নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল অব্যবস্থাপনায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা

116739522_3271368852951211_6477263807373829765_n.jpg

এ এইচ এম আয়াত উল্লাহ ।।

২৫০ শয্যা নোয়াখালী সরকারি জেনারেল হাসপাতাল পরিণত হয়েছে গো-চারণ ক্ষেত্রে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ। সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড আর হকারের দৌরাত্ম্য। কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি।

প্রতিবেদকের সাথে কথার সময়ে অবশ্য দ্রুত উন্নতির আশ্বাসও দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা স্বীকার করেছেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম।

তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে মূলত এ অবস্থা। পাশাপাশি দোষারোপ করেন গ্রাম থেকে আসা রোগীদের। তার দৃষ্টিতে রোগীরা যদি আরেকটু সচেতন হত তাহলে এত খারাপ অবস্থা থাকত না। তিনি বলেন, একাধিকবার গরু-ছাগলের মালিকরা থানায় মুসলেকাও দিয়ে বলেছে তাদের গরু আর ভেতরে ঢুকবে না। অথচ এত কিছুর পরও তারা একই কাজ করছে। এছাড়া সিএনজিসহ অন্যান্য স্ট্যান্ড যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও তোয়াক্কা করছে না কেউ। এ জন্য তিনি সকলের সচেতনতাসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালীর প্রায় ৩৭ লাখ মানুষের অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র হাসপাতালের মূল ফটকের বাহিরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। একই অবস্থা হাসপাতালের ভেতরের প্রত্যেকটি ভবনের জানালার নিচে। ভবন ঘেঁষেই পড়ে আছে ভাঙাচোরা বেড, এসি কাভারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের পরিত্যক্ত অংশ। এসব পণ্যের মধ্যে জমে আছে বৃষ্টির পানি। মশা-মাছির উপদ্রপে শঙ্কা রয়েছে এডিস মশা জন্মের। রোগীদের ও চিকিৎসা কাজে ব্যবহার করা জিনিসপত্র পড়ে আছে যত্রতত্র। এক কথায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিণত হয়েছে পুরো হাসপাতাল। এতে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

এসব দেখতে নিরাপত্তাকর্মী ও অর্ধশতাধিক পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তিরত এক শিশুর অভিভাবক জানান, তিনি তার শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ওয়ার্ডের টয়লেটগুলো এত বেশি ময়লা যে, টয়লেটে গেলে নিশ্চিত অসুস্থ হয়ে পড়বে যে কেউ। আয়া-বয়দের বিষয়টি বলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।

অপরদিকে হাসপাতালের মূল ফটক টপকিয়ে ভেতরে ঢুকলেই সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড। হাসপাতাল ভবন ও প্রাঙ্গণে বিচরণ করছে গরু-ছাগল। যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে গো-মূত্র। ভবনের বাহিরে ও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নানা রকম পণ্য বিক্রি করছে হকাররা। এতে রোগী ও দর্শনার্থীরা হাসপাতালে ঢুকতে বেগ পেতে হচ্ছে।

পুরুষ ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন বলেন, টয়লেটে ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিকের বোতল কেটে রাখা হয়েছে। যা ব্যবহার করা মুশকিল। তাই বাধ্য হয়ে তিনি বাহির থেকে বদনা কিনে এনেছেন। তার ভাষ্য মতে, ওয়ার্ডে দুর্গন্ধে থাকা যায় না। বয়স্ক রোগীরা কাশি দিতে দিতে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। একটি টয়লেটও ব্যবহার উপযোগী নয়। কতদিন যে পরিষ্কার করা হয় না তা না দেখে বোঝা যাবে না। হাসপাতাল এলাকা ও সংলগ্ন মাইজদী হাউজিং স্টেট এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পুরো হাসপাতালই অস্বাস্থ্যকর। ভবনগুলোর চারপাশে হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা, মাঠে ঘাস ও কচু গাছ। ড্রেনগুলোতেও ময়লা-আবর্জনায় ভরে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top