আলোচিত বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির
নগর প্রতিবেদক ।।
বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় বক্তব্য দেওয়ার ‘অপরাধে’ মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার আলোচিত বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির দেশে ফিরেছেন। ২২ আগস্ট শনিবার ভোরে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পৌঁছেন। এ সময় একমাত্র ছেলেকে কাছে পেয়ে মা-বাবা-বোন আবেগঘন আনন্দে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়েন। খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্ধু-বান্ধব-শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রতিবেশীরা তাঁকে একনজর দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় বন্দরের শাহি মসজিদ এলাকায় রায়হানদের বাড়িতে বিপুলসংখ্যক মিডিয়াকর্মীর উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।
রায়হানের বাবা গার্মেন্টকর্মী শাহ আলম ও মা রাশিদা বেগম রায়হানকে মুক্ত করার ব্যাপারে সহযোগিতা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মিডিয়াকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে অবহেলিত ও নির্যাতিত প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে রায়হান বলেন, ‘প্রবাসীরা আমাদের দেশের সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক অক্সিজেন ঠিক রাখার জন্য তাঁরা গাছ হিসেবে কাজ করেন। তাই তাঁদের জন্য একটু বেশিই করা উচিত।’
আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী—অনেকেই এসেছে তাঁকে একনজর দেখতে, এ যেন এক মিলনমেলা, এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। মা রাশিদা বেগম মিডিয়াকে বলেন, ‘আপনারা যদি না লিখতেন, তাহলে সরকারের চোখে ঘটনাটি পড়ত না।’ এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রায়হানের মা বলেন, ‘প্রবাসে আমার ছেলের মতো অনেক মায়ের ছেলে অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে, জেল খাটছে। সরকার যেন তাদের দিকে একটু নজর দেয়। মায়ের ছেলেকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।’
বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলে আসছি, আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। সে সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ভবিষ্যতেও সে এই পথেই থাকবে। আমি ওকে এমন শিক্ষাই দিয়েছি।’
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক—এই কামনা করে উদ্দীপ্ত এই তরুণ জানান, তিনি বিদেশে অবহেলিত, নির্যাতিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলেছেন। যা নিজ চোখে দেখেছেন, সেটাই টেলিভিশনে বলেছেন। মুক্তি পাওয়ার পরও বিমানবন্দরে কেন তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল—এমন প্রশ্নের উত্তরে রায়হান বলেন, ‘পুলিশ বলেছে, এটা নাকি তাদের দেশবাসীর ডিমান্ড।’
গত ৩ জুলাই আলজাজিরার ইংরেজি ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকড-আপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লকডাউন চলাকালে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি উঠে আসে। আলজাজিরার ওই প্রামাণ্য প্রতিবেদনে করোনা মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে বক্তব্য দেন সচেতন বাংলাদেশি রায়হান কবির। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে সমন জারি করে। ২৪ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত বুধবার রিমান্ড শেষ হলেও পুলিশ কোনো অভিযোগ আনেনি, তবে তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ অভিমুখী একটি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয় তাঁকে। গতকাল শনিবার ভোরে নিজ বাড়িতে ফেরেন রায়হান।
রায়হান কবির ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া যান। সেখানে গিয়ে বিবিএ পাস করেন এবং পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করতেন। তাঁর বাবা শাহ আলম ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন।