লক্ষীপুরের চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

Kafiluddin-College.jpg

কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৪৮ বছর

কবির আহমদ ফারুক ।।

অনেক দেশ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের পূর্ণময় স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্রময় ও সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন লক্ষ্মীপুর সদরের চন্দ্রগঞ্জ থানার পূর্বাঞ্চলে সর্বাপেক্ষা ঐতিহ্য মন্ডিত বিদ্যাপীঠ কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। কোন সৃষ্টিশীল প্রতিষ্ঠান যখন জনসমষ্টির গর্বের বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, তখন তা ঐতিহ্যের মালা গেঁথেই ইতিহাস ধন্য হয়। ১৯৭২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী শনিবার বিকেল ৫ ঘটিকার সময় চন্দ্রগঞ্জ ডাকবাংলোতে (চন্দ্রগঞ্জ থানা) তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, সূধীবৃন্দ ও শতাধিক জনগণের উপস্থিতিতে স্থানীয় প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরহুম আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কফিল উদ্দিন আহমদ এর নামে কলেজটির নাম করণ করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে ওয়াপদা খালের কোলঘেঁষে সবুজ কোমল প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিপূর্ণতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭২ সালের ১ জুলাই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চল এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের সকল পেশাজীবী মানুষের সহযোগিতায় এখানকার বিশিষ্ট শিক্ষাণুরাগী ও সমাজ সেবক মরহুম কফিল উদ্দিন আহমদ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এককভাবে ৫ একর জমি ও গৃহ নির্মাণের জন্য নগদ দশ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। এছাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম মোঃ মোস্তফা খান এর একক আর্থিক অনুদান দিয়ে সকল আসবাবপত্র সরবরাহ করে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষাণুরাগী মরহুম আলহাজ্ব ইব্রাহিম মিয়ার (আজিজ কোম্পানী) একক আর্থিক সাহায্যে “ইব্রাহিম ছাত্রাবাস” প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর সুযোগ্য সন্তান সজীব কর্পোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী এম এ হাসেম এর পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ ইব্রাহিম ছাত্রাবাসটি পাকা দালানে উন্নীত করেছেন। প্রাক্তন মন্ত্রী মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নানের আর্থিক অনুদানে নির্মিত হয় মেজর (অবঃ) আবুদল মান্নান ডিগ্রী ছাত্রাবাস। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজ সেবক মরহুম মমিন উল্লাহ কোম্পানী ও তার সহোদর ভাই ছাদু মাষ্টারের একক আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠা হয় সুবিশাল মনোরম কলেজ মসজিদ। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মরহুম হারুনুর রশিদ বাসার এর আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হয় বাসার বিজ্ঞানাগার। বিশিষ্ট শিল্পপতি জামাল আহমদ এর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠত হয় অত্র কলেজের পাঠাগার। কলেজটি প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষাবোর্ড থেকে কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি আদায় সাবেক ও বর্তমান অধ্যক্ষ ও শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগসহ নতুন ক্লাশ আরম্ভ পর্যন্ত বিশিষ্ট শিক্ষাণুরগী এম আলাউদ্দিন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত সফলতার সাথে একক দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০১০ সালের ১ জুন তারিখ থেকে সাবেক এমপি ও কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির ডিও লেটারের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব এম আলাউদ্দিন কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি নিযুক্ত হন। অদ্যাবদি তিনি কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি হিসেবে বহাল আছেন। বর্তমান কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি আলহাজ্ব এম আলাউদ্দিন, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য (প্রতিষ্ঠাতার কণ্যা) লুৎফে আলেয়া।

