মেট্রোরেলে যাত্রী চলার স্বপ্ন সফল হবে কবে

nm24-mtr.jpg

মেট্রোরেল। সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

যানজটের নগরীর বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার রাজধানীর উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা-উত্তর স্টেশন, উত্তরা সেন্টার হয়ে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীবিহীন পরীক্ষামূলকভাবে রেলের চারটি বগি চলাচল শুরু করে। পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেলের প্রথম অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত টেস্টের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

সার্বিক প্রস্তুতি শেষে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের অন্যতম ব্যয়বহুল এই মেট্রোরেল প্রকল্প চালুর আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর যানজট অনেকাংশে কমে আসবে বলেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

একইভাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল কমালাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের অপর অংশে উড়ালপথ নির্মাণ কাজ শেষে পরিক্ষা শুরু হবে। প্রথমে পারফর্মেন্স টেস্ট শেষে ‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট’ শেষে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল উদ্বোধনকালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে, এরপর কর্ণফুলী সেতুর উদ্বোধন হবে। এবং বছর শেষে ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প মেট্রোরেল তিনি নিজেই উদ্বোধন করবেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেলের যাত্রী ভাড়াসহ বিভিন্ন বিষয় এখনও নির্ধারণ হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চালুর আগে এসব বিষয় নির্ধারিত হতে পারে।

ডিএমটিসিএল’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ২০ কিলোমিটার উড়াল সড়কের প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার নির্মিত হয়েছে। ৩১ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের ৮৮ দশমিক ১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই অংশে ১১ দশমিক ৭৩ কিমি রেল লাইন বসানো হয়েছে।

এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের ৬৬ দশমিক ৭২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যাল অংশের ৬০ দশমিক ৬৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎ চালিত রেল হচ্ছে এই মেট্রোরেল। ইতিমধ্যেই উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোতে চার সেটের মোট ২৪টি কোচ পৌঁছেছে। গত মে মাসের মাঝামাঝিতে মেট্রো রেললাইনে প্রথমবার জাপান থেকে আনা রেল ইঞ্জিন চালিয়ে দেখা হয়। তবে রোববারই উড়াল রেল সড়কে মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেল চলাচলের সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে ১৯টি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। এসব ধাপে রেলের সার্বিক বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হয়। বিশেষ করে পরীক্ষায় সব স্টেশনে ঠিকঠাক থামা, বৈদ্যুতিক সংকেত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়গুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলার ক্ষমতা থাকলেও পারফর্মেন্স টেস্টের অংশ হিসাবে পাঁচ কিলোমিটার গতিতে রেলটি চলাচল করছে। এরপর ক্রমান্বয়ে রেলের গতি বাড়িয়ে ২৫ কিলোমিটার গতিতে চালিয়ে দেখা হবে।

সূত্র জানায়, পারফরম্যান্স টেস্টের পর হবে মূল পরীক্ষামূলক চলাচল, যা ‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট’ হিসেবে পরিচিত। এ সময় ১৭-১৮টি ব্যবস্থা একসঙ্গে ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা দেখা হবে। পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য স্টেশনসহ সব স্থাপনা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে হবে। ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত করা হবে। এ পরীক্ষা ছয় মাস বা এর চেয়েও বেশি সময় ধরে হতে পারে। এরপরই যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল।

বর্তমানে এটি চালিয়ে দেখছেন জাপানি চালকরা। একইসঙ্গে বাংলাদেশি চালকদের প্রশিক্ষণের কার্যক্রমও চালানো হবে। সবশেষ বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করলে বাংলাদেশি চালকরা দায়িত্ব নেবেন। মেট্রোরেল চালু হলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে ৬০ হাজার যাত্রী আনা নেয়া করতে সক্ষম হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে ঢাকা ও এর আশপাশে মেট্রোরেলের ৬টি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর প্রথমটি লাইন-৬। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে যুক্ত হওয়ায় সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়।

মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের কার্যক্রম উদ্বোধনের আগে আলোচনা পর্বে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব ও দৃশ্যমান। আজকের দিনটি আমার জন্য আনন্দের। আমি জাপান সরকার ও জাইকার কাছে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই যে, এর মধ্যেও তারা কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আজকে খুবই ভালো লাগছে। শেখ হাসিনার অবদান, মেট্রোরেল দৃশ্যমান।

মেট্রোরেল কাজের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, যানজট নিরসন, পরিবেশ উন্নয়ন, দূষণ রোধসহ নানান কারণে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৮২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার (কিমি) দীর্ঘ মেট্রোরেলের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে ঢাকাজুড়ে। ২০৩০ সালের এর পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে সম্পূর্ণ ভায়াডাক্ট স্থাপনের কাজ শেষ হয়। এগুলোর ওপর ২০ দশমিক ১ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭ দশমিক শুন্য দুই শতাংশ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়েছে। ১৬টি স্টেশনের মধ্যে ৯টি স্টেশন, পাঁচটি কন্ট্রোল স্টেশন এবং পাঁচটি প্লাটফর্মের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাণিজ্যিক চলাচলের আগে ছয় মাস পরীক্ষামূলক চলাচল করা হবে অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন মাস থেকে বাণিজ্যিক চলাচলের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top