করোনা ভাইরাস (COVID-19) সংক্রমণ এড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অভ্যাস জরুরি

100898450_676634629550857_4202570287331409920_n.jpg

ডাঃ ফারিহা আলদিন চৌধুরী

  •   করোনা ভাইরাস (COVID-19) একটি জীবাণু। এটি একটি প্রোটিন কণা যার উপর ফ্যাট (Fat) এর একটি প্রলেপ থাকে। যখন ফ্যাট এর প্রলেপযুক্ত প্রোটিনকণা চোখ, নাক ও মুখের সংস্পর্শে আসে ও শরীরের কোষে ঢুকে পড়ে তখন আমাদের শরীরের জীনগত সংকেতের (Genetic Code) পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়।
  •  ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাস চীনের উহান প্রদেশে প্রথম শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে এটি সারা পৃথিবীতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
  •   বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর ৮০ শতাংশ বাড়িতে থেকে Treatment নিলে সুস্থ হয়ে যায়। মাত্র ২০ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। আবার এই ২০ শতাংশের ভিতর ৫ শতাংশের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (ICU) সুবিধা লাগতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমনের হার ক্রমাগত বাড়ছে। এই সময় আতংকিত না হয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরী।
  • করোনা ভাইরাস চোখ, নাক, মুখ ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরে ঢুকতে পারে। আমাদের শরীরের চামড়া ভেদ করে ঢুকতে পারে না। তাই বারবার সাবান /Handwash দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। করোনা ভাইরাসের আবরণে যে চর্বিস্তর থাকে সেটা সাবান কতৃক নষ্ট হয়ে যায় ফলে ভাইরাস ধ্বংস হয়। কারো হাতের ত্বক শুষ্ক হলে বা ত্বক ফাটার সমস্যা থাকলে Moisturising cream (ভেসেলিন) ব্যবহার করা ভালো,না হলে ফাটা জায়গায় virus আটকে থাকতে পারে।
  • Moisturising cream দিয়েও হাত জীবানুমুক্ত করা যায়।
  •  কোনো প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে ঘরে ঢুকে অন্য কাজ না করে প্রথমেই গোসল সারতে হবে এবং ব্যবহ্রত জামা-কাপড় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। বাইরের জুতা ঘরে আনা যাবে না। চশমা, মানিব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদি অ্যালকোহল মিশ্রিত দ্রবণ যেমন- Hexisol দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
  •  অনেক সময় দেখা যায়, বাড়িতে থেকেও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি প্রতিরোধে যখনই বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ বাসায় আনা হবে তা জীবাণুমুক্ত করে সংরক্ষণ করতে হবে। তরকারী, মাছ, মাংস ইত্যাদি কাটার আগে ও পরে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং যিনি এই কাজগুলো করবেন তাকে কাজ শেষে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
  •  ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে প্রতিদিন একবার করে ঘরের মেঝে পরিষ্কার করতে হবে।
  •  শুকনা, গরম ও আলোকিত স্থান ভাইরাস ধ্বংসে সাহায্য করে। তাই বাসায় পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। ঠান্ডা জায়গা Corona virus এর বিস্তারে সাহায্য করে। তাই বাসাবাড়ি ও গাড়িতে অ.ঈ.(এয়ারকুলার) ব্যবহার না করা ভালো।
  •  যদি কাউকে কর্মস্থলে যেতে হয় তাহলে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লভস্ পরা এবং সংগে Hand sanitizer রাখা জরুরি। বাইরের খাবার না খেয়ে বাসা থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া উচিৎ এবং প্রতিবার খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবান না থাকলে Hand sanitizer ব্যবহার করতে হবে। কর্মস্থলে / বাসায় ব্যবহৃত জিনিস যেমন- তালা, চাবি, দরজার ছিটকিনি, মোবাইল ফোন, Laptop, কম্পিউটার ডেস্ক, মাউস ইত্যাদি অ্যালকোহল মিশ্রিত দ্রবণ (Hexisol) দিয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
  • Corona Virus শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune system) কে দুর্বল করে দেয়। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত Vitamin-C যুক্ত খাবার (লেবু, টমেটো, কমলা ইত্যাদি) এবং প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। মন প্রফুল্ল রাখতে হবে। বিশেষ করে হালকা গরম পানি খাওয়া ও গরম পানি দিয়ে Gurgle করাকে অভ্যাসে পরিনত করতে হবে।
  • ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা জরুরী। হাত পায়ের নখ ছোট রাখতে হবে। কারণ, নখের নিচেও ভাইরাস লুকিয়ে থাকতে পারে।এভাবে নিয়ম- কানুন গুলো মেনে চলতে পারলে ইনশাল্লাহ্ করোনা ভাইরাস (COVID-19) এর সংক্রমণ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

লেখক : ডাঃ ফারিহা আলদিন চৌধুরী একজন নবীন চিকিৎসক। কোম্পানীগঞ্জের অধ্যাপক আলাউদ্দিন স্যারের মেয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top