১ দফা থেকে বিএনপির ৩১ দফা ! কী আছে ৩১ দফা রূপরেখায়

BNP.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা যৌথ রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি।  ১২ জুলাই সমাবেস করে ১ দফা দেয়ার ১২ ঘন্টা পরে রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩১ দফার ঘোষণা দেন। এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সরকার পতনে ১০ দফা দিয়ে পরদিনই আবার রাষ্ট্র মেরামতে ২৭ দফা দিয়েছিলো।

তিনি বলেন, দেশের জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই ৩১ দফা যৌথ রূপরেখা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ চেয়ে ‘এক দফা, এক দাবি’ ঘোষণার এক দিন পর বিএনপি এই রূপরেখা তুলে ধরল।

৩১ দফা রূপরেখাকে দলীয় ‘প্রতিশ্রুতি’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রূপরেখা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত উপযোগী প্রস্তাব।
এক দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে হীন উদ্দেশ্যে মৌলিক সাংবিধানিক ক্ষেত্রে অনেক অযৌক্তিক সংশোধনী এনেছে। একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তন পর্যালোচনা করে রহিত বা সংশোধন করা হবে। অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কারও করা হবে।

সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে।

তিনি বলেন, এ রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ ছাড়া ঘোষিত রূপরেখায় প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হবে, পর পর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ইভিএম নয়, সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হবে।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা, রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে। ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসনের সংস্কার ও পুনর্গঠন, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হবে। ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করা হবে। এ ছাড়া ঘোষিত রূপরেখায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top