এছাড়া গভর্ণিং বডির সাবেক সদস্যদের উল্লেখযোগ্য সদস্য চেয়ারম্যান মরহুম মোহাম্মদ বিসমিল্লাহ মিয়া এডভোকেট এম,সি,এ (৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য), ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম কফিল উদ্দিন আহমদ, সদস্য জনাব খালেদ মোহাম্মমদ আলী, এমএনএ,(৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য, মরহুম এম এ লতিফ, এম,এ (প্রধান শিক্ষক বেগমগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়), মরহুম আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমদ, বি,এবি,টি (প্রধান শিক্ষক প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়), মরহুম আলহাজ্ব ইব্রাহিম মিয়া (আজিজ কোম্পানী), মরহুম আবদুল মোহাইমেন, এম,সি,এ (৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য), বাবু ভূপতি রঞ্জন চৌধুরী (নান্টু বাবু), বি,এস,সি, মরহুম নুরুল হুদা মিয়া (ভবভদ্রী), আ,ও,ম সফি উল্যা, এম,এ মান্নান, মরহুম মমিন উল্যা (মমিন কোম্পানী), মরহুম ক্বারী করিম উল্যা, মরহুম আবদুর রব ভুট্টু, জয়নাল আবেদীন (সাবেক চেয়ারম্যান চরশাহী ইউনিয়ন), মরহুম দেনায়েত উল্যা মিয়া, মরহুম ডাঃ আবদুল কুদ্দুস এল,এম,এফ, মরহুম কাজী আজিজ উল্যা (আজু কাজী), আবদুর রব বি,এ,বি এড,(সাবেক চেয়ারম্যান উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন, প্রয়াত বাবু নবদ্বীপ চন্দ্র মজুমদার, প্রয়াত বাবু রাজকুমার দেবনাথ, মরহুম সিরাজুল হক কন্ট্রাকটর (কালাচাঁদ), মরহুম সৈয়দ আতাউর রহমান (দেলিয়াই)সহ ওই সময় কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও এই কলেজের সাবেক গভর্ণিং বডির দাতা সদস্য ছিলেন, এম এ হাসেম, শিক্ষাণুরাগী মরহুম ওসমান গণি, সাবেক হিতৈষী সদস্য মরহুম আবদুল মালেক, সাবেক প্রতিষ্ঠাতা প্রতিনিধি সদস্য ওবায়দল হক পাটওয়ারী প্রমূখ।

অপরদিকে ছাত্র ছাত্রীদরে সুপ্ত প্রতিভা ও সৃজনশীল মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে এগিয়ে এসেছেন বিশিষ্ট দানবীর মোহাম্মদ মাসুম। তার পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে এক চুক্তিপত্রের মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে হাজী মুসলিম স্মৃতি বৃত্তি ফাউন্ডেশন গঠন করেন। এক লক্ষ টাকা মূলধন জমা রেখে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করেন। এক লক্ষ টাকার লাভের অংশ দিয়ে অনন্তকাল পর্যন্ত চালু থাকবে হাজী মুসলিম স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষা। এদিকে কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে সাধ্য মোতাবেক নির্মাণ সামগ্রী ও শ্রম দিয়ে একান্তভাবে আন্তরিকতাপূর্ণ সহযোগীতা করেন তৎকালীন মরহুম এডভোকেট বিছমিল্লাহ মিয়া, প্রতিষ্ঠাকালীন অর্থ সম্পাদক মরহুম আলী আহমদ মিয়া (সাগর কোম্পানী), তৎকালীন মনোনীত ইউ.পি চেয়ারম্যান প্রয়াত ভূপতিরঞ্জন চৌধুরী নান্টু, তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম কাজী আজিজ উল্লাহ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ইউ.পি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মাষ্টারসহ অনেকেই।

এছাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মন্নান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ.ও.ম সফিক উল্যা, মরহুম আবদুর রব ভুট্টো, মরহুম দেনায়েত উল্যা মিয়াসহ অনেকেই। এছাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তৎকালীন ত্রান ও পূর্নবাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ তরিক উল্যাহ মিয়া সরকারিভাবে দুই হাজার মন গম বরাদ্দ করেন। তৎকালীন চীফ তথ্য অফিসার আফজাল হোসেনসহ অনেকে কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে সহায়তা করেন।

