ। ফ্রিজে রাখা খাদ্য সামগ্রী নষ্ট হওয়া এবং প্রচন্ড গরমে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকতে হবে, ঘন্টার পর ঘন্টা! দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিহীনই থাকতে হচ্ছে।শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের বাহানায় বসছেনা পড়ার টেবিলে। কোম্পানীগঞ্জের মানুষের হাহাকার পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের কাছে অনেকটা অরণ্যে রোদনের মতো। কবে নাগাদ পল্লী বিদ্যুৎ সরবাহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে, গ্রাহকগণ এ নিয়েই উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় থাকছেন।

তাই কোম্পানীগঞ্জের মানুষের অনুরোধে আমরা কথা বলি কোম্পানীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জনাব এ ইচ এম আরিফুল ইসলােমের সাথে। নোয়াখালী মেইল-এর বিশেষ প্রতিনিধি জনাব বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির-এর মুখোমুখি ডিজিএম আরিফুল ইসলােম।

নোয়াখালী মেইল : সরকারের শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ঘোষণা আছে, কিন্তু আপনারা লোডশেডিং কেনো করেন এর সমস্যা কোথায়? মূল গ্রেডের নাকি আঞ্চলিক সমস্যা?

ডিজিএম আরিফুল ইসলােম : আপাতত মূল গ্রেডে সমস্যা আমাদের নোয়াখালীতে যে গ্রেডটা আছে ওইখানে একটা পাওয়ার ট্রান্সফার আছে, তা তিন-চারদিন আগে নষ্ট হয়ে যায়, যার কারনে প্রতিদিন ৩০-৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম রিসিভ করা যাচ্ছে। সেকারনে আমরাও আনুপাতিক হারে নিয়মিত বিদ্যুৎ পাচ্ছি না, যার কারনে গত দুইদিন সন্ধ্যার পর আমাকে ৬মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ শেডিং করা লাগতেছে। অথ্যাৎ যদি আমি ৬মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ পেতাম তাহলে লোডশেডিং হতো না কিন্তু এর ফলে প্রতি ২ঘন্টা পর পর লোডশেডিং করা লাগতেছে।

নোয়াখালী মেইল : লোডশেডিং এর এই সমস্যা সমাধান করতে কতদিন লাগবে?

ডিজিএম আরিফুল ইসলােম : সমাধান করতে আরো ১সাপ্তাহ সময় লাগবে আমরা ফেনী থেকে বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা করতেছি এবং এরজন্য কাজ ও চলতেছে আমরা ফেনী থেকে ১৩ মেগাওয়ার্ট করে বিদ্যুৎ আনবো যার কাজ চলমান।

নোয়াখালী মেইল : গ্রাহকের মিটার, আপনারা ভাডা কেনো নেন? আপনি গ্রাহককে কি পিলার বসানোর কারনে জমির ভাড়া দেন?

ডিজিএম আরিফুল ইসলােম :  মিটার ভাড়া এটি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত, লোড় সংরক্ষণের জন্য গ্রাহক মিটার নেয়ার সময় একটা জামানত দেয় এরপর মিটার ভাড়া হিসেবে ১০টাকা হারে ভাড়া দেয়া লাগে তবে এটি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত।
আর ১৯১০ সালের যে বিদ্যুৎ আইন আছে, সে আইনে বলা আছে যে দিক দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন যাবে ওখান থেকে ১০ফিট সরকারি বলে গণ্য হবে তাই পিলার ভাড়া গ্রাহককে দেয়া যাচ্ছে না।

নোয়াখালী মেইল : সরাকরি একটা মিটার সংযোগ নিতে কত নেয়? গ্রাহককে কেনো ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ দিতে হচ্ছে?

ডিজিএম আরিফুল ইসলােম : সরকারি একটা মিটার সংযোগের জন্য ৪০০ টাকা এবং সদস্য ফ্রী ৫০ টাকা মোট ৪৫০ টাকা দেয়া লাগে। যদি এর বাহিরে কেউ টাকা দেয় তাহলে উপযুক্ত প্রমাণসহ অফিসে যোগাযোগ করা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নোয়াখালী মেইল : প্রাধানমন্ত্রী আমাদের উপজেলাকে শত ভাগ বিদ্যুৎতায়ন এলাকা ঘোষণা করেছে ২০২০ সালের জানুয়ারীর ১৫ তারিখে। আসলে কোম্পানীগঞ্জে কতভাগ বিদ্যুৎয়াতন হয়েছে?

ডিজিএম আরিফুল ইসলােম : শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন হয়েছে এটা বলা যাচ্ছে না, কারন এটি চলমান একটা প্রক্রিয়া, নতুন নতুন ঘর বাড়ি হচ্ছে নতুন নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে তাই এটি চলমান প্রক্রিয়া।

নোয়াখালী মেইল : একটু ঝড় বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুতের লাইন আগে থেকে নিরাপদ করেন না কেন? বিদ্যুৎ গেলে আসার সময় থাকে না, কখনো ২/৩ দিনও আসে না।

ডিজিএম আরিফুল ইসলােম : সমস্যা আসলে তারপর আমরা সমাধান করি, কোনো জায়গায় লাইন ঠিক করে দেয়ার পর পুনরায় দেখা যায় লাইন টা আবার ছিঁড়ে গেছে তখন বিদ্যুৎ বন্ধ করে পুনরায় তা ঠিক করতে হয়। আসলে এটি ন্যাচারাল সমস্যা আমাদের কোনো হাত নেই

নোয়াখালী মেইল : কোম্পানীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য আপনার কোনো ম্যাসেজ আছে কি না?

ডিজিএম আরিফুল ইসলােম : কোম্পানীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকের জন্য আমার যে বার্তা, তা হচ্ছে আসলে আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই আমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে আপনাদের ভোগান্তি দিচ্ছি না আমরা বিদ্যুৎ না পেলে আপনাদের দিবো কোথায় থেকে। তবে আমরা অতি দ্রুত ফেনী থেকে ১৩ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ আনতেছি আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

উল্লেখ্য যে, আমি ডিজিএমের টেবিলের সামনে আমি বসা এমন সময় পার্শ্ববর্তী এক এমপি ওনার এলাকার জন্য বিদ্যুৎ ট্রান্সফার করা নির্দেশ দিলে, ডিজিএমও তাৎক্ষনিক পার্শ্ববর্তী এমপির নির্দেশে ৬ মেঘাওয়ার্ট বিদ্যূৎ ট্রান্সফার করার নির্দেশ দেন।

ডিজিএম আরিফুল ইসলামের মতে ১৩ মেঘাওয়ার্ট বিদ্যুৎ কোম্পানীগঞ্জে লোডশেডিং থাকা শর্তেও পার্শ্ববর্তী এমপির নির্দেশে ওনার এলাকার জন্য আজ (৪ আগস্ট) মঙ্গলবার সকালবেলা ৬ মেঘাওয়ার্ট বিদ্যুৎ পার্শ্ববর্তী ওই এমপির জন্য ট্রান্সফার করা হয়। এর নিয়ম আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে ডিজিএম আরিফুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন ওপরের নির্দেশ আছে। (যার প্রমাণ হিসেবে  ডিজিএম আরিফুল ইসলামের কথা আমাদের প্রতিনিধির কাছে রেকর্ড করা রয়েছে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top