ধর্ষণ করলে শাস্তি ফাঁসি, মন্ত্রিসভার অনুমোদন : আজ থেকেই কার্যকর

fashi.png

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

সারাদেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র আন্দোলনের মধ্যে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার (১২ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি আইনটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। নিয়ম অনুযায়ী, অধ্যাদেশ জারির দিন থেকেই নতুন এ শাস্তি কার্যকর হবে।

গতকাল দুপুরে গুলশানে নিজ বাসায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় ধর্ষণের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান ছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধারাটি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদ-। ধারা ৯ (১)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ৯ (৪) ধারাতেও সংশোধন আনা হয়েছে। ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদ- করায় এই অপরাধ কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।

আনিসুল হক বলেন, কিছুদিন আগে হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ধারা সংশোধন করে সাধারণ জখমের জন্য আপসের বিধান রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ধারাটি সংশোধন করে আপসের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শিশু আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশোধনীগুলো ভেটিংসাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংসদ অধিবেশন চলমান না থাকায় এটি অধ্যাদেশ আকারে জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং আগামীকাল (আজ) রাষ্ট্রপতির আদেশে এটাকে অধ্যাদেশ হিসেবে জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে অনেক বিতর্ক আছে। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এই সাজা বাড়ানো উচিত বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে সংশোধনী আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি পুরনো ধর্ষণ মামলা আগে এবং নতুন মামলা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান। ধর্ষণের মামলা কতদিনের মধ্যে শেষ করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত আছে। তদন্ত বিচার পদ্ধতি সবকিছুই এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল এটি করবে এবং শেষ করতে হবে ১৮০ দিনের মধ্যে। বিচারক যদি কোনো কারণে বদলি হয়ে যান, সে ক্ষেত্রেও বিলম্ব হয় অনেক সময়। তবে কোনো বিচারক চলে গেলে পরে যিনি আসবেন, মামলা যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থা থেকে চালিয়ে যাবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত কিছুদিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’-এর খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করে। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনের ৯ (১) ধারায় ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই একমত পোষণ করেছেন।

সচিব আরও বলেন, এ সংশোধনী শুধু আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, বিভিন্ন দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও আমরা দেখেছি। আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিসহ সবকিছু মিলিয়েই এ সিদ্ধান্ত এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এটি আলোচনায় এসেছে। মানুষের সচেতনতাই গুরুত্বপূর্ণ। এই সংশোধনীর ফলে মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে ব্যাপক ক্যাম্পেইন হচ্ছে। এর ফলে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের মধ্যে। যারা এই অপরাধটি করবে তারা চিন্তা করবে এতে তো মৃত্যুদণ্ডের আদেশ রয়েছে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ধর্ষণ-গণধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় মানুষ ক্ষুব্ধ। প্রতিদিনই রাস্তায় বিক্ষোভ-সমাবেশ হচ্ছে। অনেকেই ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার দাবি জানাচ্ছেন। সরকারও এ দাবি মানার সায় দিয়েছিল।

মন্ত্রিসভায় আইনের সংশোধন অনুমোদনের পর মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তিনি বলেন, আইন সংশোধন হলেও সমাজের সবার সহযোগিতায় দেশ থেকে ধর্ষণ প্রতিহত করতে হবে। সবাই সবার অবস্থান থেকে সোচ্চার হলে, সচেতন হলে ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধ হবেই।

তিনি আরও বলেন, আজকের এই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এ সময় আইনমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। এ ছাড়া যারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে রাজপথে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে জোরালো বক্তব্য ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের মাধ্যমে আমাদের এ দেশ ধর্ষণমুক্ত হবে। আমি চাই না কোনো নারী বা শিশু ধর্ষিত হোক। সমাজ থেকে ধর্ষণ নির্মূল করতে পরিবার, সমাজ, মিডিয়া ও কমিউনিটির দায়িত্ব রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top