মিয়া মাকসুদ ।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অবস্থান করছেন। সেখানে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তিনি। সেখানে কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ যদিও ব্রিকস-এর সদস্য নয়, কিন্তু তারপরও এই সম্মেলনের মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব, চীনের প্রেসিডেন্টসহ অংশগ্রহণকারী প্রায় সকল দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাকে ঘিরেই বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা তৈরি হয়েছে।
শেখ হাসিনা এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি এখন বিশ্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সেটি ব্রিকস-এ আরেকবার নতুন করে দেখা গেল। শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সবাই উদগ্রীব, আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান, সেমিনার এবং সাইড ইভেন্টগুলোতে শেখ হাসিনাই ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
তিনি যে বাংলাদেশকে অভূতপূর্ব উন্নয়নের অভিযাত্রায় নিয়ে গেছেন, এটির ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার প্রশংসা করেছেন, তার উন্নয়নের ম্যাজিক জানতে চেয়েছেন। তাছাড়া, বাংলাদেশের পাশে সব সময় থাকবেন এমন অঙ্গীকারও করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কিছু দিন ধরেই বিশ্বের যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই তাকে ঘিরে রীতিমতো মাতমাতি শুরু হচ্ছে। এবার ব্রিকস-এও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটি সদস্য রাষ্ট্র না হওয়ার পরেও তাকে ঘিরে এই বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আগ্রহ প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ আজ কোন উচ্চতায় চলে গেছে।
বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের মূল যে শেখ হাসিনা- এটা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে এখন আর অজানা নয়। এজন্যই তাকে ঘিরে এখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নানা রকম আগ্রহ। আর এই সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে ঘিরে উৎসাহ, উদ্দীপনার কারণ হলো দু’টি।
প্রথমত, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য অস্বস্থি লক্ষণীয়। ব্রিকস একটি অর্থনৈতিক জোট হলেও রাশিয়া, চীনের উপস্থিতির কারণে এই জোটের একটি মার্কিন বিরোধী আবহ রয়েছে।
এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে সমস্ত সাহসী বক্তব্য উচ্চারণ করেছেন, তা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে, বিশেষ করে ব্রিকস-এ অংশগ্রহণকারীদেরকে আকৃষ্ট করেছে। তারা এজন্যই তার সাহস এবং কূটনৈতিক বিচক্ষণতার জন্য তার প্রতি বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
দ্বিতীয়ত, ব্রিকস যেহেতু একটি অর্থনৈতিক জোট এবং বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নের অভিযাত্রায় দ্রুত ধাবমান একটি রাষ্ট্র, সে কারণেই ব্রিকস-এর নেতারা বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে চায় এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযাত্রীও হতে চায়। এটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটি বড় আগ্রহের কারণ।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে শেখ হাসিনা যে এখন একজন বিশ্ব নেতা, ব্রিকস- এর সম্মেলনে তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। সব নেতাদেরকে ছাপিয়ে তিনি উদ্ভাসিত হলেন ব্রিকস-এ।
ব্রিকসে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব
ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় নারীদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।
মধ্যাহ্নভোজে ভাষণদান কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথে, আমাদের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসডিজি ৫ অর্জনের জন্য আমাদের সকলের হাতে হাত রেখে চলা উচিত।’
কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান খাদ্য, শক্তি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, তিনি আমাদের মেয়েদের স্কুলে রাখতে, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ও তাদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। অনেক মেয়েই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়।
শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রস্তাবে নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজ, মজুরি সমতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
একটি সক্রিয় ও টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নারীদের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরীর কথা উল্লেখ করে চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও টিকে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর গভীরভাবে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি লিঙ্গ সমতার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতিতে সত্যিই অনুপ্রাণিত বোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতি রামাপোসার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং নারী মাস উদযাপনের জন্য সমস্ত দক্ষিণ আফ্রিকানকে অভিনন্দন জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিয়োম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।