নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত নির্ভার-নিশ্চিত, তিন বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে দলটি

ppar.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

দেশের রাজনৈতিক আড্ডাগুলো ষখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে? সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নাকি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বানচাল করতে পারবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। এরকম নানা প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। বিশেষ করে ২৯ জুলাইয়ের বিরোধীদের হটকারী কর্মসুচিতে। এই দিন বিএনপি ও তাদের সমমনা কিছু দলের উত্তপ্ত কর্মসূচির পর এই প্রশ্নগুলো আবার নতুন করে সামনে এসেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে একেবারে নির্ভার-নিশ্চিত।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে, বিএনপি যতই আন্দোলন করুক শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বাধা দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে দলটি।

এগুলো হলো : বিএনপিসহ সংসদে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটি সীমিতমন্ত্রিসভা :

প্রথমত সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন এবং সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে দেশ-বিদেশের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়া।  আওয়ামী লীগের প্রথম পরিকল্পনা আছে যে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেন বিএনপি শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করে সেজন্য আওয়ামী লীগ একগুচ্ছ ছাড় দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীকে বহাল রেখে বিএনপিসহ সংসদে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটি সীমিতমন্ত্রিসভা, নিরপেক্ষ উপদেষ্টামন্ডলী নিয়োগ দান ইত্যাদি নানা প্রস্তাবনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ছাড় দিতে পারে যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, এটি আওয়ামী লীগের শেষ বিকল্প।

বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসা:

দ্বিতীয়ত বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচন নিয়ে আসা। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে রয়েছে বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। বিএনপির বিভিন্ন মহলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যোগাযোগ হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহলও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অভিপ্রায় থেকে বিএনপিকে নির্বাচনমুখি করতে পারেন এমন গুঞ্জনও বাজারে রয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির একটি খন্ডিত অংশকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে আনতে পারে এমন কানাঘুষা রাজনীতির মাঠে আছে। আওয়ামী লীগ অনেক নেতাই এ ব্যাপারে আশাবাদী। আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন যে, বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় ইতিমধ্যে জনসংযোগ শুরু করেছেন। কাজেই এই সমস্ত প্রার্থীদেরকে একত্রিত করে নির্বাচনে দাঁড় করানো কোনো কঠিন কাজ হবে না বলেই আওয়ামী লীগের ধারণা। এটি আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় পছন্দের পরিকল্পনা।

বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন আয়োজন করা:

তৃতীয়ত : বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন অংশগ্রহণ করা: আওয়ামী লীগের তৃতীয় এবং শেষ বিকল্প হল বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন আয়োজন করা এবং এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, ১৪ দল ভুক্ত গুলো, বিভিন্ন ইসলামী দল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংসদ নির্বাচনে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপি এবং তার মিত্ররা ছাড়া যদি অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে তাহলে নির্বাচন উত্তেজনাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক হবে। আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনকে যেকোনো প্রকারে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করবে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

এরকম একটি নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কারণ আন্তর্জাতিক মহল থেকে বলা হয়েছে যে, কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল না করল সেটি তাদের বিষয় না। তারা বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু দেখতে চায়। জনগণের অংশগ্রহণ যেন তাতে থাকে এবং জনমতের প্রতিফলন যেন সঠিক ভাবে ঘটে সেটি তাদের প্রধান চাওয়া। আর সেরকম চাওয়া থেকে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে বাদ দিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজনের পরিকল্পনা রেখেছে তৃতীয় বিকল্প হিসেবে।

তবে কোন বিকল্পে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এগোবে সেটি নির্ভর করবে সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, সামনের দিন কয়েকটা দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয় তার ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ কোন কৌশল অবলম্বন করবে।

সব কথায় শেষ কথা, এবার আওয়ামী লীগ চায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহন মুলক নির্বাচন। বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে নিজের ও সরকারের গ্রহনযোগ্যতা শতভাগ নিশ্চিত করা। দেশ ও বিদেশ এখন মনে করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ৪র্থ মেয়াদেও শেখ হাসিনার প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অর্থনৈতিক জরিপ সেই রকম আভাসই দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top