ফেনী ও নোয়াখালী প্রতিনিধি ।।
বৃহত্তর নোয়াখালীর নোয়াখালী ও ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। টানা বর্ষনে শহর/গ্রাম অঞ্চলে দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। রাস্তা-ঘাট, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি পানির নিচে চলে গেছে।
এদিকে নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে চলেছে, যা নতুন করে বন্যার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ছোট ফেনীর দুই পাড়ের চর দরবেশ, দক্ষিণ মুছাপুর, চর হাজারী, চর পার্বতী, চর এলাহী, সূবর্ণচরে ও হাতিয়ার চরাঞ্চলে তীব্র স্রোত ও পানি বৃদ্ধিতে চাষাবাদ এবং বসতি হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক জায়গায় বসতঘর ও কাঁচা রাস্তাঘাট ধসে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ফেনীতে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ৮ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে ফেনী আবহাওয়া অফিস। যা মৌসুমের সর্বাধিক বৃষ্টি।
এদিকে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মুহুরী নদীর বাঁধে চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৩ দিনের টানা বর্ষণে নোয়াখালীর সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টির কারণে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, ডাক্তারপাড়া, মিজান রোড, কলেজ রোড, একাডেমি রোড, রামপুর শাহীন একাডেমি এলাকা, পাঠানবাড়ি এলাকা, নাজির রোড, পেট্রোবাংলাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে।
টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সড়কে রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন কম থাকায় পয়ে হেঁটে লোকজনকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা আতঙ্কিত। কেউ কেউ ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রশাসন সতর্কতা জারি করলেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও সুরক্ষা এখনও অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। জলাবদ্ধ শহর, নদীভাঙন আর দুর্ভোগ পোহানো মানুষের দৃশ্যগুলো যেন ভয়াল এক বার্তা বহন করছে, প্রকৃতি এখন রুদ্ররূপে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, ফেনীতে সোমবার থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চলছে। এটি এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, কোথাও কারো আশ্রয় কিংবা সহায়তা প্রয়োজন হলে আমাকে কল দিবেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, মঙ্গলবার বিকেলে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলোনিয়া নদীর পানিও পরশুরামে বিপৎসীমায় পৌঁছে গেছে। মুহুরী নদীর চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।