নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(NSTU)

NBPB.NM24.jpg

মিরাজ মৃত্তিক ।।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(NSTU) বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত, এটি জেলার একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। নোয়াখালী জেলার সোনাপুরে ১০১ একর জায়গা ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। এটি বাংলাদেশের ২৭ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৬ সালে।

১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের ১২টি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০০৩ সালের ২৫ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-২০০১ কার্যকর হয়। ২০০৩ সালের অক্টোবরে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। ২৩ জুন ২০০৬ ইং প্রথম একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি বিভাগ নিয়ে এর কার্যক্রম আরম্ভ করে। এগুলো হলো: কম্পিউটার বিজ্ঞান ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল, মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান, ফার্মেসী, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ টি বিভাগ চালু আছে।

নোবিপ্রবি ১০১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য আরো ৩০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা। যেখানে একটি মেরিন স্টেশন তৈরি করা হবে। গবেষণার জন্য একটি গ্রীন হাউজ রিসার্চ সেন্টার তৈরি করা হবে যেখানে ছোট এবং বড় পরিসরে গবেষণার কাজ চালানো হবে। বর্তমানে পরিকল্পনাগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। ২০১৫ সালে নোবিপ্রবিতে ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের নতুন লাইব্রেরি ভবন স্থাপন করা হয়। এর নির্মান খরচ প্রায় দুই কোটি বিশ লাখ টাকা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ৫ তলা ও ১০ তলা বিশিষ্ট দুইটি একাডেমিক ভবন রয়েছে। ৫ তলা বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম ভবন রয়েছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে অডিটোরিয়ামটির নাম রাখা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়াম। অডিটোরিয়ামটির আসন সংখ্যা প্রায় ১০০০।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আরেকটি একাডেমিক কাম ল্যাব ভবনের কাজ শুরু হয়েছে যার আয়তন ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বর্গফুট যা ২০২০ সালে উদ্বোধন হবে এবং তখন এটিই হবে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ একাডেমিক ভবন । বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি আবাসিক হল যথাক্রমে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হল, বিবি খাদিজা হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল যার মধ্যে একটি বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৃহত্তম ছাত্রী হল।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আবুল খায়ের। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬টি অনুষদ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। ডিগ্রি প্রদানকারী বিভাগের সংখ্যা ২৮ টি।

প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদঃ
☀️কম্পিউটার বিজ্ঞান ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ, ☀️তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ, ☀️তড়িৎ ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগ, ☀️ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ।

বিজ্ঞান অনুষদঃ
☀️মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগ, ☀️ফার্মেসী বিভাগ, ☀️অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, ☀️ফলিত গণিত বিভাগ, ☀️খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ,
☀️পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ☀️জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল বিভাগ, ☀️প্রাণরসায়ন বিভাগ, ☀️কৃষি বিভাগ, ☀️পরিসংখ্যান বিভাগ, ☀️সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, ☀️জীববিজ্ঞান বিভাগ।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদঃ
☀️বাংলা বিভাগ, ☀️সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ, ☀️সমাজ কল্যাণ বিভাগ, ☀️ইংরেজি বিভাগ, ☀️বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ
☀️অর্থনীতি বিভাগ, ☀️সমাজকর্ম বিভাগ।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদঃ
☀️ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ, ☀️ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ☀️ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ?শিক্ষা অনুষদঃ-
☀️শিক্ষা বিভাগ, ☀️শিক্ষা প্রসাশন বিভাগ,
আইন অনুষদঃ
☀️আইন বিভাগ,
ইনস্টিটিউট সমূহঃ
তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট
☀️সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগ।
তথ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট :
☀️তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
হল-সমূহঃ
☀️ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল, ☀️জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, ☀️বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিল হল
☀️হযরত বিবি খাদিজা হল, ☀️বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল,
সহশিক্ষা কার্যক্রমঃ
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ ক্লাব যেমনঃ ছায়া জাতিসংঘ, ডিবেটিং সোসাইটি, শব্দকুটির, ধ্রুপদ, এডভেঞ্চার ক্লাব, সমকাল সুহৃদ সংঘ, সাংবাদিক সমিতি ইত্যাদি।
গবেষণা এবং অবকাঠামোঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান এবং ভবিষ্যতে “শেখ হাসিনা সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র” স্থাপন করা হবে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে যার আয়তন হবে প্রায় ৫০০ একর। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে, যা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রুপ পাবে ২০৪১ সালে। ভবিষ্যতে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা, ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, উদ্ভিদ ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণাগার, জিমনেসিয়াম এবং ক্রীড়া বিজ্ঞান যুক্ত করা হবে। আগামী দশ বছরের ভেতরে একে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের আবাসন নির্মাণের একটি প্রকল্প বিবেচনাধীন। ২০৪১ সালের পূর্ণাঙ্গ রুপরেখা ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রকাশ করা হয় যেখান বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের এবং যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ দেখানো হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিঃ
অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনঃ
নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া ও অ্যারেনুরাস স্মিটি নামে দুটি অমেরুদন্ডী প্রাণী আবিষ্কার করেন। নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া নামটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নাম থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নেফটাইস বাংলাদেশি ও ভিক্টোরিয়োপিসা ব্রুনেইয়েনসিস আরো দুটি অমেরুদন্ডী প্রাণী তিনি আবিষ্কার করেন।
উল্লেখ্য- নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দুইবারের ভর্তি পরীক্ষায় আতিথেয়তা দেখিয়ে, সারাদেশসহ বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে নোয়াখালীবাসী।
-তথ্য সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top