২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন : কক্সবাজারে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

Coxbazar-PMM-Pic.jpg

মহাসমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : পিআইডি

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

১৯৬৩.৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে দলীয় সমাবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কক্সবাজারে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ প্রদান করেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

সরকার ও দল জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র কাজ। ’ বিশাল জনসভায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাদের তিনি চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছেন না, তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যত দূরেই থাকেন আপনারা আমার হৃদয়ে, অন্তরে স্থান করে নিয়ে আছেন। প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ-সুবিধা পাবে, প্রতিটি গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তুলে প্রত্যেক মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়াটাই আমার লক্ষ্য। ’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উদ্যোগে গৃহহীনদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া প্রকল্পের উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতার এই বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না। তিনি সমাবেশে আসা ব্যক্তিদের নিজ নিজ এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ রয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখার আহ্বান জানান এবং নাম-ঠিকানা দিলে তাঁর সরকার তাদের পুনর্বাসন করবে, প্রত্যেকের জীবনমান উন্নত করবে বলেও তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের পরে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি আজ সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা ২০১৮ সালে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আমরা আপনাদের এই কক্সবাজারের উন্নয়ন করেছি, পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি, ধারাবাহিকভাবে সেই ২০০৯ সাল থেকে এই ২০২২ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলবৎ আছে বলেই আজ উন্নয়ন হচ্ছে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ’

‘আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন’, প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে জনগণ চিৎকার করে দুই হাত তুলে তাতে সম্মতি দেয়। তিনি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কবির ভাষায় বলেন, ‘রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নাই/আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই। ’

জামায়াত-বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস, খুন—এগুলোই পারে : জামায়াত-বিএনপি এ দেশের মানুষকে কী দিয়েছে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, হত্যা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাওয়া, চোরাকারবারি এগুলোই তারা পারে।

খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা মেরে দিয়ে আজ সাজাপ্রাপ্ত। তাঁর ১০ বছরের সাজা হয়েছে। আর তাঁর ছেলে তারেক রহমান দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড হয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি করে ধরা খেয়ে সেই অস্ত্র চোরাকারবারির জন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু তাই না, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তির জন্য করা সমাবেশে দিনে-দুপুরে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া গং গ্রেনেড হামলা চালালে সেখানে মহিলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী মারা যান। মানবঢাল রচনা করে নেতাকর্মীরা রক্ষা করায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

সরকারপ্রধান বলেন, এই বিএনপি, তারেক রহমান, খালেদা জিয়াদের আন্দোলন হচ্ছে মানুষ পুড়িয়ে মারার আন্দোলন। রেলে আগুন, বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন, লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা।

রোহিঙ্গারা যাতে ফিরে যেতে পারে ব্যবস্থা নিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। আমি কক্সবাজারবাসীকে ধন্যবাদ জানাই যে আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন। যাতে তাড়াতাড়ি তারা নিজের দেশে চলে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর ভাসানচরের আরেকটি জায়গা আমরা নির্মাণ করে তাদেরকেও সেখানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। কিছু কিছু দেশ তাদের নিজের দেশে নিতে চায়। তার সুযোগটাও আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। ’

জনসমুদ্রে রূপ নেয় মহাসমাবেশ : আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনতার উপস্থিতিতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ঢল নামে লাখ লাখ মানুষের। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের জনতার উপস্থিতিতে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সাধারণ জনতা ও দলের সমর্থকরা সকাল থেকে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলে এসে যোগ দেয়। এ সময় তাদের হাতে ছিল নানা রঙের বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন, পরনে ছিল রঙিন টি-শার্ট। সমাবেশ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন সড়ক ও গেট বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। নানা রঙের ফেস্টুন ও ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর ছবি শোভা পায়।

কক্সবাজারে উদ্বোধন করা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো বাকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইকে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও সুরক্ষা কাজ, ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প, লিংক রোড-লাবনী ক্রসিং রোডকে চার লেনে উন্নীতকরণ, বিমানবন্দর সড়ক আরসিসি তৈরি ও অন্যান্য কাজ, শহীদ সরণি আরসিসি তৈরি ও অন্যান্য কাজ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম রোড আরসিসি ও অন্যান্য কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top