‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’ কোম্পানীগঞ্জে একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে

106590994_314065793088285_6766831172530420813_n.jpg

মকছুদের রহমান মানিক ।।

ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে আমেরিকা, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল, লন্ডন ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত কোম্পানীগঞ্জের সাবেক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বসহ প্রায় সহস্্রাধিক রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’ নামে মানবিক কোম্পানীগঞ্জ গড়ার প্রত্যয়ে নতুন একটি সামাজিক সংগঠনের যাত্রা শুরু করেছে।

কোম্পানীগঞ্জের একঝাঁক স্বপ্নবাজ মানবিক প্রবাসীর উদ্যোগে অতি সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’ একটি উন্নত ও সম্বৃদ্ধ কোম্পানীগঞ্জ গড়ায় সহায়ক হতে এগিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে এই স্বপ্নবাজ মানবিক প্রবাসীরা কার্যকরি কমিটি, ট্রাস্টি বোর্ড, উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করেছে। খুব সহসা ডোনার পরিষদও ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।

‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর ঘোষিত কমিটির সভাপতি ফখরু উদ্দিন মাহমুদ একজন সামাজিক ও মানবিক পরিবারের সন্তান। কোম্পানীগঞ্জের অতি পরিচিত মাকসুদা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মালেক চৌধুরী ও আবদুল খালেক চৌধুরী ভ্রাতৃদযের পরিবারের সন্তান। যে পরিবারটি কোম্পানীগঞ্জে নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে দুঃসাহস দেখিয়েছে। যখন কোম্পানীগঞ্জের জমিদারও নারী শিক্ষায় এগিয়ে আসেনি সে সময় এই ভ্রাতৃদয় নারী শিক্ষার জন্য বর্তমান বাজারের শত কোটি টাকার সম্পদ দান করে তাঁদের মায়ের নামে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন। এমনকি মুজিব কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও তাদের স্মরণীয় অবদান রয়েছে। যারা পারিবারিকভাবেই সমাজ ও মানুষের উন্নত জীবনের শুভাকাংখি। ৯০-এর দশকে ফখরু উদ্দিন আমেরিকা যান। বর্তমানে তার পরিবারের অর্ধশত জন আমেরিকাতে প্রতিষ্ঠিত প্রবাসী। যারা প্রতি বছরই দেশে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান পাঠান। ধর্মীয় অনুশাসনের জীবনে অভ্যস্থ ফখরু উদ্দিন মাহমুদ একজন সজ্জন পরোপকারী ও মানবিক মানুষ।

‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর সভাপতি ফখরু উদ্দিন মাহমুদ সম্পর্কে এত কথা বলার কারণ গাছ ভালো না হলে ফল ভালো হরে না। পিতা ভালো না হলে সন্তান ভালো হয় না। তাই আপনাদের গাছ ও গাছের শিকড় চিনিয়ে দিতে একটু চেষ্টা মাত্র। ফখরু উদ্দিন মাহমুদ ছাড়াও ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর কার্যকরি কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রধান ট্রাস্টিসহ আমি যাদের চিনি তারা সমাজে ও প্রবাসে সুপরিচিত এবং সামাজিক মানবিক মানুষ। ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর সকল কমিটিতে তাদের সিলেকশন চমৎকার। আমার প্রায় ৫৭ বছরের জীবনের ৪০ বছরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মনে হয়েছে কোম্পানীগঞ্জের সামাজিক মানবিক উন্নয়নে উদাহরণ দেয়ার মত অবদান রাখতে পারবে ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’।

ফখরু ছাড়াও সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি শওকত হায়াত বিপ্লব কোম্পানীগঞ্জের রাজনৈতিক পরিবার খান সাহেব আমিন উল্যাহ সাহেবের ছেলের ঘরের দৌহিত্র। বিপ্লবের পিতা এমদাদ মিয়াও আওয়ামীলীগে দুঃসময়ের সেক্রেটারী ছিলেন দীর্ঘ সময়। খান সাহেবের পরিবারই এখন কোম্পানীগঞ্জের নেতৃত্ব। ওবায়দুল কাদের, আবদুল কাদের মির্জা, শওকত হায়াত বিপ্লব এরা সবাই খান সাহেবের উত্তরসূরী ভাই-ভাই। সংগঠনের সেক্রেটারীকে আমি চিনি না। তবে যা শুনেছি সেও সাংগঠনিক তরুণ উদ্যমি সমাজকর্মী ইতালীতে থাকে। এছাড়া ট্রাটি বোর্ড প্রধান সাবেক ছাত্রনেতা আামেরিকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, স্থানীয় কমিউনিটির গ্রহনযোগ্য মানুষ মাইন উদ্দিন এবং উপদেষ্টা প্রধান সেলিম উল্যাহ বাবুলও আমাদের ছোট ভাই সাবেক ছাত্রনেতা ও মুজিব কলেজের সাবেক ভিপি এবং আমেরিকা কমিউনিটির পরিচিত মুখ।

