কোম্পানীগঞ্জে স্পেশাল ইকোনমিক জোন চূড়ান্ত, ধন্যবাদ ওবায়দুল কাদের এমপিকে

115818821_2818595178411923_457510295549793139_n.jpg

মকছুদের রহমান মানিক ।।

অবশেষে দেশের ভিভিআইপি উপজেলাখ্যাত  কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষের একটি স্বপ্ন উকি দিতে শুরু করলে। বিগত ৩৫ বছর বাংলাদেশ সরকারের ২য় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন এবং আছেন কোম্পানীগঞ্জের জনপ্রতিরা। নেতার ব্যস্ততা এবং পরামর্শদাতাদের অঞ্চল প্রেমের অভাবে কোম্পানীগঞ্জ হারিয়েছে অনেক সূবর্ণ সুযোগ। কোম্পানীগঞ্জের অনেক সম্ভবনা থাকা শর্তেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেননি এখানকার জনপ্রতিনিধিরা।

কোম্পানীগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা সজাগ হলে দেশের গভীর সমুদ্র বন্দর হতে পারতো কোম্পানীগঞ্জ তথা নোয়াখালীতে। চট্টগ্রাম বন্দর  গভীরতার দিক থেকে অকেজো আরো বিশ বছর পূর্ব থেকে। আমাদের তৎকালীন নেতারা চাইলে আরো বিশ বছর আগে নোয়াখালীর দক্ষিণ অঞ্চলে গভীর সমুদ্র বন্দর হতে পারতো। বরং তৎকালীন নেতারা এ দাবিকে ব্যঙ্গ করেছেন। নোয়াখালী উপকূল উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম লায়ন শেখ মহিউদ্দিন বৃহত্তর নোয়াখালীর সব এমপিকে এক মঞ্চে এনে সমুদ্র বন্দর করার দাবির পক্ষে বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেসময়ের সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব বাকা হাসি দিয়ে বলেছেন আমি দেশের মন্ত্রী কোম্পানীগঞ্জের নয়। ফলে কোম্পানীগঞ্জের মানুষ সে নেতাকে নির্বাচনের জামানত নিয়ে ঘরে ফিরতে দেয়নি।

আজও কোম্পানীগঞ্জের জনপ্রতিনিধি দেশ ও সরকারের ২য় সর্বোচ্চ  নেতৃত্ব। তিনি কোম্পানীগঞ্জে বেড়ে উঠেছেন। দেশ মাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে কোম্পানীগঞ্জের মাটিকে নিরাপদ করতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোম্পানীগঞ্জবাসী আশা করে ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরে কোম্পানীগঞ্জ তথা নোয়াখালী এগিয়ে যাবে হাজার বছর।

আমরা একনেকের সভাপতি পেয়েছি, কিন্তু কোম্পানীগঞ্জের মানুষের ভাগের চাকা ঘুরাতে পারে এমন কোন উন্নয়ন পায়নি। তবে কিছু চামচার ভাগ্য হয়ত পাল্টেছে। দেশের প্রাচীনতম সর্বাধিক আলোচিত জেলা নোয়াখালীতে এয়ারপোর্ট নেই, নেই সমুদ্র বন্দর, নেই কোন ইপিজেড, নেই বড় কোন শিল্প কারখানা, নেই বিশ্ববিদ্যলয়, নেই কোন কোন কার্যকর চিকিৎসা কেন্দ্র বা হাসপাতাল, নেই পূর্ণাঙ্গ কারিগরি  কলেজ, নেই ক্যাডেট কলেজ, উপকূলীয় এলাকা হিসেবে নেই নৌবাহিনীর কোন ঘাটি। জলদস্যু ও ভূমির দস্যুর হাত থেকে নোয়াখালীর মানুষকে নিরাপদ জীবন দানে প্রয়োজন নৌ-বিমান-আর্মি  ও পুলিশ নিয়ে যৌথ বাহিনী দিয়ে উপকূলীয় নিরাপত্তা বিগ্রেড গঠন করা। কিছুই নেই আমাদের নোয়াখালীতে।

এক কথায় বলতে গেলে নোয়াখালীতে মরহুম আবদুল মালেক উকিলের পর আর কেউই নোয়াখালীকে অন্তরদিয়ে ভালোবেসেছেন আমার মনে হয়নি। তবে দিন কয়েক ক্ষমতা পেয়ে নোয়াখালীর দিকে নজর নিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধন মঈন ইউ আহমেদ। আগামী ২০ বছর পর যার সুফল ভোগ করবে নোয়াখালীবাসী।

প্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাঙালি জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের নেতৃত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রিয় আস্তাভাজন একজন। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মন খুলে চাইলেই আপনি পাবেন। দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির সিংহভাগ মানুষের এলাকা নোয়াখালীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই গুরুত্ব দিবেন।

