‘পদ্মা সেতু নির্মাণে সাহসী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে’ : প্রধানমন্ত্রী

PM-H.jpg

পদ্মা সেতু , ফাইল ছবি ।

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদর দপ্তরে সোমবার (৩০ মে) মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আয়োজিত আর্মি সিলেকশন বোর্ড ২০২২ এ বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে তার সরকারের পদক্ষেপ একটি সাহসী জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ‘এ ধরনের সাহসী সিদ্ধান্ত জাতির আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শক্তিকেও শক্তিশালী করেছে।’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে এবং গত এক দশকে অর্জিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক বোর্ড সভা না করে এবং দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে হঠাৎ করে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, যা পরবর্তীতে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। তিনি দেশের অবকাঠামো নির্মাণে সেনা সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দক্ষ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের দেয়া হয়েছে যাতে বাহিনী একটি আধুনিক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তিনি নির্বাচকদের মনে রাখতে বলেছেন যে নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রথম রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের কথা স্মরণ করেন যেখানে তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সৎ, সাহসী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ‘সুতরাং আপনাকে সর্বদা নিশ্চিত করতে হবে যে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে জাতির পিতার আদর্শ প্রতিফলিত হয় এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিকদের হাতে তুলে দিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, দৃঢ় নৈতিক সাহস ও নেতৃত্বের অন্যান্য গুণসম্পন্ন সৎ ও অনুগত কর্মকর্তারাই পদোন্নতির দাবিদার।

‘সুতরাং, যে অফিসাররা তাদের সেনাবাহিনীর কর্মজীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সফল হয়েছেন তাদের পদোন্নতি দেয়ার সময় বিবেচনা করতে হবে’, তিনি পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী শুধু দেশ রক্ষায় জড়িত নয়, এটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার। তিনি করোনা মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন ও অন্যান্যদের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, সবাই মিলে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি তার বক্তৃতায় পাকিস্তানি শাসনামলে সশস্ত্র বাহিনীতে বাঙালিদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে বলেন, একজন বাঙালি কর্নেল পাকিস্তানের সামরিক চাকরিতে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তবে এখন অনেক জেনারেল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন এবং এটা সম্ভব হয়েছে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কারণে।’ জলবায়ু অভিবাসী এবং অন্যান্য দরিদ্র গৃহহীন লোকদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার তাদের ঘর দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি তার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। কারণ সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে সমস্ত গৃহহীন মানুষকে বাড়ি দিচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী, সময়ের উপযোগী এবং সক্ষম বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম অপরিহার্য। এ কথা মাথায় রেখেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জনগণের শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্বাধীনতার পরপরই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নীতির আলোকে সেনাবাহিনীকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নকারী সর্বাধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে তার সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক আধুনিক ও যুগোপযোগী যুদ্ধ সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

‘সেনাবাহিনীর ক্রমাগত উন্নয়নের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন ফর্মেশনে তিনটি ব্রিগেড গঠন করেছে, ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং নয়টি সংস্থা পুনর্গঠিত হয়েছে’, বলেন তিনি । পদ্মা সেতুর মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে শেখ রাসেল সেনানিবাস নির্মাণ করা হয়েছে এবং মিঠামইন, রাজবাড়ী ও ত্রিশালে নতুন সেনানিবাস নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।  পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ও মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন। এসময়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে যা জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top