আমরা এর আগেও রাজনৈতিক ব্যানারে কোম্পানীগঞ্জের একটি প্রবাসী সংগঠন দেখেছি। তারা সমাজ বা কোম্পানীগঞ্জ নয় রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় লোকদের নাম সর্বস্ব প্রচারিক উদ্দেশ্যে শোডাউন কাজ করেছে। ফলে আমি কলম ধরিনি তাদের জন্য। এবার হয়ত তারা আবারো ভিন্ন নামে আসবে ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিপক্ষ হতে।

আসলে প্রবাসী অধ্যূষিত কোম্পানীগঞ্জে স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় টানা সরকার দলীয় এমপির এলাকা। কোম্পানীগঞ্জে আসলে কোন অবহেলিত, দুঃস্থ, শোষিত, বঞ্চিত, ভূমিহীন, কর্মহীন, গৃহহীন এবং চিকিৎসা বঞ্চিত অসহায় মানুষ নেই বললেই চলে। অল্প কিছু আছে আসলে তারা অভাবের নয় স্বভাবের। আপনি একটু খোঁজ নিলেই দেখবেন কোম্পানীগঞ্জে বদলা পাওয়া যায় না। গৃহস্থলীর কাজের লোক খুজে পাওয়া যায় না।

‘কোম্পানীগঞ্জ-এর প্রতিটি ঘরেই প্রবাসী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী রয়েছে। খোঁজ নিলেই দেখা যাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, ইউরোপ, আমেরিকাসহ উত্তর আমেরিকা, লন্ডন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রায় লক্ষাধিক রেমিট্যান্স যোদ্ধা রয়েছে।

তার উপর ৭৫-এর পরবর্তী প্রতিটি সরকারে আমাদের প্রিয় নেতা যিনি নিজেই সরকারি দলের লোক বলে পরিচয় দিতেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ২১ বছরের ক্ষমতার (১৯৯৬-২০০০ সাল বাদে) সময়ে এবং ১৯৯৬ সাল থেকে (২০০১-২০০৬ বাদে) চলমান সময়ে সরকারের প্রবাভশালী মন্ত্রী ও দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী একজন নীতিবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কোম্পাানীগঞ্জবাসী এই দুই জনের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। এরপর আমাদের মেয়র মহোদয় আবদুল কাদের মির্জার মানবিক নজরে সুখে আছে কোম্পানীগঞ্জবাসী। তার উপর কোম্পানীগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও প্রবাসীরাতো আছেই। সবাই যে যার নিজস্ব পরিমন্ডলে সমাজ ও মানবিক উন্নয়নে কাজ করছে।

‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর আত্মপ্রকাশ নিয়ে সংগঠন বিষয়ে সভাপতি ফখরু উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আসলে সংগঠনের উদ্যোক্তা আমি না। তবে যারা সর্বসম্মত হয়ে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তাদের সম্মান রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। ফখরু বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের প্রবাসীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অত্যান্ত মানবিক। লোক দেখানো নাম সর্বস্ব বা নিজেদেরকে উপস্থাপনের জন্য নয়, অতি শীঘ্রই মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’ কাজ শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারিতে আগামী দিনে জাতির সামনে দূর্দিন ধাবমান। জাতির সেই দূর্দিনে আমরা প্রবাসীরা সহযোগিতার হাত বাড়ালে কোম্পানীগঞ্জে মানুষের ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করতে কিছুটা লাগব হতে পারবো বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের লক্ষ অনেক বড়। ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’ কোম্পানীগঞ্জে শুধু ছোট-খাটো দান অনুদান নয় এমন কিছু করে দিতে চায় যা কোম্পানীগঞ্জবাসী যেন আজীবন প্রবাসীদের মনে রাখে। ছোট-খাটো দান অনুদানতো আমরা ব্যাক্তিগতভাবেই করি। ইনশাল্লাহ ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’ কোম্পানীগঞ্জের মানুষের জন্য বড় কিছু করার কথা চিন্তা করছে। আমরা কি করতে পারি এসব বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সাথে ধারাবাহিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৯ আগস্ট রোববার আমরা বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ভাইয়ের সাথে কথা বলবো।