আপনি না পারলে নোয়াখালী অন্ধকারেই থেকে যাবে। আপনার আগে যার পারার কথা ছিলো তিনি করেননি। আপনার পরে আর শত বছরেও সরকারে নোয়াখালীর এমন গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না। আপনি যদি নোয়াখালীতে এয়ারপোর্ট, সমুদ্র বন্দর, ইপিজেড, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যলয়, কার্যকর চিকিৎসা কেন্দ্র বা হাসপাতাল, পূর্ণাঙ্গ কারিগরি  কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, উপকূলীয় এলাকা হিসেবে নেই নৌবাহিনীর কোন ঘাটি। জলদস্যু ও ভূমির দস্যুর হাত থেকে নোয়াখালীর মানুষকে নিরাপদ জীবন দািতে প্রয়োজনীয় নৌ-বিমান-আর্মি  ও পুলিশ নিয়ে যৌথ বাহিনী দিয়ে উপকূলীয় নিরাপত্তা বিগ্রেড গঠন করে যেতে পারেন। তবেই আপনি হাজার বছর অমর হয়ে থাকবেন নোয়াখালীবাসীর কাছে। আগামী প্রজন্ম আপনাকে মনে রাখবে।

একবার ভাবুন প্রবাসী অধ্যষিত এলাকা নোয়াখালীতে বিমান বন্দর হলে, নোয়াখালীবাসী যেমনি উপকৃত হতো, তেমনি সরকারও প্রচুর রাজস্ব পেতো। নোয়াখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর হলে এখানে শিল্পকারখানা গড়ে উঠত। এতে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। আবার আমাদের উৎপাদনকারীরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারতো। এখন শিল্প মালিকরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-গাজিপুর আবার ঢাকা-গাজিপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর গাড়িভাড়া দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলাতে না পের পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। তারউপর কর্ণফুলী নদী ইংরেজি ~ (এস) অক্ষরের মত হওয়ার প্রতি বছরই ভরাট হয়ে যায়। ফলে কর্ণফুলী নদীর নাব্যতার কারনে আমদানীকৃত পণ্য বড় জাহাজ থেকে সিংঙ্গাপুর আনলোড করে পরে ছোট জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে আনতে হয়। এতে একাধিক লোড- আনলোডে খরচ বেড়ে যায়। আথবা গভীর সমুদ্র থেকে আনলোড করতে হয়। কিন্তু নোয়াখালীতে সমুদ্র বন্দর হলে দেশের বেশিরভাগ শিল্পের মালিক নোয়াখালীর মানুষ তারা এলাকার অর্থমৈতিক জোনে বা ইপিজেডে কারখানা করলে উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে আসবে। অথবা আমদানি পণ্য গাজিপুরে আনলেও খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।

নোয়াখালীকে বিভাগ জরুরি নয়। আপনি আমি না চাইলেও প্রশাসনিক প্রয়োজনে নোয়াখালী বিভাগ হবেই। কিন্তু নোয়াখালীর প্রভাবশালী নেতৃত্ব না থাকলে উপরের দাবিগুলো  আরো শত বছরেও হবে না।

অতি সম্প্রতি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জসহ দেশে আরও ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান অনুমোদন পেল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বোর্ডের সপ্তম সভায়। গত ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল এই অনুমোদন হয়। এই ঘোষণার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বেজা সূত্রে জানা যায়, ঢাকার নবাবগঞ্জে নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে টাঙ্গাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল, নওগাঁয় সাপাহার অর্থনৈতিক অঞ্চল, দিনাজপুর সদরে দিনাজপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে নোয়াখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সন্দ্বীপ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সুনামগঞ্জের ছাতকে সুনামগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাবনার বেড়ায় পাবনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, বরিশালের হিজলায় চরমেঘা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মানিকগঞ্জের শিবালয়ে মানিকগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এর মধ্যে ৯৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন পেয়েছে। যদিও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সরকারি–বেসরকারি ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল।

বেজা আরও জানায়, সভায় আরও পাঁচটি সিদ্ধান্ত হয়। যার মধ্যে রয়েছে মহেশখালী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে ‘সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক’ নামকরণের অনুমোদন। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কিশোরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলী ড্রাইডক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইস্টওয়েস্ট বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলকে জোন ঘোষণা ও তাদের দেওয়া লাইসেন্সের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন।

সভায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত সব শ্রেণির (এ/বি/সি) কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের প্রতিষ্ঠানের মতো একই হারে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া সভায় বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ স্থানান্তরের যে প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কর্মকৌশল ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরেরে সঙ্গে মেরিন ড্রাইভের সংযোগ স্থাপনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

বেজা জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী শিল্পের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেন। অনগ্রসর অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল তথা শিল্পনগর গড়ে তুলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top