অবস্থান
লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার চন্দ্রগঞ্জ বাজারের কোলাহলময় পরিবেশ হতে সামান্য পশ্চিমে শেখপুর গ্রামের প্রায় ৫ একর ৬ শতাংশ বিস্তীর্ণ প্রান্তরে অবস্থিত এই বিশাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রশাসনিক ভবন, ইব্রাহীম ছাত্রাবাস ও মেজর (অবঃ) আবুদল মান্নান ডিগ্রী ছাত্রাবাসের কোণে অবস্থিত দীঘিটি কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

প্রাণোচ্ছল সরব কলকাকলীর মাঝে ছাত্র-ছাত্রী
কফিল উদ্দিন কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মাঝে কাটেনি এখনও আতংকের ভাব। অনেক জঘণ্য সন্ত্রাসের রক্তাক্ত ইতিহাস বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের শেখপুর সবুজ চত্বরে তাঁর ইট গাঁথা শরীর। পেছনের দিকে তাকালে এখানে দেখা যায়না সেই আগের বিভীষিকাময় দিনগুলো।

শিক্ষা কার্যক্রম
কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মানবিক বিভাগ চালু হয়, পরবর্তীতে বাণিজ্য বিভাগ এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। এদিকে কফিল উদ্দিন কলেজটিকে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে উন্নীত করার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১ জুলাই ডিগ্রী উন্নীত (স্নাতক) ক্লাস চালু করা হয়। পরে ১৯৮২ সনের ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিগ্রী ক্লাসের কার্যক্রম অনুমোদন দেয়া হয়। অনার্স কোর্স চালু করার পূর্বে ১২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর গত ১৪/১১/২০১৩ইং সনে তিনটি বিষয়ে (রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা) অনার্স কোর্সের অনুমোদন দেয়া হয়। এখানে ভর্তি পদ্ধতি সরকারি নিয়মেই প্রচলিত। ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ লুৎফুল করিম এর মৃত্যুর পর ১৩/০৯/২০০২ ইং পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ আবদুল হামিদ খান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৪/০৯/২০০২ ইং তারিখে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ খান বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১০/০৩/২০১১ ইং তারিখে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সরকার মোঃ জোবায়েদ আলী উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। সাবেক অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন আহমেদ খানের চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন সরকার মোঃ জোবায়েদ আলী। বর্তমানে এ কলেজের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম প্রশংসার দাবী রাখে। প্রতিবছরই এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কৃতিত্ত্বপূর্ণ ফলাফল লাভে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি ধাপে ধাপে বাড়ছে শিক্ষারমান। বিকশিত হচ্ছে সৃজনশীল মেধা, প্রতিভাবান হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ক্রমশ ভাবমূর্তি উজ্জল হচ্ছে কলেজ ও এলাকার। শ্রেষ্ঠ কলেজ ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে সনদপত্র পেয়ে প্রশংসিত হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সুশিক্ষা ও অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে পারলে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকেই গড়ে উঠবে আগামী দিনের দেশ গড়ার সু-শাসক। তাই অভিভাবকদের প্রত্যাশা আগামীতে জাতীয় নেতৃত্বের সংকট পূরণে সততা ও যোগ্যতার সাথে এগিয়ে আসতে পারবে এই কলেজেরই কৃতি ছাত্র-ছাত্রীরা। এই কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে শৈশব থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, নিজস্ব সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার বীজ বুনতে হবে। যাতে করে তাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা, দেশপ্রেম ও ভালবাসা গড়ে উঠে। এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ অত্যান্ত বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে রয়েছে শিক্ষকদের সুসম্পর্ক। ছাত্র-ছাত্রীদের সাহিত্য চর্চার জন্য রয়েছে সুপ্রশস্ত লাইব্রেরী। জাতীয়ভাবে পরিচালিত রোভার স্কাউট কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ইউনিটে সপ্তাহে একদিন পূর্ণাঙ্গ ক্লাশ এবং বছরে একবার শিক্ষা সফর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোভারদের পরিপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর (বি.এন.সি.সি) এর পক্ষ থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে এই কলেজের ছাত্রদের সপ্তাহে দুই দিন করে নিয়মিতভাবে দেয়া হচ্ছে সামরিক প্রশিক্ষণ। ‘ বি.এন.সি.সি’র পুরুষ এবং মহিলা ইউনিটের কার্যক্রম চালু রয়েছে।