আমাদের একটি নিবেদন ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর নেতৃতের কাছে, আমাদের স্থানীয় এমপিরা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোম্পানীগঞ্জবাসীকে বড় কিছু দিতে পারেননি। আমি এটা তাদের ব্যর্থতা বলে মনে করি না। তাদের যারা পরিচালনা করেছেন এটা তাদের ব্যর্থতা। মওদুদ আহমেদ একনেকের সভাপতি ছিলেন তিনি ইচ্ছা কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণে সমুদ্রবন্দর, নোয়াখালীতে বিমান বন্দর করতে পারতেন। এখন ওবায়দুল কাদের ইচ্ছা করলে নোয়াখালীতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর, ক্যাডেট কলেজ এবং কোম্পানীগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ করে দিতে পারেন।

মওদুদ আহমেদ-এর আর সুযোগ হবে না। কিন্তু কাদের ভাই ইচ্ছা করলেই পারেন। তাহলে কাদের ভাই কোম্পানীগঞ্জ তথা নোয়াখালীবাসীর কাছে অমর হয়ে থাকবেন। যেমনি অমর হয়ে আছেন বসুরহাট হাই স্কুল করে চাটখিলের হালিম সাহেব, বসুরহাট মাদ্রাসা করে খান সাহেব, মাকসুদা স্কুল করে মালেক-খালেক ভ্রাতৃদয়, মুজিব কলেজ করে আবু নাছের চৌধুরী, জসীম উদ্দিন হাইস্কুল করে বজলুর রহমানসহ কোম্পানীগঞ্জের অনেক সামাজিক শিক্ষানুরাগি ব্যক্তিত্ব। আগামী প্রজন্মের কাছে অমর হয়ে থাকবেন কোম্পানীগঞ্জ মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠাতা শাহাবুদ্দিন ভ্রাতৃত্রয়।

কোম্পানীগঞ্জবাসীর প্রাণের চাওয়া ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’ ছোট-খাটো কিছু না করে সহস্রাধিক প্রবাসীর সহযোগিতা ও আমাদের মন্ত্রী-মেয়র মহোদয় ও কোম্পানীগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং কোম্পানীগঞ্জের সকল ডাক্তারদেরকে কাজে লাগিয়ে শতকোটি টাকা বাজেটে কোম্পানীগঞ্জে একটি বিশাল হাসপাতাল করেন। যেখানে প্রবাস জীবন শেষে প্রবাসীরা বা তাদের যোগ্য আত্মীয-স্বজনের কর্মসংস্থানও হবে। ইউরোপ আমেরিকার প্রবাসীরা হয়ত দেশে ফিরবেন না, কিন্তু মধ্যপ্রা”্যরে মানুষদেরতো দেশে ফিরতেই হবে। দেশে ফিরে তাদের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে নিজের যোগ্যতানুসারে কর্ম করতে পারবেন।

পৃথিবীর সেরা হাসপাতালটি কিন্তু লন্ডন আমেরিকা বা কানাডায় নয়-দক্ষিণ আফ্রিকাতে। আমরা প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য ভারতে যাই। ভারতের ভালো হাসপাতালগুলী বোম্বে বা দিল্লীতে নয়-বাঙলোর চেন্নাইতে। তেমনি বাংলাদেশের বড় হাসপাতাল হবে কোম্পানীগঞ্জে। সারা দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য কোম্পানীগঞ্জে আসবেন। এবার করোনা প্রমাণ হলো দেশে কোন চিকিৎসা নেই, ভালো হাসপাতালও নাই। ঢাকা চট্টগ্রামে নামের বড় হাসপাতাল আছে যেগুলো আসলে হাসপাতাল নয় তিনতারা আবাসিক হোটেল। ভালো থাকার সুব্যবস্থা আছে চিকিৎসা নাই।

পরিশেষে বলি জয় হোক ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’-এর। সুচিন্তায় এগিয়ে যাক ‘কোম্পানীগঞ্জ প্রবাসী ফাউন্ডেশন’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top