শিক্ষার সোনালী ঐতিহ্য
কফিল উদ্দিন কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় গৌরবোজ্জল সাক্ষী রেখে আসছে। ১৯৯২ সালে অত্র কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ লুৎফুল করিম দায়িত্বে থাকাবস্থায় জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ ও ৯৭ সালে জেলা পর্যায়ে কলেজটি শ্রেষ্ঠ ডিগ্রী কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে খেলাধূলা প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় ও জাতীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে।

ছাত্র রাজনীতি
লক্ষ্মীপুর সদরের পূর্বাঞ্চল এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র এই কলেজ। স্বাধীনতার পর থেকে জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগে একক আধিপত্তত ছিলো। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ কললেজ ক্যাম্পাসে বড় সংগঠন ছিলো। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম ও গণঅভ্যুত্থান, এরপর কেয়ারটেকার সরকারের দাবীতে অসহযোগ আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থানসহ জাতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। স্বাধীন বাংলার বিভিন্ন সমস্যাবলীর বিরুদ্ধে এই কলেজের ছাত্রসমাজ ছিল সোচ্চার। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাসদ ছাত্রলীগ একক অবস্থান গড়ে তুলছিল। পরবর্তীকালে ৯০ দশকের দিকে আদর্শিক কারণে এবং ক্ষমতাসীন সরকারকে বিভিন্নভাবে সমর্থন করায় তাদের ইমেজ ও সাংগঠনিক শক্তি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ কলেজে জাসদ ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়ার মত কোন কর্মী নেই। এরপর ৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণের পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয় লাভসহ ক্যাম্পাসে একক শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে সকল ছাত্র সংগঠন ঐক্য গড়ে তুলে ছাত্র সংসদ ভবনের আসবাবপত্র ভাংচুর ও তছনছ করে। বন্ধ হয়ে যায় ছাত্র সংসদের গতিশীল কার্যক্রম। ‘৯৬ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা লাভের পর ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০০০ সনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির বিহীন আওয়ামী ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগ যৌথপ্যানেলে জয়লাভ করার পর এক বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করেছিল। অদ্যাবধি ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কলেজ শাখা কমিটি থাকলেও কোন ছাত্র সংগঠনেরই ক্যাম্পাসে সক্রিয় তৎপরতা নেই।

কলেজের সমস্যা সমূহ
কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেড়েছে ছাত্র-ছাত্রী বেড়েছে শিক্ষক কর্মচারী বাড়েনি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা, আধুনিক ছাত্রাবাস ও লেখাপড়ার আনুসঙ্গিক উপকরণাদি ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের আবাসিক সমস্যা, শিক্ষক স্বল্পতা, লাইব্রেরীতে পর্যাপ্ত বইয়ের অভাব ও বিনোদনের সমস্যায় প্রতিবাদ মুখর সচেতন শিক্ষার্থীরা। এর আলোকে কলেজের কিছু সমস্যা তুলে ধরছি
১) ভবিষ্যতে মাষ্টার্স শ্রেণি কার্যক্রম চালু করে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেয়ার দাবী জানাই।
২) নবনির্মিত আইসিটি ভবনের কার্যক্রম চালুকরা /অফিস ভবন/ বিজ্ঞান ভবন নির্মাণের দাবী।
৩) ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগার নির্মাণ।
৪) কলেজে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের দাবী।
উদ্ভুত সমস্যাগুলোর সমাধান হলে কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হবে এতদাঞ্চলের মানুষ গড়ার অন্যতম আঙ্গিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top